বান্দরবানে ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে বনবিভাগ ও বিজিবিতে দ্বন্দ্ব

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি:

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় বিজিবির সদর দপ্তর স্থাপনে জায়গার মালিকানা নিয়ে বনবিভাগ ও বিজিবির দ্বন্দ চরমে। ১৮৮০ সাল থেকে সৃজিত সরকারী রিজার্ভ এলাকায় বিজিবি সদর দপ্তর স্থাপন পরিবেশ বিরোধী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আইনের পরিপন্থী বলে জানায় বনবিভাগ। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়ে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন জরুরী বলে জানিয়েছে বিজিবি।

সূত্রে জানা যায়, আলীকদম মাতামুহুরী রেঞ্জের সীমানায় আনসার ঘোনায় বিজিবির সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য ২৫ একর জায়গার প্রস্তাবনা করা হয়। তবে এখনও প্রস্তাবিত ২৫ একর জায়গার বিষয়ে বিজিবি ও বনবিভাগের উর্ধ্বতন পর্যায়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া গত ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভায় এ জায়গার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তে বলা হয়, আলীকদম বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের নিমিত্তে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বিজিবি ও বনবিভাগকে সহনশীল হতে হবে।

উপরমহলের সিদ্ধান্ত না মেনে বিজিবি বনবিভাগের উক্ত জায়গায় নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প ও টয়লেট তৈরি করে। রিজার্ভ এলাকায় বিজিবি টয়লেট তৈরি করায় রিংস্লাব বনকর্মীরা তুলে বাবুপাড়া বন ফাঁড়িতে নিয়ে গেলে দ্বন্দের সূত্রপাত হয়। ভারপ্রাপ্ত মাতামুহুরী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা তার কর্মকর্তাদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে ফেরার পথে আলীকদম আর্মি জোন সংলগ্ন মাতামুহুরী ব্রিজের উপর বিজিবি তাদের আটক করে। তিন বন কর্মকর্তাসহ আটক ৪ জনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বিজিবি। বন কর্মকর্তাদের আটক ও লিখিত নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেছেন আলীকদম ৫৭ বিজিবি অধিনায়ক মেজর রেজা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আইনের ৬৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলার এলাকাধীন বন্দোবস্তযোগ্য খাস জমিসহ যে কোন জায়গা জমি, পরিষদের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে ইজারা প্রদান, বন্দোবস্ত, ক্রয়-বিক্রয় বা অন্যবিধভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না। সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প কারখানা ও সরকারের নামে রেকর্ডকৃত জমির ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।

বন কর্মকর্তাদের আটক ও ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে আলীকদম ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মেজর মোঃ রেজাউল করিম বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থেই ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের স্থাপনা নির্মাণ জরুরী। কিন্তু বন বিভাগ বিজিবির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। আনসার ঘোনার জায়গাটি বিজিবির। সেখানে আমাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণস্থলে নির্মিত টয়লেটের রিংস্লাভ তুলে নেওয়ার পর আমরা কয়েকজনকে আটক করি পরে বন বিভাগের লোক পরিচয় পেয়ে তাদের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।

এবিষয়ে লামা বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমার কর্মকর্তাদের অন্যায়ভাবে আটকের পর তাদের উপর হাত তুলেছে বিজিবি। আবার ছেড়ে দেয়ার সময় মুচলেখা নিয়েছে যা খুবই দুঃখজনক। তাছাড়া বিজিবি যেখানে স্থাপনা নির্মাণ করতে চাইছে সেটি বনবিভাগের জায়গা।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল আমিন বলেন, বিজিবি কর্তৃক বন কর্মকর্তা কর্মচারীদের আটকের বিষয়টি বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও বিজিবি ব্যাটালিয়ান অধিনায়ককে জানানো হয়। আলোচনার মাধ্যমে ঐ দিন বিকেলে বন কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আনসার ঘোনা জায়গাটি বনবিভাগ ও বিজিবি দাবী করে আসছে। তবে বিজিবির প্রস্তাবিত জায়গাটি এখনো সীমানা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন থেকে বিজিবিকে হস্তান্তর করা হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন