ট্রেন ও বাসের শিডিউল বিপর্যয় : বাড়ির পথে পথে ভোগান্তি

fec-image

ঈদে প্রিয়জনের কাছে ফিরতে শেষ মুহূর্তে বাড়ির পথে ছুটছেন কর্মজীবী মানুষ। পথে ভুগছেন ভোগান্তিতে। ঢাকা থেকে বের হতেই অনেক জায়গায় যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে। যানজট পিছু ছাড়ছে না কিছু মহাসড়কেও।

শেষ মুহূর্তে যাত্রীর ভিড় বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবখানেই। কয়েকজন মিলে আবার চুক্তিতে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে রওনা হয়েছেন। এমনকি পণ্যবাহী ট্রাকে করেও ঢাকা ছাড়ছেন কর্মজীবীরা। অনেকে সরাসরি যাওয়ার গাড়ি না পেয়ে ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুন) কমলাপুর থেকে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন ছেড়েছে দেরিতে। ছিল বাসের শিডিউল বিপর্যয়। অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে গিয়েও যাত্রীর কষ্ট বেড়েছে। ঈদমহাসড়কে উঠছে অনুমোদনহীন সিটি সার্ভিসের বাস।

পদ্মা ও যমুনা দুই নদীর সেতু প্রান্তেই ছিল গাড়ির দীর্ঘ জট। যদিও বাধাহীন মোটরসাইকেল অনেকের জন্যে স্বস্তির কারণ হয়েছে।
ট্রেন ছেড়েছে দেরিতে, বাসে শিডিউল বিপর্যয় : গতকাল কমলাপুর থেকে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলো দেরিতে ছেড়ে গেছে। যাত্রী যেন ট্রেনের ছাদে উঠতে না পারে সে জন্য প্রবেশমুখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে জয়দেবপুর থেকে ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘আজ ঈদ যাত্রার চতুর্থ দিন। অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে, এটা সত্য। যাত্রীর চাপ বাড়লেও শিডিউল বিপর্যয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। দু-একটি ট্রেন বিলম্বে ছাড়তে পারে। ঈদের সময় যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বিলম্ব বা এক ঘণ্টা বিলম্বে তেমন কিছু হয় না। এই ট্রেনগুলো ঢাকায় আসতেই দেরি করেছে। তাই ছাড়তে দেরি হয়েছে। আমার মনে হয়, আজ যাত্রীর চাপ কমে যাবে।’

তবে সড়কে যানজটের কারণে সকালে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল এমন বাস দুপুরেও ঢাকা পৌঁছেনি। আবার সকাল থেকে ঢাকার আকাশে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এতে ঈদ যাত্রায় তৈরি হয় ভোগান্তি। এ ছাড়া সড়কে পশুবাহী গাড়ির জন্য সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে রাজধানীর প্রবেশদ্বার গাবতলীতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল তীব্র যানজট।

বাসের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে অনেক যাত্রীকে অগ্রিম কেনা টিকিট হাতে নিয়েও থাকতে হয়েছে অপেক্ষায়। অপেক্ষমাণ যাত্রীরা জানায়, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো সময়মতো কাউন্টারে পৌঁছতে পারছে না। তাই টার্মিনালে নিজ নিজ বাসের কাউন্টারে হাজারো যাত্রীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের পথে অস্বাভাবিক যানজট। কাল ছেড়ে যাওয়া বাস আজ দুপুরেও ফিরে আসেনি। বাধ্য হয়েই বাসের যাত্রীরা কাউন্টারে অপেক্ষা করছে।

কারখানা ছুটির পর সড়কে জনস্রোত : গতকাল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। তবে সোমবার বিকেল থেকে রাতের মধ্যেই অনেক মানুষ গ্রামের বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে। কিন্তু গতকাল গার্মেন্টসহ অনেক কারখানা শ্রমিকদের শেষ কর্মদিবস ছিল। অফিস শেষ করেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন শ্রমিকরা। গতকাল বিকেল থেকে সাভারের বিভিন্ন মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখী মানুষের জনস্রোত তৈরি হয়। ছিল যানবাহনের চাপ।

সাভার এলাকায় যানজট না থাকলেও ছিল গাড়ির চাপ। গাড়ি চলেছে ধীরগতিতে। যাত্রীবাহী গাড়ির সঙ্গে চাপ বাড়িয়েছে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক। মূলত কারখানা ছুটির পর থেকেই সড়কে ভিড় বাড়ে কয়েক গুণ। সড়কেই দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষা করেছে অনেক যাত্রী। নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কজুড়ে যানবাহনের ধীরগতি সৃষ্টি হয়।

সিরাজগঞ্জগামী এক যাত্রী আল আমিন বলেন, ‘গাড়ি নেই, তাই ট্রাকে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভাড়াও কিছু কম। এ ছাড়া কোনো গতি নেই।’

চলছে অনুমোদনহীন বাস, ভাড়ায় নৈরাজ্য : মহাসড়কে চলাচলের অনুমতি নেই—এমন বাসও ঈদের যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। এমনকি এসব বাসে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়াও। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ভোগান্তিতে যাত্রীরা।

গতকাল গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, গুলিস্তান-আবদুল্লাপুর রুটে চলাচলকারী সিটি সার্ভিসের বাসে গোপালগঞ্জের যাত্রী তোলা হচ্ছে। ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা করে।

জানতে চাইলে বাসের চালকের সহকারী জালাল মিয়া বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে এই বাস যাবে। এ ছাড়া যাওয়ার কোনো পথ নেই। কিছুটা এগোলে বংশালে যাওয়ার পথে দেখা যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে বরিশালের যাত্রী তোলা হচ্ছে। যাত্রীপ্রতি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা করে। বাসের গায়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার রয়েছে।

সড়ক ও নৌপথের বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের পথে সোমবার থেকে যাত্রীপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল সকাল থেকে এই ভাড়া আরো বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ উত্তরাঞ্চলের পথে যাত্রীপ্রতি দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ফেনীর যাত্রীদের চট্টগ্রামের ভাড়া, ঢাকা থেকে সাতকানিয়া বা আমিরাবাদের যাত্রীদের কক্সবাজারের ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

উত্তরের পথে বেশি ভোগান্তি : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের আট কিলোমিটার পথে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ভোররাত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পারে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।

এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি জাহিদ হাসান বলেন, ‘অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, বৃষ্টি ও যান বিকল হওয়ার কারণে সেতুর পূর্ব এলাকায় ধীরগতি আছে। আমরা সড়কে দায়িত্ব পালন করছি। গাড়ি চলমান।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সড়কে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থেমে থেমে যানজট দেখা গেছে। চন্দ্রা উড়াল সেতুর পশ্চিম পাশে সড়কের মুখ সরু থাকায় পূর্ব পাশে যানজট দীর্ঘ হয়েছে।

তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চিত্র ভিন্ন। চট্টগ্রাম মহাসড়কে ইউ লুপ নির্মাণের সুফল পাচ্ছে ওই অঞ্চলের যাত্রীরা।

বঙ্গবন্ধু সেতুতে এক দিনে তিন কোটি টাকা টোল : বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন কোটি ২৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৫০ টাকা টোল আদায় করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। বিপরীতে ৪২ হাজার ৫৬০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে ছয় হাজার ৮৪১টি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে।

সোমবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেতু পূর্ব টাঙ্গাইল অংশে ২৪ হাজার ৮১৭টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীতে এক কোটি ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। সেতু পশ্চিম সিরাজগঞ্জ অংশে ১৭ হাজার ৭৪৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৫৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫০ টাকা।
সূত্র: কালের কন্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন, বাড়ি, বাস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন