পাহাড়ে প্রাণের উৎসব “ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে” মেতেছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা

Bandarban Fanos pic- 8.10.2014

নিজস্ব প্রতিবেদক:
“ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে, গো ক্রোছোবায়া পাঁইনা পাপকনা”- মারমা ভাষায় গানটি গেয়ে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের জনপদগুলো। মারমা তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে শোভা পাচ্ছে এই সুর। ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- উচ্ছলতায় প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে দাও।

বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ওয়াইগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। তিন মাস বর্ষাবাস (উপোস) করার পর উৎসাহ-উদ্দীপনায় এই উৎসব উদযাপন করে প্রতিবছর।
ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসব ঘিরে এবারও তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় পুরাতন রাজবাড়ি মাঠসহ কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার থেকে আকাশে ফানুস ওড়ানো হয়। এ উৎসব চলবে আরও দুদিন।

Bandarban Roth pic- 8.10.2014

সকাল থেকে তরুণ-তরুণীরা মন্দিরে মন্দিরে ভিক্ষুদের উদ্দেশ্য ছোয়াইং দান (ভাত-তরকারি ও মিষ্টান্ন খাবার প্রদান) বিকালে শুরু হয় প্রার্থনা।

সন্ধ্যায় শহরের রাজ গুরু বৌদ্ধ মন্দির থেকে ‘ছংরাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়ে: লাগাইমে.. ’ (সবাই মিলে মিশে রথযাত্রায় যায়..) মার্মারা এই বিশেষ গানটি পরিবেশন করে ময়ূর আকৃতির রথ যাত্রা শুরু করে। রথে বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে। এ সময় পাংখো নৃত্য পরিবেশন আর রথ টানতে শত শত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা রাস্তায় নেমে আসে। বৌদ্ধধর্মের নর-নারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বুদ্ধমূর্তিকে এবং দান করা হয় নগদ অর্থ। একইদিন মধ্যরাতে সাঙ্গু নদীতে রথ বির্সজন দেয়া হয়। ওয়াইগ্যোয়াই- এর অর্থ হচ্ছে উপবাসের পরিসমাপ্তি।

অন্যদিকে পূণ্য লাভের আশায় সন্ধ্যা থেকে আকাশে উড়ানো হয় শত শত রং বে-রং এর ফানুস। সারা রাত পাড়ায় পাড়ায় চলে পিঠা তৈরির আয়োজন।

উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা জানান, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবে আকাশে ফানুস উড়িয়ে বৌদ্ধধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করা হয়। এছাড়া মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাঝে খাদ্য-বস্ত্র বিতরণ এবং সবশেষে ময়ূর রথযাত্রা ও বির্সজনে মধ্য দিয়ে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। তবে মন্দিরে মন্দিরে আরো দুদিন প্রার্থনা চলবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন