“রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘প্রাণ রক্ষায় এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতোই পাইনা কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না। রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার।”
বিশ্ব শরণার্থী দিবস: 'মুক্ত জীবনে ফিরতে চাই'

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থীদের র‌্যালি, ফিরতে চান নিজ দেশে

fec-image

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নুরুল হাকিম বলেন ,বাংলাদেশ শুধু চাইলে হবে না, মিয়ানমারকে রাজি হতে হবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলে কেবল প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার পথ খুলতে পারে।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের টেকনাফে ১৯৯২ সাল থেকে নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরারী শরণার্থীরা র‌্যালি করেছে। এসময় বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লে কার্ড হাতে দেখা যায়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প এখন কক্সবাজারে। নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জাতিগত স্বীকৃতি আর নাগরিক অধিকার নিয়ে স্বদেশে ফিরতে চান।

মঙ্গলবার (২০ জুন) সকাল ৯টায় নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের র‌্যালিটি আই-ব্লক পরিদর্শন করেন।

এসময় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মুক্ত জীবনে ফিরতে চাই স্লোগানসহ ব্যানার ও প্লে কার্ডে ইংরেজিতে বিভিন্ন স্লোগান তুলে ধরেন। এরমধ্যে “আমরা দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতিতে ভুগছি। শরণার্থী জীবন আর চাই না। অমানবিক উদ্বাস্তু জীবন থেকে আমাদের মুক্তি দিন, রোহিঙ্গাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই? আমরা কি মানুষ নই এবং কেন আমরা অবহেলিত? রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কি মানবতা মরে গেছে? ৩১ বছরের অধিক অনিশ্চিত ভবিষ্যত টেকসই সমাধান ছাড়াই ভয়ঙ্কর, ভয়ানক, কঠোর ও তেরপালের নীচে সংরক্ষিত স্থানে বসবাস এবং শিক্ষা হতে বঞ্চিত জীবন।

নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা। তাই শরণার্থী দিবসে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট রোহিঙ্গাদের আবেদন তাদের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার। তবে দেশে যেতে আদৌ পারবে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আছে তারা।

গেল ছয় বছরে নানার কূটনৈতিক তৎপরতা দ্বিপাক্ষিও বৈঠক কিন্তু এখন পর্যন্ত একজনকে ও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

তবে গত দুই মাস ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রত্যাবাসন শুরুর আলোচনা চলছে।

প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারে যেতে রাজি হওয়া ২৩ রোহিঙ্গার খাদ্য সহায়তা গত সোমবার (৫ জুন) ইউএনএইচসিআর বন্ধ করলেও পরদিন মঙ্গলবার থেকে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে জানিয়ে পুনরায় খাদ্য দেওয়া শুরু করে সংস্থাটি।

এর মধ্যে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় তাদের জীবন আরও কষ্টকর হচ্ছে। এ জীবনের বিপরীতে স্বদেশ ফিরে মুক্ত জীবন চান তারা। এ জন্য দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গারা বলছেন, ক্যাম্পের জীবন জরাজীর্ণ এবং গণবসতি। অনেকটা একঘেয়ে এবং খাঁচায় বন্দির পাখির মত জীবন অতিবাহিত করেছেন টানা ৬ বছর ধরে।

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার এলাকার ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘প্রাণ রক্ষায় এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতোই পাইনা কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না। রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার।

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নুরুল হাকিম বলেন ,বাংলাদেশ শুধু চাইলে হবে না, মিয়ানমারকে রাজি হতে হবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলে কেবল প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার পথ খুলতে পারে।

উখিয়ার পালংখালীর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর চৌধুরী বলেন, ‘সঠিক উদ্যোগ না নেয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেমন ব্যর্থ হয়েছে তেমনি দীর্ঘ মেয়াদী অবস্থান করায় রোহিঙ্গাদের কারণে শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই আমাদের একমাত্র কাম্য। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ক্রমশ জটিল হয়ে পড়েছে।’

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইনে সেদেশের সেনা ও মগের অত্যচার ও নিপীড়ন সইতে না পেরে ১৯৯২ সালে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এদেশে শরণার্থী হয়ে চলে আসেন। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় ও শরণার্থী মর্যাদা দিয়ে উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে দ্রুত প্রত্যাবাসন করা হলেেও প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি শরণার্থী রয়ে যায় উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া ক্যাম্পে।

এরপর গত ২০১৭ সনে আবারো নির্যাতিত হয়ে আট লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নেয়।। মানবিক কারণে এদেশে তাদের বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা হিসবে আশ্রয় দেওয়া হয়। এর মধ্যে কয়েক দফা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে চাইলে একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, রোহিঙ্গা, র‌্যালি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন