বান্দরবান সড়কে রং লাগিয়ে চলছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস
বান্দরবানে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কগুলো দেশের অন্য সড়কগুলোর চেয়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে এখানে দুর্ঘটনার প্রবণতাও তুলনামূলক হারে বেশি। এখানে আঁকাবাঁকা সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় স্থানীয় যাত্রীসহ শতশত পর্যটক। অথচ এই ঝুকিপূর্ণ সড়ক পথেই চলছে দেশের সবচেয়ে লক্কর-ঝক্কর ঝরাজীর্ণ বাস। আর এসব বাস চালকদের বেশির ভাগই নেই কোন লাইসেন্স। আবার যাদের আছে তাদের মধ্যে অনেকেই লাইসেন্স মেয়াদোর্ত্তীণ হয়েছে অনেক আগেই। বিশেষ করে বান্দরবান কেরানীহাট সড়কের লোকাল যাত্রীবাহী বাসের বেহাল দশা। মেয়াদোর্ত্তীণ তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চলছে বাসগুলো। যাত্রীদের ধোঁকা দিতে প্রতিবছর রং লাগিয়ে নতুনেরমত চলছে বাসগুলো।
সরেজমিনে বাসস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান কেরানীহাট সড়কে পূবালী, শাহআমিন, সোমাইয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি লোকাল বাস চলাচল করছে। এসব গাড়ির অধিকাংশের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। তারপরও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে বছরের পর বছর। আর এসব জরাজীর্ণ গাড়িগুলো চকচকে করতে লাগানো হয়েছে রং।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে নির্ধারিত মাসিক টোকেনের বিনিময়ে চলছে বাসগুলো। যার মাসিক মূল্য ১হাজার টাকা। আর এ কারণে মেয়াদ না থাকার পরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও কখনো এসব বাস গাড়িগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও জরিমানা না করায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সড়কে লাইসেন্স বিহীন ও মেয়দোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী চালকদের দিয়েই চালানো হচ্ছে বেশির ভাগ গাড়ি, ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। আর এসব জরাজীর্ণ বাস পর্যটন সড়কে চলাচল করায় দেশের কাছে সুনামক্ষুন্ন হচ্ছে এ এলাকার।
স্থানীয়রা জানায়, বর্তমানে এসব লোকাল বাসগুলো প্রায় সময় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। আবার বিভিন্ন সময় ছোট-বড় গাড়িকে ধাক্কা মারলে পথচারীরা আহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনাতো ঘটছেই।
এ বিষয়ে বান্দরবানের আবদুর রহিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছি গাড়িগুলো চলছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় পড়ে গাড়িগুলোতে অনেক মানুষ মরতে দেখেছি। আবার কিছুকিছু গাড়ি জরাজীর্ণ হয়ে ভেঙ্গে যেতে দেখেছি। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার দেখি গাড়িটি নতুন হয়ে আবারও আগের মতো সড়কে চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম বলেন, বান্দরবানের বাসগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বা চালকের লাইসেন্স না থাকলেও যারা দেখার তারাতো দেখছে না। যারা গাড়িগুলো চালানোর সুযোগ দিচ্ছে তাদের আগো শাস্তি চান তিনি।
এদিকে নাম না বলার শর্তে কয়েকজন চালক জানান, এ বাসগুলো বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ ও জরাজীর্ণ। অনেকগুলোর কাগজও ঠিক নেই। শুধু তাই নয় বেশির ভাগ চালকেরও নেই নিজস্ব লাইসেন্স। যাদের আছে তাও বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। অনেকে লেখাপড়া না করে জাল শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে নিয়েছেন এসব লাইসেন্স। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে মাসিক কিছু দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে বান্দরবান শৈলশোভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস চেয়ারম্যান জানান, আমরা তদন্ত করে দেখবো, যেগুলো ফিটনেসবিহীন আছে সেগুলো আমরা সরিয়ে ফেলবো। চালকদের লাইসেন্সে ত্রুটি থাকলে সেটাও আমরা ব্যবস্থা নিব।
এ বিষয়ে বান্দরবান ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই প্রশাসন) মো. আবদুল কুদ্দুস মাসিক টোকেনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানান, বান্দরবান বাসস্টেশনে তিনটি ব্রিজের কাজ চলছে। যার কারণে দীর্ঘদিন গাড়ির কোন কাগজপত্র বা ফিটনেস যাচাই করতে পারেননি। তবে কবে নাগাদ গাড়িগুলোর ফিটনেস যাছাই করবেন তা তিনি জানাননি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজি বলেন, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সবগুলো গাড়িকে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হবে। এছাড়া দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।