পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

fec-image

বান্দরবানের লামায় একের পর এক পাহাড় ধ্বংসের কাজে নেমেছে ইটভাটার মালিকরা। পাহাড়ে বর্ষায় সবুজ প্রকৃতি সাজতে শুরু হলেও সেই পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু করেছে বড় যন্ত্রের সাহায্যে। হাইকোর্টের আদেশেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায় ৪০টি অবৈধ ইটভাটায় এক্সকেভেটর দিয়ে দিনে-রাতে দেদার চলছে পাহাড় কাটা। অর্ধশতাধিক ইটভাটায় মাটির যোগান দিতে সাবাড় করে বিনষ্ট হচ্ছে অসংখ্য পাহাড়, ফলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য। প্রকৃতির বুকে মানুষের এমন ক্ষতবিক্ষত আঘাতের কারণে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। তবে কি দায় সাড়ছেন প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ!

বান্দরবানের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনোভাবেই যেন ইটভাটা মালিকদের পাহাড় কাটা থামাতে পারছি না ! তারপরও যতটুকু পারছি ব্যবস্থা নিচ্ছি। তদন্ত করে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

জেলার বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বান্দরবানের ৭ উপজেলার এই ৭০টি ইটভাটার মধ্যে ফাইতং ইউনিয়নে আছে ২৮টি, ফাসিয়া খালীতে ৫টি ও লামায় আছে ৩৯টি। এ ছাড়া সদর উপজেলায় ১৭টি, নাইক্ষ্যংছড়িতে ১১টি, আলীকদমে ৩টি, থানচিতে ১টি, রুমায় ১টি ও রোয়াংছড়িতে ১টি ইটভাটা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লামায় ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে ৩০টি অবৈধ ইটভাটাসহ সর্বমোট ৪০টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে একটিরও বৈধতা নেই। ইতোমধ্যে ফাইতং ইউনিয়নের প্রায় ২৫ একর পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। চলমান বর্ষার শুরু থেকে ইটভাটাগুলো এক্সকেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মৌসুমের জন্য মাটি মজুদ করেছে। সে সঙ্গে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা নিধন করে ফেলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের সাইনবোর্ড দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে পাহাড় কাটা শুরু হয় যা চলে ভোর পর্যন্ত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা চলতেই আছে। শুধু এই বছর নয় প্রত্যেক বছর ধরে কাটতে কাটতে অনেকগুলো পাহাড় এখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে। তাছাড়া ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী কারণে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা-হামলার হুমকি দেওয়া হয়। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা না গেলে পাহাড় নামে কোন অস্তিত্ব থাকবে না।

ফাইতং ইউনিয়নের ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, সামনের ইটভাটা চালুর জন্য মাটি প্রস্তুত করে রাখতে হচ্ছে। এজন্য মাটির যোগান দিতে পাহাড় কাটা হয়েছে। তিনি বলেন, যতই লেখালেখি করবেন ততই আমাদের লাভ, প্রয়োজনে খরচের টাকা নিয়ে যান আরো লেখেন !

ঝিকঝাক ইটভাটা মালিক সমিতি সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজিম বলেন, আমার নেতৃত্বে পাহাড় কাটা হচ্ছে বিষয়টি মানহানিকর ও বিভ্রান্তিমূলক। কোনো ইটভাটা মালিক যদি পাহাড় কাটেন সে দায় তার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাইতং এলাকায় ইটভাটা শুরু হওয়ার আগে মালিকদের মাঝে চলে এক প্রকারের প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন ও ঝিকঝাক ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিম। এই তিনজনের নেতৃত্বে প্রত্যেক ইটভাটা থেকে অর্থ তুলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলে পাহাড় কাটা। শুধু লামায় নয় সাত উপজেলায় এই চিত্র যেন সারা বছরের! এভাবে একের পর এক পাহাড়কে ধ্বংস করতে থাকলে আগামীতে প্রকৃতির সৌন্দর্যের উপর কালো ছাঁয়া নেমে আসবে বলে মনে করেছেন প্রকৃতি প্রেমীরা।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, পার্বত্য এলাকার সবগুলো ইটভাটা হাইকোর্টের নির্দেশে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ইটভাটায় উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানের সময় পাহাড় কাটার প্রমাণ পেলে জরিমানা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জীববৈচিত্র্য, পাহাড়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন