পার্বত্যাঞ্চলে জুম্ম জাতিকে ধ্বংস করে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে: সন্তু লারমা

rangamati sontu Larma pic01 copy

স্টাফ রিপোর্টার:

 পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেএসএস সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র ব্যোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা অভিযোগ করে বলেছেন, পার্বত্যাঞ্চলে জুম্ম জাতিকে ধ্বংস করে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার পাকিস্তান শাসনামলের আদলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের ওপর শাসন নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন উপস্থিতি ও সেনা কর্তৃত্ব বজায় রাখা হয়েছে। এ সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চায় না। এজন্য আন্তরিক নয়। কোনো সদিচ্ছা নেই। তাই আগামী ৩০এপ্রিলের মধ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা না দিলে, ১মে থেকে জনসংহতি সমিতি পার্বত্যাঞ্চলের জুম্মজাতিদের সাথে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ার দিয়েছেন সন্তু লারমা।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি সরকার এগিয়ে আসবে। এখনও সময় আছে। অচিরেই চুক্তি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। আমরা কঠিন বাস্তবতার দিকে যেতে চাই না। কিন্তু সরকার এগিয়ে না এলে জুম্ম জনগণকে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে যেতে বাধ্য হতে হবে। কাজেই আমাদের সেই পরিস্থিতিতে যেতে বাধ্য করবেন না। আমরা সংখ্যায় কম। কিন্তু অধিকারের জন্য মৃত্যুকে জয় করেছি। মৃত্যুকে ভয় পাই না। কারণ অধিকার ছাড়া মৃত বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই। জনসংহতি সমিতির জন্ম জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে। এ পর্যন্ত অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এসেছি। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়ব।

তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে বাস্তবায়ন করছে না সরকার। যার কারণে পার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। ওই সময়ের মধ্যে সরকার যদি চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে না আসে, তাহলে পাহাড়ের যে কোন পরিস্থিতির জন্য সরকার নিজে দায়ী থাকবে। সরকারের চুক্তি বাস্তবায়নে অসদিচ্ছা ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রের কারণে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং উগ্র জাতীয়তবাদী শক্তি তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করেছে।

শুক্রবার সকাল ১০টায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তিন দিনব্যাপী ১০ম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিতির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রয় কমিটির সদস্য ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবী লতা চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেসনের আহবায়ক বিজয় কেতন চাকমা, রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা, জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ চাকমা, জেএসএস নেতা শিশির চাকমা প্রমুখ।

সন্তু লারমা ইউপিডিএফ একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর  পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হলেও শুরু থেকেই ইউপিডিএফ চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ, সরকার ওই সব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয় নি। তাছাড়া চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ঘোষণা বানচালের জন্য প্রশাসনের কতিপয় কুচক্রী মহল ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ইন্ধন জোগাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠীর মদদে পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফের জন্ম। ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসে মেতেছে। অথচ সরকার নির্বিকার। ইউপিডিএফের কারণে আজ পাহাড়ের মানুষ নিরপত্তাহীনতায় বসবাস করছে। সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ ইউপিডিএফকে আইনের আওতায় আনার সরকারের কাছে আহবান জানান তিনি।

সন্তু লারমা আরও বলেন, সরকার উন্নয়নের নামে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে জুম্মজাতিকে বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। এটা আর কিছু নয় জুম্মজাতির জায়গা-জমি দখল করার অপকৌশল মাত্র। তাই  চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া পাহাড়ে কোন উন্নয়ন ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পার্বত্য জনসংহতি সমিতির তিন দিনব্যাপী ১০ম জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন শাখা সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যবৃন্দ প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকগণ যোগদান করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন