রামুতে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীর পরিবারকে হুমকির অভিযোগ

ramu pic press conference 31.05

 নিজস্ব প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের রামুতে কলেজ ছাত্র আবু সায়েম হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিহত ছাত্রের পরিবার। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় রামু প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসে নিহত আবু সায়েমের বাবা মাসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সংবাদ সম্মেলনে রামু উপজেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নের পূর্ব মেরংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা সায়েমের পিতা ছাবের আহমদ জানান, তার ছেলে কক্সবাজার সরকারি কলেজের এইসএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র আবু সায়েম (১৯) কে এলাকার একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী গত ৯মে কুপিয়ে ও লাটি-সোটা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। হামলার শিকার আবু সায়েম চিকিৎসাধিন অবস্থায় গত ১৫মে চট্টগ্রামের একটি ক্লিনিকে মারা যান।

তিনি আরো জানান, এ হামলার পর তিনি গত ১১ মে রামু থানায় নাম উল্লেখপূর্বক ৮ জন এবং অজ্ঞাত আরো ২ থেকে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করি। রামু থানার মামলা নং ২০। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, মনোয়ার হোসাইনের ছেলে রবিউল হোসাইন প্রকাশ বাবু, মোহাম্মদ নবীর ছেলে রবিউল হোসেন প্রকাশ রবিন, কবির আহমদ প্রকাশ কালা মনুর ছেলে আবদুর রহিম, নুরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ হারুন, মৃত মোজাম্মেল হোছাইনের ছেলে মনোয়ার হোসাইন, ছিদ্দিক আহমদ ফকিরের ছেলে মোহাম্মদ নবী, মৃত শামসুল আলমের ছেলে কবির আহমদ প্রকাশ কালা মনু ও কবির ফকিরের ছেলে নুরুল ইসলাম। অভিযুক্তরা সবাই রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের পূর্ব মেরংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, আবু সায়েমের মৃত্যুর পর থেকে হামলাকারিরা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার দিন (৯মে) রাতে অন্যতম আসামী মনোয়ার হোসেন এবং সায়েমের মৃত্যুর ৫দিন পর গত ২০ মে ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর দাতমাড়া এলাকা থেকে হত্যা মামলার প্রধান আসামী রবিউল হোসাইন বাবুকে (১৯) গ্রেফতার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে আবু সায়েম এর পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ০৮ মে মেরংলোয়া গ্রামের খোমেনী স্টোর নামের একটি চায়ের দোকানে নাস্তা করে ইচ্ছে করে বিল কম দিয়ে দোকানীকে ঠকাচ্ছিলো সায়েমের কয়েকজন বন্ধু। দোকানে প্রকাশ্যে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন সায়েম।

এরই জের ধরে ক্ষুব্দ বন্ধুরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। পরিকল্পনা অনুয়ায়ি পরদিন ৯মে বিকালে গ্রামে ক্রিকেট খেলায় আবু সায়েম এর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় রবিউল হাসান বাবু, আবদুর রহিম, রবিউল হাসান রবিন সহ আরো কয়েকজন বন্ধু। এ ঝগড়ার জের ধরে খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পথে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আবু সায়েমের গতিরোধ করে।

এ সময় মোহাম্মদ নবীর উপস্থিতিতে অন্যান্য অভিযুক্তরা আবু সায়েমের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করতে থাকে। হামলাকারিদের মধ্যে রবিউল হাসান বাবু বলেন ছক্কা মারছি বলে ব্যাট দিয়ে সায়েম এর মাথায় আঘাত করলে রবিউল হাসান রবিনও ‘আমি চার মারবো’ বলে একই কায়দায় সায়েম এর মাথায় আঘাত করে। এভাবে আরো কয়েকজন তাকে হামলা করলে সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় হামলাকারিরা সায়েমকে মৃত ভেবে পূর্ব মেরংলোয়া মসজিদের পাশে ফেলে চলে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, এ হত্যার ঘটনার হুকুমদাতা ও অন্যতম আসামী মোহাম্মদ নবী মামলা দায়েরের পর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা আবু সায়েমের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকী ধমকি দিয়ে যাচ্ছে।

অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার না করলে ছাবের আহমদের পরিবারের যেসব সদস্য বেঁচে আছে তাদেরও হত্যা করবে বলে হুমকী দিচ্ছে। হুমকীদাতারা বলে বেড়াচ্ছেন, ফাঁসি যখন হবে তখন একটা নয় পরিবারের সবাইকে হত্যা করেই ফাঁসিতে ঝুলবো। হুমকীদাতারা মোহাম্মদ নবীকে আশ্রয় পশ্রয় দিচ্ছে এবং তাদের সাথে মোহাম্মদ নবীর নিয়মিত যোগাযোগও রয়েছে।

আবু সায়েমের বাবা ছাবের আহমদ আরো জানান, তিন ছেলের মধ্যে আবু সায়েম ছিলো তৃতীয়। বড় ছেলে মোহাম্মদ ইউনুচ মিয়া সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট এবং মেঝ ছেলে মোহাম্মদ মাহবুব আলম সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বড় দুই ছেলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকায় তার বাড়িতে এখন আর কোন সন্তান নেই। এ কারণে মামলায় অভিযুক্তদের হুমকী-ধমকিতে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আবার হত্যা মামলার কয়েকজন আসামী গোপনে দেশত্যাগের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাবের আহমদ তার সন্তানকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের হুমকী-ধমকী বন্ধে এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানান।

সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের শিকার আবু সায়েমে বাবা ছাবের আহমদ, মা সবজ বাহার, বোন উম্মে হাবিবা, বড় ভাই মোহাম্মদ মাহবুব আলম সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং রামুর কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য আবু সায়েম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধিন থাকাকালে মেরংলোয়া সহ আশপাশের গ্রামের শতশত জনতা এ ঘটনার প্রতিবাদে রামু চৌমুহনী স্টেশন, উপজেলা পরিষদ, বাইপাস সহ বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায় এবং জড়িতদের শাস্তি দাবি করে। সে কক্সবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হওয়ায় সর্বস্তুরের ছাত্ররা এসব কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন