বান্দরবানে ব্যস্ত সময় পার করছে কামাররা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:
টুংটাং শব্দে একমনে কাজ করে যাচ্ছেন কামাররা। সামনে কোরবানীর ঈদ, প্রচুর অর্ডার তাই ঘাম ঝরিয়ে এক হাতে হাপর টানছেন অন্য হাতে গরম করছেন লোহা। কোনো দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। এমনই চিত্র দেখা গেল বান্দরবান বাজারের কামার গলিতে।
একসময় বাজারে ছিল অনেকগুলো কামারের দোকান। এখন মাত্র ছয়টি দোকান রয়েছে। এলাকার মানুষদের দা, বটি, ধামা, ছেনি, ছুরি, কাঁচি, শাবল, কোদালসহ লোহার তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে মাত্র ছয়টি দোকানীদের। কোরবানির ঈদে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণ।
রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে কামাল উদ্দিন এসেছেন ছুরি কিনতে কামারের দোকানে। তিনি বলেন, প্রতি কোরবানীতেই এখানে আসি দা, বটি, ছুরির কাজ করাবার জন্য। কারণ এখানকার কাজ নিখুঁত হয় এবং পুরো বছরে আর কাজ করাতে হয় না।
যৌথ খামার থেকে হাসান এসেছেন ধামা কিনতে । তিনি জানান, প্রতিবছর আমি কোন না কোন যন্ত্র এই কামারের দোকান থেকে ক্রয় করি। কোরবান সামনে তাই কামারদের এসময় ব্যস্থতা বেশি আর আমাদের চাহিদা অনুযায়ী তারা সুন্দর অস্ত্রটি আমাদের হাতে ধরিয়ে দেয়।
বান্দরবান বাজারে বর্তমানে ছয়টি কামারের দোকান রয়েছে, এদের মধ্যে রাজু কর্মকার, আনন্দ কর্মকার, দীপেন বিশ্বাস ও স্বপন বিশ্বাসের দোকান। মূল বাজারের বাইরে বালাঘাটা বাজারে একটি আশু বিশ্বাসের দোকান আর উজানী পাড়ায় সমীরণ বিশ্বাসের একটি কামারের দোকান বর্তমানে চালু রয়েছে।
কথা হয় বান্দরবান বাজারের দোকানদার রাজু কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ পেশায় রোগ-ব্যধি বেশি। মানুষ বেশি দিন বাঁচে না, তাই অনেকে পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। আমরা বাবা দাদার ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। শত বছরের পুরনো ব্যবসা। দাদা করছে, বাবা করছে, আমিও করছি , তবে আর বেশি দিন নয়।
বান্দরবান বাজারের আনন্দ কর্মকার জানান, সারা বছর আমরা যেই আয় করি তার বেশিরভাগ অর্থই এই কোরবান উপলক্ষ্যে পায়। একসময় এই ব্যবসা জমজমাট ছিল, চাহিদা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এখন অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কোরবানি ঈদের আগে আমাদের বিভিন্ন মালামালের অর্ডার একটু বেশি থাকে আর আমরা চাই সময়মত সেই অর্ডারটাকে ক্রেতাদের দিতে, কিন্তু ইদানিং বিদ্যুৎ ঠিকমত থাকে না আর আমরা কোন কাজই করতে পারছি না। লোডশেডিং এর কারণে এবার ব্যবসা অনেকটা মন্দা হচ্ছে বলে জানান এই দোকানদার।
সাধারণত সনাতন ধর্মালম্বীরা এই কামারের কাজ করে থাকে, ফলে মুসলমানদের উৎসব সফল করতে সনাতন ধর্মালম্বী কামারদের রাত দিন পরিশ্রম করতে হয় ,আর একে অন্যের ধর্মের প্রতি আনুগত্যের জন্য তৈরি হয় ধর্মীয় সম্প্রীতি।