খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচন: রফিকের দাপট কমাতে আওয়ামী লীগ- বিএনপি সহাবস্থান

3

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি॥
বিএনপি’র ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সম্ভাব্য জয়ের প্রধান বাধা হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিককে দেখছেন, দল দুটির শীর্ষ নেতারা। দুটি দলই তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে দেখছেন মোবাইল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থি ও বর্তমান মেয়র রফিককে। একারণে রফিককে ঠেকাতে চির বৈরী দলদুটির মধ্যে আপাত সহাবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি এ ব্যাপারে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী  বিএনপি’র সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুইয়ার খাগড়াছড়ি অবস্থানও মেনে নিতে আওয়ামী লীগের আপত্তি নেই বলে জানা গেছে। এরই দল দুটি’র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অভিযোগও উচ্চারিত হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো: রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকের প্রচারণা ও গণসংযোগে দল দুটি’র বেশকিছু জেলা নেতার পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে, দল দুটি’র অনেক নেতাকর্মী ‘নৌকা’ আর ‘ধানের শীষ’র পক্ষে অবস্থান না নিয়ে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন। এই দুটি দলের প্রচারণায় কর্মীর চেয়ে চেনা নেতাদেরকেই প্রতিদিন প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে। তবে দুটি দলের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগে কোন নেতাকর্মীকে বহিস্কারের খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচারণার প্রথমদিন থেকে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরকে প্রতিপক্ষ না ভেবে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে।

শালবাগান, মুসলিমপাড়া, পানখাইয়া পাড়া, ও কুমিল্লা টিলার বাসিন্দা রইস উদ্দিন, কংচাইরী মাষ্টার, আল মামুন ও জহিরুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, জেলার বাঙালি-পাহাড়িদের কাছে জনপ্রিয়তার এখনো শীর্ষে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়াই। তার পরের অবস্থানে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী রফিকুল আলম। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই দুই নেতাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সাধারণ ভোটাররাও মনে করেন, বিগত ৫ বছরে পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়নের কারণে বিএনপি-আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের বিপরীতে নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলম বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। বাঙালীদের বিভিন্ন আন্দোলনে পাশে পাওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালী সংগঠনগুলোর সমর্থন রফিকুল আলমের দিকেই যাবে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

বিগত ২০০৯ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর সরকারী দলের নানামুখী হামলা-মামলা ও চাপে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা খাগড়াছড়িতে অবস্থান করতে পারেন নি। দীর্ঘ সময়ে দলটির সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইয়া, যতোবারই খাগড়াছড়ি এসেছেন, ততোবারই এক-দুদিনের মাথায় এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রশাসনিক চাপে।

একইভাবে বিএনপি’র পক্ষ থেকেও অহরহ অভিযোগ করা হতো, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রশাসনকে ব্যবহার করে ওয়াদুদ ভূইয়াকে এলাকায় থাকতে দিচ্ছে না। সর্বশেষ গত কোরবানির ঈদে সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইয়া খাগড়াছড়ি আসলেও দু’দিনের বেশী থাকতে পারেননি।

এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া টেলিফোনে বলেন, ‘আমি খাগড়াছড়ি গেলেই সরকারী দল প্রশাসনকে ব্যবহার করে এলাকা ছাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তাই আমার নিরাপত্তার স্বার্থে নেতাকর্মীরা চান, আমি যেনো দূরে থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনার মাধ্যমে দল পরিচালনা করি’।

তিনি আগামী ২০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনের প্রচারণায় যোগ দিচ্ছেন না জানিয়ে বলেন, ‘ওইদিন আমি ফেনীতে মা ও বড়ো ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীর একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিচ্ছি, খাগড়াছড়িতে যাচ্ছি ন ‘।

এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একজন সাবেক সংসদ সদস্যকে তাঁর নিজ এলাকায় অবস্থানে বাঁধা দেয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক। তিনি জানান, সবাই এখন থেকে আমরা সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করবো।

এক কথায় এবার ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিককে মোকাবিলায় বিএনপি-আওয়ামীলীগ, এখন অনেকটাই কাছাকাছি। প্রচারণার প্রথম দিনে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে নৌকার প্রার্থী শানে আলমের সাথে কোকুলির ফটোসেশনে অংশ নেন ধানের শীষ’র প্রার্থী এড. আব্দুল মালেক মিন্টু।

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মিল্লাত বলেন, আমরা তো প্রতিনিয়িতই মামলার ঘানি টানছি। এই পৌর নির্বাচন উপলক্ষে অনেকদিন পর মন খুলে নেতাকর্মীদের সাথে মিশতে পারছি।

তিনি আরো জানান, এই জেলায় ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পর বিএনপি’র কয়েক’শ নেতাকর্মীর নামে শতাধিক মামলা দিয়ে তাদের এলাকা ছাড়া করেছে আওয়ামী লীগ। অতীতে হামলা মামলা দিলেও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন ধরনের প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়নি বলেও জানান বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসেন বলেন, নেতাকর্মীদের মাঝে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও এখন তা কেটে গেছে। সময় মত সবাই একযোগে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করবে।

আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রণবিক্রম ত্রিপুরা জানান, আমাদের ভোট আমরা পাবো। ওয়াদুদ ভূইয়া এলাকায় এসে প্রচারণা করলে আমাদের কোন ক্ষতি নেই।

স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলম বলেন, আমি দীর্ঘ ৩০ বছর এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক কল্যাণে কাজ করেছি বিধায় সাধারণ মানুষ আমার পাশে আছে। তিনি দাবী করেন, আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে নয় বরং আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত জনপ্রিয়তায় হয়ে একটি সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে জয়ী করতে চাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন