রামুতে পাহাড় ধস

একসঙ্গে ৪ জনকে হারিয়ে নিঃস্ব রমজান আলী

fec-image

কক্সবাজারের রামুতে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন পরিবার। ৪ সদস্যের মৃত্যুর পর পরিবারটিতে এখন বেঁচে আছেন নিহত আজিজুর রহমানের দুই ছেলে রমজান আলী ও মনছুর আলম এবং তার দুই নাতি। এরমধ্যে বাবা আজিজুর রহমান, মা রহিমা খাতুন, নানী দিলফুরুজ বেগম ও স্ত্রী নাসিমা আকতারের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন রমজান আলী। মা হারানো দুই শিশু সন্তান বুকে নিয়ে রমজান আলী যেন পাথর। ৫ বছরের শিশু সন্তানটি এখনো বুঝতেই পারছে না তার মা বেঁচে নেই।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় কাউয়ারখোপ মুরাপাড়া এলাকায় স্থানীয় মসজিদ মাঠে আজিজুর রহমান ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুন এবং পুত্রবধূ নাসিমা আকতারের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বৈলতলী এলাকায় আজিজুর রহমানের শাশুড়ি দিলফুরুজ বেগমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের স্ব স্ব এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পাহাড় ধসে নিহত আজিজুর রহমানের ছোট ছেলে মনছুর আলম জানিয়েছেন, বুধবার তিনি এবং তার বাবা আজিজুর রহমান কক্সবাজার শহীদ শেখ কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন। জনসভা থেকে ফিরে তিনি এলাকায় পার্শ্ববর্তী স্টেশনে এবং তার বাবা বাড়িতে চলে যান। রাতে তার বাবা, মা, নানী ও স্ত্রী রান্নাঘরে একসাথে খেতে বসেছিলেন। ওই সময় পেছনে থাকা পাহাড়ের বিশাল অংশ রান্নাঘরের উপর ধসে পড়ে। এতেই তার বাবা সহ সবাই মাটি চাপা পড়ে প্রাণ হারান।

তিনি আরো জানান, পাহাড় ধসের সময় তার বড় ভাইয়ের দুই শিশু সন্তান বাড়ির ভেতরে থাকায় প্রাণে রক্ষা পায়। প্রায় ১০ বছর পূর্বে পাহাড় কেটে তারা এখানে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এখানে পাহাড় কাটা হয়নি।

এ দিকে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে পাহাড় ধসে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতেই সেখানে যান কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। এসময় তিনি ৪ জনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকাহত স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান। এসময় সাংসদ কমল পরিবারটিকে তাৎক্ষণিক ৪৮ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেন। এছাড়াও সাংসদ কমল পরিবারটিকে অবিলম্বে সরকারিভাবে ঘর বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দেন।

অপরদিকে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে যান কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক শাহীনুল হক মার্শাল। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২০ হাজার টাকা, খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করেন। এছাড়াও ঘটনার দিন রাতে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা নিহত ৪ জনের দাফনের জন্য তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পরিবারকে শীঘ্রই ১ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কায়েশ জানিয়েছেন, এলাকায় পাহাড় কেটে পাহাড়ের পাদদেশে অনেকে বসত বাড়ি তৈরী করে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। তিনি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী এসব পরিবারকে মুজিববর্ষের ঘর দিয়ে পুর্নবাসনের জন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

স্থানীয়রা জানান, রাত আটটার দিকে পাহাড় ধসের সময় বিকট আওয়াজ শুনতে পান তারা। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে দেখেন কেউ নেই। পরে মাঠির নিচে একজনের শরীর দেখতে পান। ওই মৃতদেহটি উদ্ধার করতে গিয়ে একেএকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালান রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা। তিনি জানান- পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। অবৈধভাবে পাহাড় কেটে যারা মাটি নিয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি পাহাড় কাটা ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

উল্লেখ্য, বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাত আটটায় রামু উপজেলার কাউয়াখোপ ইউনিয়নের পাহাড় পাড়া ঝর্ণামুরা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান আজিজুর রহমান ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুন, শাশুড়ি দিল ফুরুজ বেগম ও পুত্রবধূ নাসিমা আকতার।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড় ধস, রামু
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন