সেন্টমার্টিনের অদুরে ট্রলারে মিয়ানমার বাহিনীর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ: নিহত ৭ আহত শতাধিক

1521367_256769617860441_8932976038853153653_n

স্টাফ রিপোর্টার:

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সব ধরণের উত্তেজনা নিরসন কল্পে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন চলাকালে সাগরে বাংলাদেশী ট্রলার লক্ষ করে গুলি চালিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এতে ৭ বাংলাদেশী নিহত এবং আরো শতাধিক আহত হয়েছে।

সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় গতকাল বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে ৭ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে খবর প্রচার হয়। এতে আহত হয়েছেন আরো শতাধিক যাত্রী। এ ঘটনায় ট্রলারে থাকা ৩ শতাধিক যাত্রী সাগরে আটকা পড়ে। কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে সেন্টমার্টিন ঘাটে নিয়ে আসে।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ১০/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার মিয়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী পানিসীমায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সীমান্তজুড়ে মানুষের মাঝে আবারো ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। তবে সন্ধ্যা ৬টায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত টেকনাফ থানা পুলিশ অথবা কোস্টগার্ড হতাহতের নিশ্চিত জানাতে পারেনি। তবে হতাহতের বিষয় নিয়ে সরকারী সূত্রে নানা ধরণের বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। কখনো বলা হয়েছে যাত্রীরা নিজেরা মারামারি করে আহত হয়েছে আবার কখনো বলা হয়েছে যাত্রী এবং ট্রলারের মাঝি ও দালালদের মারামারিতে আহত হয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেন্টমার্টিনের নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তি পার্বত্যনিউজকে জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টার অংশ হিসাবে সরকার ঘটনাটির মোটিভ অন্যদিকে ঘুরাতে চেষ্টা করেছিল। 

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, তিন শতাধিক বাংলাদেশি মহেশখালী থেকে ট্রলারে করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন এখানে ছিল। ট্রলারটি সেন্টর্মাটিন থেকে ১০/১৫ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পৌছাঁ  মিয়ানমার বাহিনী ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে সাথে সাথেই পাঁচজন নিহত হয়। ট্রলারে থাকা যাত্রী নরসিংদীর মিঠুন মোবাইলে ফোনে জানান এই ঘটনা জানান। তবে নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় তিনি জানাতে পারেননি। মিথুন বলেন, ‘ভাইরে, দুইটা জাহাজ দেখতে পাইছি। জাহাজ দুটি আমাদের দিকে আগাইয়া আইতেছে। ভাই, ২০ জন লোক গুলি খাইয়া পড়ে আছে। পাঁচজন মইরা গেছে। আমরা সবাই অনেক ভয় পাইতেছি, আমাগো বাঁচান।’

মিঠুন দাসের মোবাইল কলের সূত্রধরে তার পরিবারের সদস্যরা জানান, সাড়ে তিনশ’ যাত্রী নিয়ে বড় আকারের ট্রলারটি মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার থেকে রওনা হয়। মিঠুনসহ যাত্রীরা সবাই অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ট্রলারটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়িয়ে আরো ১০/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি চিতা পাহাড়ের জলসীমা দিয়ে যাওয়ার সময় সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে অনবরত গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ ২০ জনের অবস্থাও বেশি ভালো না।

মিঠুন মোবাইল ফোনে আরো জানান, যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তারা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কারো গুলি লেগেছে পেটে, কারো হাতে, বুকে কিংবা পায়ে। আর যাদের মাথায় গুলি লেগেছে তারা ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। নিহতদের পরিচয় ও বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করলেও আতঙ্কে তার কথা বন্ধ হয়ে আসছিল।

যাত্রীরা জানান, তাদের ট্রলার লক্ষ করে বৃষ্টির মত গুলি ছোড়ে মিয়ানমার বাহিনী। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। তারা দীর্ঘক্ষণ আতঙ্কিত অবস্থায় সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় থাকার পর কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে সেন্টমার্টিন ঘাটে নিয়ে আসে।

অন্যদিকে, ট্রলারে গুলির বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ কোস্টগাডের স্টেশন কমান্ডার কাজী হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার সীমান্তে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশিদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে বিজিপি গুলি ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন নিহতের খবর শুনেছি।’ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, ঘটনাটি ঘটেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে প্রায় ১০/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার সমুদ্র জলসীমায়। সংবাদ পেয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সদস্যরা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, নৌবাহিনীর যে জাহাজটি সেন্টমার্টিনের অদূরে অবস্থান করছিল সেটি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সঙ্গে আরো কয়েকটি দেশি মাছধরা ট্রলার নিয়ে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে যায়।

এদিকে বাংলাদেশী যাত্রীদের উপর কারা গুলিবর্ষণ করেছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। একটি সূত্র দাবী করেছে বাংলাদেশী যাত্রীরা যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছে সেখানে বিজিপি ডেপ্লয়মেন্ট নেই। কাজেই তাদের উপর যারা গুলিবর্ষণ করেছে তারা হয় মিয়ানমারের নৌবাহিনী অথবা কোস্টগার্ড । 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন