রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রসাশনের নজরদারী প্রয়োজন

fec-image

সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি পদক্ষেপই এই মহামারীকে রুখে দিতে পারে।

খবরের পাতা উল্টালেই যে খবরটি অনিবার্য তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বিভিন্নভাবে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষে। এছাড়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, এমন কি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনা দেখে মনে হয় রাস্তার অলিতে-গলিতে, এছাড়া উচু নিচু পাহাড়ি রাস্তায় মৃত্যু যেন ওঁত পেতে বসে আছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকার পাতায় জেলা শহর ও দশটি উপজেলাসহ নানিয়ারচরেও ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা, সড়কের আইন মানতে নারাজ সিএনজি, বাইক চালকেরা।

এবিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে নানিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাব্বির রহমান জানিয়েছেন, মামলা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা আমারা প্রতিনিয়তই করছি কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের লাইসেন্সবিহীন ও অভিবাবক সচেতন না বাড়লে কোন কাজ হবে না।

খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি সড়কের মাঝপথে শনিবার (১২ জুন) সকালে  নানিয়ারচর বগাছড়িটি জয়েন্টে মোটরসাইকেল ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে, এতে চালক সহ আরোহী দুইজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন, বর্তমানে তাদেরকে নানিয়ারচর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- জ‍্যাকসন চাকমা (৩০) রাঙ্গামাটির বাসিন্দা, গৌরিকা চাকমা (২২) শিমুলতলী রাঙ্গামাটির বাসিন্দা, সজিব কর্মকার (৩৫) নানিয়ারচরের বাসিন্দা।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান এই বিষয়ে জানিয়েছেন, আমরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে উক্ত বিষয়টি নজরে এনে দ্রুত ব‍্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তিনি আরও জানান, প্রত‍্যেক অভিবাবক ও চালকদের আরও সচেতন হতে হবে এবং অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তানকে গাড়ি চালনা বন্ধ করতে নজরদারিতে রাখতে হবে। এই বিষয়ে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রাঙ্গামাটি এলাকাবাসী।

রাঙ্গামাটির স্থানীয় সূত্রে  জানিয়েছেন, গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং কে দায়ী করা করেন। পুলিশ রিপোর্টেও বলা হয় অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া গাড়ি দ্রুতবেগে ব্রিজে ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস অনেক রয়েছে।  রাঙ্গামাটির অধিকাংশ রাস্তাই অপ্রশস্ত। যার ফলে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এই রাস্তাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্ত নয়। ফলে এ দুটি পথেই দুর্ঘটনা ও হতাহত বেশি হয়। তাছাড়া দেশের সর্বত্র অপ্রশস্ত রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে চলছে।

পাহাড়ি এলাকায় ওভার লোডিংয়ের কারণেও চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার স্বীকার হন। গাড়ির চালকরা অনেক সময় গাড়ি চালানোকালে ফোনে কথা বলে, গান শোনে, ফলে অসতর্ক হয়ে পড়েন। এতে করেও গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আইন অমান্য, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া পাহাড়ি সড়ক পথে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে, কিন্তু এই বিশাল যানবাহন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে আনার মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি।

এছাড়াও ফিটনেস বিহীন যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন অপরিপক্ক চালক, সড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার, অবৈধ স্থাপনা, বিকল্প রাস্তার ব্যবহার না করে যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, যানবাহনে ব্যবহৃত তেলে ভেজাল এবং রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকার কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মকছুদ আহমেদ জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এর ফলে হঠাৎ করে বিপর্যয় নেমে আসে একটি পরিবারে। সেই শোক গোটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের বুকে শেলের মতো বিধে থাকে সারা জীবন। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সমাজ ও দেশ হারায় তার কৃতি সন্তানদের। এ দুর্ঘটনা অনেককে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।

  • বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং নিষিদ্ধকরণ। আর এ জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেয়া উচিত। ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
  • লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে। লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করতে হবে।
  • ফিটনেস, সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো প্রতিরোধ করতে হবে। পথচারীকে সতর্কভাবে চলাফেরা করা।
  • অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করা।
  • পাহাড়ি সড়ক-মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।
  • সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনের ভূমিকা আরও বেশি সক্রিয় করতে হবে।
  • প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা।
  • প্রতিটি গাড়ির চালককে স্মরণ রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
  • সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, গাড়ি চালক সমিতি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নানিয়ারচর, প্রসাশন, রাঙ্গামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন