মিয়ানমারে ৪ দিনে আরও কয়েকটি সেনা ঘাঁটি বিদ্রোহীদের দখলে

fec-image

গত চার দিনে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে আরও বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটির দখল হারিয়েছে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার। এই ঘাঁটিগুলোর অবস্থান মিয়ানমারের কাচিন, রাখাইন, মন প্রদেশ এবং সাগাইং ও বাগো জেলায়।

বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইরাবতী নিউজ। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, জান্তাবিরোধী দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এবং কাচিন পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (কেপিডিএফ) গত সোমবার কাচিন প্রদেশের মান্দালয়-মিতকিয়ানা সংযোগ সড়কের কাছে সামরিক বাহিনীর একটি কৌশলগত সামরিক ঘাঁটি এবং মানসি শহরের প্রধান সামরিক ঘাঁটিটির দখল নিয়েছে। সেনা বাহিনীর সঙ্গে তিন দিনের যুদ্ধ শেষে এএ-কেডিএফ কাচিন প্রদেশের এ দুই ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

৩ দিনের যুদ্ধে মিয়ানমার বাহিনী এই দুই ঘাঁটি লক্ষ্য করে ৬০টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে ৫ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে ইরাবতী নিউজকে জানিয়েছেন এএ-কেপিডিএফ নেতারা।

তারা আরও জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি বিভাগের ২৭৬ এং ২২৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের সব সেনা বর্তমানে তাদের হাতে বন্দি রয়েছেন।

সোমবার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলার পায়ে ইউন তুয়াং গ্রামের একটি সামরিক ঘাঁটির দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি। সেদিন স্থানীয় সময় সকাল ৭ টার দিকে ওই ঘাঁটিতে হামলা চালায় আরকান আর্মি এবং ৯ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ শেষে সেটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

গোষ্ঠীটির হাই কমান্ড জানিয়েছে, যুদ্ধে মোট ১০ জন সেনা নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন জন সেনা নিকটস্থ জঙ্গলে পালিয়ে গেছেন। এই সেনাদের ধরতে জঙ্গলে তল্লাশি চালাচ্ছে এএ

যুদ্ধ চলাকালে পায়ে ইউন তুয়াং গ্রামের ওপর অন্তত তিন বার বোমা ফেলেছে মিয়ানমারের বিমান বাহিনী।

এছাড়া মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় মন প্রদেশের ইয়ে শহরে সামরিক বাহিনীর হেডকোয়ার্টার, বাহিনীর কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি বাসভবন এবং একটি মিলিটারি অপারেশন কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা। সাগাইং এবং বাগো জেলার একাধিক ঘাঁটিও দখল করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা, কিন্তু সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ইরাবতী নিউজ।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্র অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনতা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারের পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ দমনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করার পর ২০২২ সালের দিকে গণতন্ত্রপন্থীদের একাংশ জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে।

২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। পিডিএমভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামেও পরিচিত।

গত প্রায় চার মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ৪০টি শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ শান প্রদেশসহ অন্তত ৫টি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে পিডিএফ।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আরাকান আর্মি, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন