টেকনাফ সড়কে পথে পথে চলছে চাঁদাবাজী, ব্যবসায়ীরা অসহায়

 

উখিয়া প্রতিনিধি:

গবাদি পশু ও বাঁশবাহী যানবাহন হতে চলছে পথে পথে চাঁদাবাজী। পুলিশ বিজিবি থেকে শুরু করে উঠতি পাতিনেতারা সড়কে যানবাহন থামিয়ে আদায় করছে টাকা। বলতে গেলে টেকনাফ সড়ক জুড়ে গণ চাঁদাবাজী নিয়মে পরিণত হয়েছে।

সরজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় রোহিঙ্গারা তাদের পালিত গরু, মহিষ ও ছাগল নিয়ে আসে।

কোরবানীর ঈদের আগ থেকে ঘুমধুম ইউনিয়নের আমতলী, পাত্রাজিরি, তুমব্রু জামতলি, উখিয়ার রহমতের বিল, আঞ্জুমান পাড়া, ভালুকিয়ার আমতলী, বালুখালী, টেকনাফের হোয়াইংক্য, লম্বাবিল, নয়া বাজার, শাহপরীরদ্বীপ, শাপলাপুর, সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার গবাদি পশু বাংলাদেশে নিয়ে আসে রোহিঙ্গারা।

অভিযোগে প্রকাশ, প্রথম দিকে স্থানীয় কিছু পাতি নেতা সংঘবদ্ধ হয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিকট হতে গবাদী পশু ছিনিয়ে নেয়। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের উশৃঙ্খল কতিপয় নেতাকর্মীরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ছিনতায় কাজে নেমে পড়ে। শুধু তাই নয় গরু ক্রয়ের কথা বলে টাকা না দিয়ে উল্টো মারধর করে নিরহ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। যা খুবই অমানবিক। এ ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে  প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে।

এক পর্যায়ে পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাড়াষি অভিযানে নেমে পড়লে কতিপয় ছিনতায়কারী সংঘবদ্ধ চক্ররা গা ঢাকা দেয়।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় আনা গবাদী পশু বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে প্রতিদিন। দাম একটু সস্তা হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা হতে গবাদী পশু ক্রয় করে যানবাহন বোঝাই করে দেশের হাট বাজার গুলোতে নিয়ে যায়।

কোটবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল থেকে ১২টি গরু ক্রয়ে করে ট্রাক যোগে আনার পথে ৫টি পয়েন্টে টাকা দিতে হয়েছে। হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ট্রাক প্রতি  ২৫ হাজার টাকা দাবি করে বসে। অনেক দেলদরবার করে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটু এগিয়ে আসলে বিজিবির সদস্যদের কবলে পড়ে তারা। অনুরূপ ভাবে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার পর বালুখালী কাস্টম স্টেশনে পৌঁছলে তাদের গবাদী পশু বোঝাই ট্রাক থামায়। সেখানেও দু’গ্রুপকে পৃথক পৃথক ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে উখিয়া পৌঁছলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আবারো গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করে। এভাবে কোটবাজার পৌঁছলে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে গরু গুলো ভালুকিয়ায় পৌঁছে।

গরু ব্যবসায়ী ছৈয়দ সাংবাদিকদের বলেন, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, কুতুপালং, হোয়াইক্যং থেকে গরু ক্রয় করে ট্রাক যোগে আনার পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। না দিতে চাইলে ট্রাক সহ গরু গুলো আটক রেখে মিথ্যা মামলার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি অনুযায়ী জোরপূর্বক টাকা দিতে হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, শরণার্থী ক্যাম্পে শেড নির্মাণের জন্য প্রতিদিন জীপ ও ট্রাকভর্তি করে হাজার হাজার পিচ বাঁশ নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব গাড়ি থামিয়ে ব্যবসায়ীদের কাজ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বলতে গেলে বর্তমানে টেকনাফ সড়ক জুড়ে চলছে পথে পথে চাঁদাবাজী। সচেতন নাগরিক সমাজ সড়কে চাঁদাবাজী বন্ধে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন