ভয়াবহ বন্যার তাণ্ডবে চকরিয়া হারবাংয়ের জনপদ লণ্ডভণ্ড, ৩৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

fec-image

★বন্যায় তলিয়ে গেছে এলজিইডির অর্থায়নে ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ ★ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ৬ কোটি টাকার উন্নয়ন লন্ডভন্ড। ★কৃষি ও মৎস্য ঘেরের ক্ষতি ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন গ্রাম হবে শহর। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে গ্রামীণ জনপদের চিত্র উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে গিয়েছিল কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ের গ্রামীণ জনপদের চিত্র। সম্প্রতি টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এ জনপদে সবচিত্র লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এতে গ্রামীণ বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট, ফসলী জমি, ধানের বীজতলা ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া তথ্যমতে এই জনপদের প্রায় ৩৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডের মানুষ বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে টানা ৫ দিন ধরে নিমজ্জিত ছিল। এতে ভয়াবহ বন্যায় পানির প্রবল স্রোতের তোড়ে রাখাইন পাড়া, কাটাখালী, পাহাড়তলী, গুচ্ছ গ্রাম, উত্তর নুনাছড়ি, মধ্যম নুনাছড়ি, পূর্ব নুনাছড়ি, শান্তিনগর, বাইঘ্যার পাড়া, নয়াপাড়া, মাহাজন পাড়া, কালা সিকদার পাড়া, জমিদার পাড়া, সিকদার পাড়া, বাজার পাড়া, মধ্যম পহরচাঁদা, হাছিযার কাটা, পাতাখোলা, ডেবলতলী, শীলপাড়া, রোসাইঙ্গা পাড়া, ধরপাড়া, মুসলিম পাড়া, নাথপাড়া, মইক্যাঘোনা, চরপাড়া, মছন সিকদার পাড়ার বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, ধানের বীজতলা, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে ৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক ৮ কি. মিটার এইচবিবি, প্লাট সলিং, প্রায় ৫ কি. মিটার মাটির রাস্তা বানের পানির প্রবল স্রোতের তোড়ে সড়কে বড় বড় গর্ত ও ইট উঠে পুকুর হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের শত শত স্কুল, মাদ্রাসা ও বাজারগামী মানুষ প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন।

সম্প্রতি অবিরাম বর্ষণে ও ভয়াবহ বন্যার কারণে ওই এলাকার রাস্তা-ঘাটের একাকার হয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরই ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার জনগোষ্ঠী। উন্নয়নের দিক দিয়ে দীর্ঘদিন পিছিয়ে ছিল হারবাংয়ের গ্রামীণ জনপদ। বন্যার এক সপ্তাহের পূর্বেও এ জনপদ পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছিল। বর্তমান চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে জনগণের কাছে নির্বাচনী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার আলোকে হারবাংয়ের প্রতিটি ওয়ার্ডকে উন্নয়নের মাধ্যম ঢেলে সাজায়। কিন্ত ভয়াবহ বন্যার তাণ্ডবে সবকিছুই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পূর্বে হারবাং ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক কার্পেটিং, ব্রিজ, এইচবিবি রাস্তা, ফ্লাট সলিং, মাটির সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানির স্রোতে পড়ে গ্রামীণ সকল সড়কের বেহালদশায় পরিণত হয়। বর্তমানে বন্যার কারণে যে সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নিরুপণ করে পরবর্তীতে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

হারবাং রাখাইন পাড়ার বাসিন্দা লামিং জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন নির্বাচিত হওয়ার পরে গ্রামীণ জনপদের চিত্র উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছিল। বিশেষ করে রাস্তা-ঘাটের যে পরিবর্তন হয় তা বন্যার পানিতে সবকিছু তলিয়ে নিয়ে যায়। আমার বাড়ির সামনে রাখাইন পাড়ার চলাচলের মূল সড়ক ভেঙে পুকুরে পরিণত হয়েছে। আবারো ভারি বৃষ্টিপাত হলে হারবাং ছড়াখালের পানি এ ভাঙন দিয়ে ঢুকে আমার বাড়ির ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। এতে পরিবার নিয়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, হারবাংয়ের জনপদের বিভিন্ন যে গ্রামীণ সড়ক রয়েছে তা বন্যার পানিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বর্তমানে এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ বন্যার কারণে রাস্তা-ঘাটের এমনই দশা হয়েছে, জুতা পায়ে দিয়ে চলাচল তো দূরের কথা, খালি পায়ে যাওয়াও কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যেন দ্রুত মেরামত করা হয় সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ বলেন, টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এ জনপদের সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বন্যার পানির তান্ডবে প্রায় ৩৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, ধানের বীজতলা, ফসলি জমি। সবচেয়ে যাতায়তে দুর্ভোগ পড়ে এ জনপদের মানুষ। বন্যার পূর্বে যেসব সড়ক সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে তা বন্যায় সব লণ্ডভণ্ড হয়ে বড় বড় খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়ে যানচলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে বেশকিছু এলাকার রাস্তা দিয়ে কোন রোগী নিয়ে ও বাজারে যাতায়ত করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই জনপদের রাস্তাঘাট দ্রুত মেরামত করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চকরিয়া, বন্যা, হারবাং
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন