গাজায় হামলা বন্ধ না হলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে মধ্যপ্রাচ্য, দায়ী হবে যুক্তরাষ্ট্র: ইরান

fec-image

টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। চলমান এই সংঘাতের শুরু থেকেই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র দখলদার ইসরায়েল। গাজায় চলমান হামলা বন্ধ না করলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান। ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ পরিস্থিত সৃষ্টির জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

রোববার (২২ অক্টোবর) তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে আমির-আবদুল্লাহিয়ান বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে সতর্ক করছি যে, অবিলম্বে তারা গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ না করলে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। এতে এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আর তেমন কিছু যদি ঘটে, তবে তার ফলাফল হবে অতি তীব্র ও তিক্ত। আঞ্চলিক এবং যারা যুদ্ধের পক্ষে মদদ দিচ্ছে, উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যেতে পারে সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক সমর্থন এটাই প্রমাণ করে যে, গাজায় চলমান সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইসরায়েল পরিচালিত একটি প্রক্সি যুদ্ধ।’ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর সৈন্যদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনারা তাদের জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ করছে।’ সেই সঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধে চলমান এই যুদ্ধকে বাঁচা-মরার লড়াই বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।

রোববার লেবানন সীমান্তের কাছে মোতায়েন করা ইসরায়েলি সৈন্যদের অবস্থান পরিদর্শন করেছেন নেতানিয়াহু। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবনের জন্য যুদ্ধ করছি। এটি আমাদের ঘরের জন্য যুদ্ধ। এখানে কোনো অতিরঞ্জন নেই, এটা যুদ্ধ। এটা বাঁচা-মরার লড়াই। তাদের (হামাস) মরতে হবে।’

এ সময় হিজবুল্লাহকে যুদ্ধে না জড়ানোর জন্য সতর্ক করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধে নামলে হিজবুল্লাহ তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করবে। এবং অকল্পনীয় শক্তি দিয়ে তাদের আঘাত করব আমরা। এটি তাদের এবং লেবানন রাষ্ট্রের ধ্বংসের কারণ হবে।’

অন্যদিকে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ।

গাজায় চলমান সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারাও। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কিংবা নাগরিকদের ওপর আক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো গোষ্ঠী বা কোনো দেশ এই সংঘাতকে আরও প্রসারিত করতে চায় এবং এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়, তাদের জন্য আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, এমনটি করবেন না।’

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল ও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতে অন্তত ২৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি সামরিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবানন সীমান্তে সংঘাতে ইসরায়েলে অন্তত পাঁচজন ইসরায়েলি সেনা ও একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। চলমান এই সংঘাতের শুরু থেকেই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েলি নির্বিচার হামলায় ৪ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ইসরায়েল শনিবার থেকে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে বিমান হামলা জোরদার করার কথা ঘোষণা করেছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইরান, গাঁজা, মধ্যপ্রাচ্য
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন