বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত

fec-image

যে শঙ্কার কারণে আয়ারল্যান্ড থেকে সিরিজটি সরিয়ে ইংল্যান্ডে আনা হয়েছিল সে শঙ্কা সত্যি হলো ইংল্যান্ডেও। বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে বাংলাদেশ এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি।

ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের এসেক্স কাউন্টি মাঠে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি প্রথম সেশন নির্বিঘ্নে হতে পারলেও দ্বিতীয় সেশনের মাত্র ১৬.৩ ওভার। বাকি সময়ের পুরোটা কেড়ে নেয় বৃষ্টি। এমনই বৃষ্টি, তা আর থামেনি। ফলে অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পর বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন আম্পায়াররা। এখন সিরিজটি দাঁড়াল দুই ম্যাচের।

নিয়ম অনুযায়ী, ওয়ানডেতে বৃষ্টি আইনে কোনো ম্যাচের ফল বের করতে হলে কমপক্ষে ২০ ওভার করে হতে হয় দুই দলের ইনিংসে। ৩.৩ ওভারের জন্য সেটা সম্পূর্ণ হয়নি।

আইরিশদের সামনে লক্ষ্য ছিল ২৪৭ রানের। ম্যাচ বৃষ্টিতে বন্ধ হওয়ার আগে খুব একটা ভালো অবস্থানে ছিল না তারা। ৩ উইকেটে রান ছিল ৬৫।

২৭ রানেই পড়ে গিয়েছিল ২ উইকেট। এরপর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন স্টিফেন দোহেনি আর হ্যারি টেক্টর। ৬২ বল খেলে তারা যোগ করেন ৩৬ রান। অবশেষে এই জুটিটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম।

৩৯ বলে ১৭ রানের ধীর ইনিংস খেলা ওপেনার দোহেনিকে ফিরতি ক্যাচ বানান তাইজুল। বাঁহাতি এই স্পিনার উইকেট নেওয়ার পরের ওভারেই ঝমঝমিয়ে নামে বৃষ্টি।

ছোট পুঁজি নিয়েও প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন বাংলাদেশি বোলারররা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে পল স্টারলিংকে (১৫) মেহেদি হাসান মিরাজের ক্যাচ বানান শরিফুল ইসলাম। পরের ওভারে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নিকে (৫) বোল্ড করেন হাসান মাহমুদ।

এর আগে ইংল্যান্ডের বিরূপ কন্ডিশনে শুরু থেকেই ধুঁকছিল বাংলাদেশ। ১৫ রানে হারায় ২ উইকেট। ১২২ রানে ৫টি। একটা সময় মনে হচ্ছিল, দুইশ করাই কঠিন হয়ে যাবে। তবে বিপদ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াকু পুঁজি দাঁড় করিয়েছে টাইগাররা।

নাজমুল হোসেন শান্ত আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ভর করে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। পুঁজিটা আরেকটু বড় হতে পারতো। কিন্তু লোয়ার অর্ডাররা শেষ দুই ওভারে মাত্র ৭ তুলতে পারেন।

চেমসফোর্ডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আইরিশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ১৫ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ২ উইকেট। আউট হন লিটন দাস আর অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

লিটলের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন লিটন। সেটাও আবার গোল্ডেন ডাকে (১ বলে ০)। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন লিটন। ৩ রানে বাংলাদেশ হারায় প্রথম উইকেট।

তামিম শুরুটা ভালোই করেছিলেন, কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। চতুর্থ ওভারে মার্ক এডায়ারের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ১৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে তামিম করেন ১৪।

এরপর দুই বাঁহাতি সাকিব আল হাসান আর নাজমুল হোসেন শান্ত গড়েন প্রতিরোধ। সাকিব দলের বিপদের মুখে শান্তকে নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানলেন গ্রাহাম হুমে।

অনেকটা এগিয়ে ক্রস খেলতে গিয়ে আইরিশ পেসারের বলে বোল্ড হয়ে যান সাকিব। ২১ বলে ৪ বাউন্ডারিতে তিনি তখন ২০ রানে। শান্তর সঙ্গে তার ৩৭ রানের জুটিটি ভাঙে এই আউটে। ৫২ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে তাওহিদ হৃদয় আর শান্তর দারুণ একটি জুটি। ৬৩ বলে ৫০ রানের এই জুটিটি ভাঙে শান্তর আউটে। দলীয় ১০২ রানে ৪ উইকেট পড়ে টাইগারদের।

চাপের মুখে শান্ত খেলেছেন ভালো একটি ইনিংস। কিন্তু ইনিংসটা শেষ হলো আক্ষেপ নিয়ে। মাত্র ৬ রানের জন্য যে ফিফটিটা করতে পারলেন না।

ফিফটি পেলে ব্যাটিং করা সবশেষ ৬ ইনিংসে এটি হতো শান্তর চতুর্থ পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। ৬৬ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৪ করে কুর্তিস ক্যাম্ফারের শিকার হন শান্ত। ডিপ মিডউইকেট বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

এরপর ফিরে যান আরেক সেট ব্যাটার হৃদয়। হুমের বল অফসাইডে অনেকটা বাইরে গিয়ে ব্যাটে লাগান এই তরুণ, উইকেটরক্ষকের হাতে চলে যায় বল। ৩১ বলে গড়া হৃদয়ের ২৭ রানের ইনিংসে ছিল ২টি বাউন্ডারির মার।

১২২ রানে ৫ শীর্ষ ব্যাটার সাজঘরে। এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে দারুণ একটি জুটি গড়ে দলকে অনেকটা এগিয়ে নেন মুশফিকুর রহিম আর মেহেদি হাসান মিরাজ।

৬৬ বলে তাদের ৬৫ রানের জুটি ভাঙে মিরাজ সুইপে ছক্কা হাঁকাতে গেলে। ডকরেলের শিকার হওয়ার আগে ৩৪ বলে ৪ চারের সাহায্যে ২৭ রান করেন এই অলরাউন্ডার।

স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে মুশফিকুর রহিমই ছিলেন শেষ ভরসা। ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ দেখেশুনে খেলে লোয়ার অর্ডারকে নিয়েই ক্যারিয়ারের ৪৪তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন।

তবে ব্যক্তিগত ৬১ রানেই থামতে হয়েছে ডানহাতি এই ব্যাটারকে। লিটলকে তুলে মারতে গিয়ে দোহেনির ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন মুশফিক। ৭০ বলের ইনিংসে ৬টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। এরপর তাইজুল ইসলাম ১৪ আর শরিফুল ইসলাম আউট হন ১৬ রান করে।

আইরিশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল জশ লিটল। ৬১ রানে তিনি নেন ৩টি উইকেট।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আয়ারল্যান্ড, পরিত্যক্ত, বাংলাদেশ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন