জুমের ধান ঘরে তোলার সময়ও হাসি নেই চাষীদের মুখে

P1010465

থানছি (বান্দরবান) থেকে মংবোওয়াংচিং মারমা : জুমের ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে পাহাড়ের উপজাতি পরিবারগুলি। কিন্তু তাদের মুখে নেই হাসির ঝিলিক। কারণ প্রবল বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া থাকায় এবার ফলন ভালো হয়নি। প্রতিবছর ধান কাটার শেষে নব্বান্ন উৎসবে মেতে উঠে তারা। চলতি বছরে এই উৎসবের আনন্দ ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

বান্দরবানে থানছি উপজেলায় দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০০৬-০৭ সালে ইঁদুর বন্যা এবং গত বছর বন্য শুকরের তান্ডরের কারণে উপজাতিদের উৎপাদিত পাকা ধান, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, ভুট্টা, তিল, কলাসহ অন্যান্য ফসলের ফলন ভালো হয়নি। এ বছরের অবস্থাও অনেকটা সেরকম।

বড় মধক পাড়ায় মংক্যচিং মারমা (৪২) জানান, কয়েক বছর আগে ইঁদুর বন্যা ও বন্য শুকর তান্ডবে তার এলাকায় প্রায় ৩০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারও তারা দুই/তিন মাসে খোরাগী পেয়েছে। বাকি মাসগুলি কিভাবে চলবে তা নিয়ে তারা দিশেহারা।

রেমাক্রী এলাকায় পনেডং পাড়ার অদমং কারবারী (৬৫) বলেন,তার এলাকায় ২০টি পাড়ার মধ্যে ৮শ’ জুম চাষী আছে। তারা সকলের জুমের ধান ভাল ফলন হয়নি৤ তাই  ছেলে মেয়েদের নিয়ে নব্বান্ন উৎসবে মেতে উঠতে পারেনি।

তিন্দু ইউনিয়নের জুমীয়া গিড়ি চন্দ্র ত্রিপুরা (৫২) সাথে কথা হলে তিনি জানান,একবার ইঁদুর বন্যা মোকাবিলা করতে ৬টি বছরেও অধিক সময় লাগেছে। গত বছর বন্য শুকুরের হামলায় তাদের পাড়ায় ৪০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চলতি বছরে অভিরাম বৃষ্টি ও বৈরী আবাহওয়া কারণে জুমের ভাল ফলন হয়নি। যা পেয়েছে তা দিয়ে নিজেরা কি খাবে আর ছেলে মেয়েদের কি দিয়ে পড়াবে? জিন্নাপাড়া এলাকার পারিং ম্রো (৫৩) সাথে কথা হলে তিনিও একই  কথা বললেন।

উপজেলা সদরে ইউপি মেন্বার শৈখ্যাই ম্রো (৪৫) জানান, বৈরী আবাহওয়া কারণে জুমের ধান ও বিভিন্ন ফসল ওঠাতে চাষীরা হিমশিম খাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানাছি উপজেলা ৪টি ইউনিয়নের ১১ হাজার পরিবারে মধ্যে প্রায় ১০ হাজারেও বেশী জুম চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

থানছি সদরে ওয়াক চাক্কু পাড়া প্রধান থাওয়াই কারবারী সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত বছর ছোট ছোট বন্য শুকর দল বেঁধে আমাদের জুমের ধান কাটা অবস্থাতে সেগুলো সাবার করে ফেলেছে৤ আবার এই বছরেও ভাল ফলন হয়নি।

বলিপাড়া এলাকায় বান্দরবান থানছি সড়কে পাশে জুম চাষী অংবাই মারমা ,সাখয় ম্রো,চন্দ্র মনি ত্রিপুরা সাথে কথা হলে তারা জানান,এবারে ভারী বৃষ্টি হওয়ার এবং রোদ্র তাপমাত্রা বেশি কারণে জুমের পাকা ধান অধিকাংশ নষ্ট হয়েছে ।

বলিপাড়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি সহ-সভাপতি ক্যসাউ মারমা জানান,বলিপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় নাইতিং ও সেকদু  মৌজায় প্রায় ১২শ’ পরিবার  জুম চাষীর  মধ্যে  এই বছর অধিকাংশ জুমের ভাল ফলন হয়নি।

রেমাক্রী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মালিরাম ত্রিপুরা জানান, তাঁর ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার সকলের জুম চাষী৤ দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভারী বৃষ্টি হওয়া ও বৈরী আবাহওয়া কারণে অধিকাংশ পরিবারের জুমের ধান আশানুরুপ ফলন হয়নি।

তিন্দু ইউনিয়নে  চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে সিনিয়র সহ-সভাপতি সিগরাং ত্রিপুরা জানান,তার এলাকার ২ হাজার জুম চাষীরও একই অবস্থা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী (উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা) মোঃ হুমায়ুন কবীর সাথে কথা হলে তিনি বৈরী আবাহওয়া ও  টানা বৃষ্টি হওয়ায় জুম চাষীদের ভাল ফলন হয়নি। অধিকাংশ পরিবারের ধান উঠাতে পারবেনা তাদের কষ্ট জীবন দেখলে খারাপ লাগে।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, উপজেলা ৩৭৪০ বর্গকিলোমিটার পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ধংস করে ফেলেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়া মূল্যবান কাঠ বাঁশ বেত ইত্যাদি মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করেছে। বিশাল এলাকা  অরক্ষিত রয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে তোলা পশুপাখি জীব জন্তু হরিণ,বাঁঘ,ভাল্লুক,ময়না পাখি সহ অসংখ্য জীব জন্তুকে জীবনের প্রয়োজনের মেরে ফেলে খেয়ে ফেলেছে। সুতারাং প্রকৃতি ডাক আর অনিয়মিতভাবে হওয়ার কারণে পাহাড়ে ধান তিল, ভূট্টা,আম,তুলা,আদা,হলুদ ইত্যাদি উৎপাদন শক্তি হ্রাস পাওয়ার ফলে এই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন