সীমান্ত উত্তেজনা: সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের বিমানে ফেরত পাঠাতে চায় বাংলাদেশ

fec-image

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে দেশটি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন আরও ১১৪ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, সেনাসদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা।

গতকাল বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালী বাজারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে দেশটি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন আরও ১১৪ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, সেনাসদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাত থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার ২৬৪ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের নাফ নদী পথে ফিরিয়ে নিতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু রাখাইনে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ মিয়ানমারের আশ্রিত লোকজনকে বিকল্প পথে ফেরত পাঠাতে চায়।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরকারি ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নৌপথের পরিবর্তে আকাশপথে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটিকে বিকল্প প্রস্তাব দিতে চায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে আজ বুধবার মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডোতে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। লড়াইয়ের মধ্যে গত সোমবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে একটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে দুজন নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকালে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় তাঁর কাছে দেওয়া এক প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, মিয়ানমার বিমানবাহিনীর কোনো যুদ্ধবিমান যাতে বাংলাদেশের সীমানায় না ঢোকে। পাশাপাশি রাখাইন থেকে আর কোনো বাস্তুচ্যুতকে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (মিয়ানমার অনুবিভাগ) মিয়া মো. মাইনুল কবির মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে ওই প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করেন।

গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে দেশটির লোকজনের বাংলাদেশে প্রবেশ এবং সেখান থেকে আসা গোলাবারুদে বাংলাদেশিদের হতাহতের ঘটনা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য। এ বিষয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশে প্রাণহানি বা সম্পত্তির জন্য ক্ষতিকারক, এমন কোনো ধরনের অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ড বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। মিয়ানমার বিমানবাহিনী সীমান্তের খুব কাছে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং তারা যেন বাংলাদেশ সীমানায় না প্রবেশ করে, সে বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার ২৬৪ জনকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আজ নেপিডোতে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান শোয়ের সঙ্গে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেনের আলোচনার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে ইয়াঙ্গুন থেকে মনোয়ার হোসেন গত রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘গত সোমবার সকালে নেপিডো থেকে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুইন উর সঙ্গে ফোনে আমার আলোচনা হয়েছিল। এ সময় রাখাইনের চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে অনভিপ্রেত ঘটনার দ্রুত অবসান এবং লোকজনে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান শোয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের অনুরোধ জানাই। ওই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (আজ) বৈঠকটি হবে।’

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমার বাংলাদেশে আশ্রিত লোকজনে টেকনাফ থেকে নৌযানে মংডুতে নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। মিয়ানমারের প্রস্তাব অনুযায়ী দুই দেশের নৌসীমার মধ্যবর্তী স্থানে বাংলাদেশ তাঁদের হস্তান্তর করবে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিনের লড়াই শেষে রাখাইন রাজ্যের ১০টি ব্যাটালিয়নের মধ্যে তিনটি ব্যাটালিয়ন এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এতে বিজিপির অন্তত সাড়ে সাত শ সদস্য সীমান্তচৌকি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে গেছেন। এমন এক পরিস্থিতিতে সেখানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণের পরিধি বাড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মিয়ানমার নৌপথে তাদের লোকজনকে ফেরত নিতে চায়। কিন্তু তাতে নিরাপত্তাঝুঁকি আছে বলে মনে করে বাংলাদেশ। কারণ, মিয়ানমারে দুই পক্ষের মধ্যে এখনো তুমুল লড়াই অব্যাহত থাকায় রাখাইনের সীমান্তচৌকি ছেড়ে দেশটির নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা বাড়ছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের লোকজনকে নাফ নদীর পরিবর্তে আকাশপথে পাঠানো ভালো। এটি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ এখন মিয়ানমারকে তাদের লোকজন যাতে আকাশপথে ফিরতে পারে, সেই প্রস্তাব দেবে।

সূত্র: প্রথমআলো

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আরাকান আর্মি, বাংলাদেশ, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন