আশ্রয়ণের স্বপ্নের ঘর পেয়ে দুর্গম পাহাড়ে আনন্দের বন্যা

রামগড়ে ৩৪৩ পরিবার পেয়েছে ঘর ও জমি, আরও ৭৮ পরিবার পাবে আজ

fec-image

দুর্গম পাহাড়ের ঢালু কিংবা পদদেশে বনের বাঁশ ও ছন দিয়ে তৈরি করা মাচাং ঘর কিংবা ঝুপড়িঘরে মাথাগোঁজতো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জুমিয়া পরিবারগুলো। ঐ পাহাড়েই জুমচাষের মাধ্যমে দুমুঠো মুখের অন্ন জোগাতো। জুমের ফসল তোলা শেষে নতুন কোন পাহাড়ে ঠাঁই খুঁজে নিতো তারা। এভাবেই যাযাবরেরমত বংশপরমপরা জীবন কাটতো ওদের। ভূমিহীন, গৃহহীন, স্থায়ী ঠিকানাবিহীন এসব অতিদ্ররিদ্র পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অসহায় মানুষগুলো এখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সেমি পাকা ঘর পেয়েছে, হয়েছে ভূমির রেকর্ডীয় মালিক।এমন প্রাপ্তি কোন দিন স্বপ্নেও ভাবেনি দুর্গম পাহাড়ের এসব অবহেলিত জনগোষ্ঠী। তিন পার্বত্য জেলার অন্যান্য স্থানের মত খাগড়াছড়ির রামগড়ের দুর্গম-প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ২০০টি গৃহহীন ও ভূমিহীন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিনামূল্যে সেমিপাকা ঘর ও জায়গা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলই) এ উপজেলায় আরও ৩৮ টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী পরিবার পাবেন আশ্রয়ণের এ ঘর ও জায়গা। উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ডাক বাংলাপাড়ায় উঁচু পাহাড়ের ঢালে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০০ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষ বিশিষ্ট লাল রংয়ের ঢেউটিনের ছাল আর হলদে রংয়ের দেয়ালের দৃস্টিনন্দন ৮টি সেমি পাকাঘর। উপজেলা সদর হতে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরবর্তী প্রত্যন্ত ঐ ডাকবাংলা এলাকার সবুজ পাহাড়ের কোলে সারিবদ্ধ রঙ্গীন ঘরগুলো দূর থেকে দেখে মনে হয় শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা একখন্ড ছবি। বুধবার উপজেলার সর্বশেষ ৭৮টি গৃহের সাথে এ ৮টি ঘরও হস্তান্তর করা হবে। ৮টি ভূমিহীন হতদরিদ্র ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী পরিবার জায়গাসহ এ ঘরগুলোর মালিক হবেন। নব্বইর দশকের ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী চন্দ্র রানী ত্রিপুরা এমন সুন্দর একটি ঘর পাবেন এ আনন্দে আপ্লুত। পাশের আরেক পাহাড়ের ঢালুতে বাঁশ-ছনের ঝুপড়িতে স্বামী ও দুই ছোট ছেলে নিয়ে বাস করেন তিনি।এখানে বৃষ্টির পানিতে ভিজে, গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ আর শীতে কনকনে ঠান্ডায় অতিকস্টে দিনাতিপাত করতেন জুম শ্রমিক এ পরিবারটি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্বপ্নের একখন্ড জমি আর সুন্দর একটি সেমি পাকা ঘর তাদের এতদিনের কস্ট দূর করে দেবে। পাবেন একটি স্থায়ী ঠিকানা। বৃদ্ধা চন্দ্র রানী বলেন, জুম চাষ কিংবা দিনমজুরি করে মুখের আহার জুগিয়ে এবার অন্তত: নিজের একটি নিরাপদ ঘরে নিশ্চিন্তে বাস করতে পারবো। রামগড় ইউনিয়নের অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম গুঁজাপাড়ার মানল²ী ত্রিপুরা ,লালছড়ির মোমো মারমা, অন্তু পাড়ার আ¤্রা মগ, বাজার চৌধুরিপাড়ার খোঁজা অং মারমা, দাতারামপাড়ার সাবিত্রি ত্রিপুরাসহ আশ্রয়ণের ঘর পাওয়া সকলেই এমন আবেগ আর আনন্দ মেশানো মন্তব্য করেছেন। ঘর আর জমি পেয়ে মহাখুশি অসহায় বাঙ্গালি পরিবারগুলোও।

রামগড় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. নজরুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প -২ এর আওতায় রামগড়ে মোট ৩৪৩টি পরিবারের কাছে গৃহ ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে রামগড় ইউনিয়নে ১৭৭, পাতাছড়ায় ১৩৬ ও রামগড় পৌরসভায় ৩০টি পরিবার এ সুবিধা পেয়েছেন। ৩৪৩ টি উপকার ভোগি পরিবারের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ১৯২ ও বাঙালি পরিবার ১৫১টি। তৃতীয় পর্যায়ের ২য় ধাপে বুধবার(২১ জুলাই) আরও ৭৮টি পরিবারের কাছে গৃহ ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হবে। এরমধ্যে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী পরিবার রয়েছে ৩৮টি ও বাঙালি পরিবার ৪০টি।

রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত বলেন, সরেজমিনে যাচাই-বাচাই করে প্রকৃত গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার শনাক্ত করে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি দেয়া হচ্ছে। উপযুক্ততার ভিত্তিতে এখানে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ও বাঙ্গালি সকলেই সমানভাবে এ সুবিধা পাচ্ছেন। গৃহ নির্মাণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বুধবার তৃতীয় পর্যায়ে ২য় ধাপে আরও ৭৮টি পরিবারের কাছে ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হবে। উপাতীয় শরণার্থী পুনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের মাননীয় চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করবেন। রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী বলেন, গৃহ ও ভূমিহীন অসহায় পরিবারদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের এ প্রকল্পের মুজিববর্ষের উপহারের ঘর ও জমি পেয়ে সমতল জেলার মত পাহাড়েও আনন্দের বন্যা বইছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ঘর, জমি, পরিবার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন