সবুজ পাহাড়ের আতঙ্ক উগ্রবাদী কুকি-চিন, দুর্বিষহ দিনাতিপাত স্থানীয়দের

fec-image

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। গত কয়েক মাসে হয়ে উঠেছে পাহাড়ের আতঙ্ক। উগ্রবাদী সংগঠনটির ভয়াল থাবায় অশান্ত বাংলাদেশের পর্যটনের স্বর্গখ্যাত বান্দরবান। জৌলুস হারিয়েছে বেশ কিছু পাহাড়। এলাকাছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বহু মানুষ। নিজেদের মুক্তিকামী দাবি করা এ সংগঠন শুধু নিজেদের আন্দোলন নিয়ে থেমে নেই। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে করছে সহযোগিতা। গোয়েন্দারা এ তথ্য প্রকাশ্যে আনলে শুরু হয় অভিযান। এসময় প্রাণ দিয়েছেন কয়েকজন সেনাসদস্য। টানা অভিযানে ধরা পড়েছেন বেশ কয়েকজন জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্য। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ। এক পাহাড় সন্ত্রাসমুক্ত করতেই আরেক পাহাড়ে আস্তানা গাড়ছেন তারা।

পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জন্য অশান্তি ডেকে নিয়ে এসেছে উগ্রবাদী সংগঠনটি। তাদের অত্যাচারে রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নের সাধারণ বাসিন্দারা বাধ্য হয়েছেন বাড়ি-ঘর ছাড়তে। নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এখন সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে। সবুজ পাহাড়ের জীব ও প্রাণিবৈচিত্র্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বড় বড় গাছ কেটে ফেলেছে তারা। প্রায় সব ধরনের প্রাণী নেই বললেই চলে।

স্থানীয়রা মনে করছেন, পাহাড় সন্ত্রাসমুক্ত করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা প্রয়োজন। সাধারণ বাসিন্দাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পর্যটনের স্বর্গ বান্দরবানে এ অবস্থা চলতে থাকলে ধস নামবে এখানকার অর্থনীতিতে।

স্থানীয় অধিবাসী ও পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় আট মাস আগে গত বছরের ১৭ অক্টোবর পর্যটকদের রুমা ও রোয়াংছড়ি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর ছয়দিনের মাথায় নিষিদ্ধ করা হয় থানচি ও আলীকদম ভ্রমণ। ৮ নভেম্বর আলীকদমের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও অন্য তিন উপজেলায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এখনো বহাল। পর্যটননির্ভর এসব অঞ্চলের মানুষ দিনাতিপাত করছে চরম কষ্টে।

কারা এই কেএনএফ?
কেএনএফ মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানকেন্দ্রিক আঞ্চলিক সংগঠন। পার্বত্য তিন জেলার প্রায় অর্ধেক আয়তনের অঞ্চল তথা লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি, বরকলসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে একটি মনগড়া মানচিত্র তৈরি করেছে। যে মানচিত্রের তিনদিকে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত। এই মানচিত্রকে প্রস্তাবিত হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সীমানা, জেলা ও উপজেলা সীমানা নির্ধারণ করেছে তারা।

সংগঠনের লোগোতে প্রতিষ্ঠাকাল ২০০৮ সাল বলে উল্লেখ থাকলেও মূলত ২০১৮ সালের পর থেকে সশস্ত্র কাঠামোয় মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। কেএনএফের প্রধান নাথান বম ২০১৮ সালে বান্দরবান থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

কেএনএফের উদ্দেশ্য
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূখণ্ড নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করতে চায় কেএনএফ। এর সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) মনে করে, পাহাড়ের নয়টি উপজেলা তাদের পূর্বপুরুষদের আদিম নিবাস। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে এবং এই ভূমি দখল করে নেয়। জেএসএসসহ অন্য সংগঠনগুলো তাদের ভূমি ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুমসহ নিরীহ মানুষদের ভীতির মধ্যে রেখেছে। তাই তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে এ সংগঠনের সৃষ্টি।

সরেজমিনে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড় ঘুরে দেখা যায়, অশান্ত পাহাড়কে শান্ত রাখতে কয়েকমাস ধরে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব অভিযান চালাচ্ছে। এতে কিছুটা পিছু হটলেও কেএনএফ সদস্যরা লুকিয়ে ও ছন্নছাড়া হয়ে একাধিক পাহাড়ে অবস্থান করছেন। তবে অভিযান পরিচালনাকারীদের ভোগাচ্ছে কেএনএফের পুঁতে রাখা শক্তিশালী বোমা ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত কার্যক্রমের পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানবিক সহযোগিতা করতে গিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে পুঁতে রাখা এই আইইডির বিস্ফোরণে এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য।

গত ১২ মার্চ বান্দরবানের রোয়াংছড়ির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অতর্কিত গুলিবর্ষণে নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন। আহত হন দুই সেনাসদস্য। গত মে মাসের ১৬ তারিখ রুমা উপজেলার জারুলছড়িপাড়ায় কুকি-চিনের শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ও অতর্কিত গুলিবর্ষণে সেনাবাহিনীর দুজন সৈনিক নিহত ও দুই কর্মকর্তা আহত হন। সবশেষ ১৬ জুন দুপুর দেড়টার দিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলার ছিলোপিপাড়ায় বিস্ফোরণে মোন্নাফ হোসেন রাজু (২১) নামে একজন সেনাসদস্য নিহত হন। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করতে গিয়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিক্ষিপ্তভাবে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে মারা যান তিনি।

কেএনএফ শুধু জঙ্গি প্রশিক্ষণ, সাধারণ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অত্যাচার করছে না, তারা সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রতিহত করার জন্য সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের অপহরণের পর মুক্তিপণও দাবি করছে। পাহাড়ি অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নির্মেয়মাণ বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রতিহত করতে সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি ও পরে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয় কেএনএফ। এমনকি শ্রমিক অপহরণ করে মুক্তিপণও আদায় করে পাহাড়ি উগ্রবাদী এ গোষ্ঠী।

থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কারণে পাহাড়ে থমকে আছে উন্নয়নকাজ। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে স্থানীয়রা অসহায়ভাবে দিন যাপন করছে। আর্থিক সংকটে পড়েছেন দোকানদার, গাড়িচালক ও পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সবাই। সব মিলিয়ে কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে থমকে আছে বান্দরবানের জনজীবন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, নতুন জঙ্গি সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষক, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে বাধা, অপহরণ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের হতাহতের কারণে পাহাড়ে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করা প্রয়োজন।

পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করা একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত কয়েক মাসে টানা অভিযানে কেএনএফের ৩০ জনের বেশি সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। তবে বাকি সদস্য এখনো অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ধরতে শিগগির বিশেষ অভিযান শুরু হতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেনাবাহিনীর টহল টিমে হামলা, টাকার জন্য পাহাড়িদের অপহরণ, এতে ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেক পাহাড়ি। প্রতিনিয়ত এসব চললেও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না স্থানীয় বাসিন্দারা। সব সময় ভয়ে থাকেন থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বাসিন্দারা।

কেএনএফের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কার্যক্রমের নিয়মিত আপডেট তারা ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে দেয়। ফেসবুকে তাদের সদস্যদের ইউনিফর্ম পরা ছবি দিলেও মুখ ঘোলা করে দেওয়া হয়। এক সময় জঙ্গি সংগঠন হুজির পাহাড়ে আস্তানা গাড়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছিল। আফগানফেরতদের এই দল গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গাদের পক্ষ নিয়ে লড়াইয়ে অংশ নেওয়া।

কেএনএফ এরই মধ্যে নিজস্ব পতাকাও বানিয়েছে। তৈরি করেছে মনগড়া মানচিত্র। আলাদা রাজ্য বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে প্রশিক্ষিত নিজস্ব বাহিনী, যাদের দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ। রয়েছে আলাদা ইউনিফর্ম, র‌্যাংকভিত্তিক আলাদা আলাদা ব্যাচ। ইউনিফর্মধারীদের হাতে রয়েছে তাদের নিজস্ব পতাকা।

এরই মধ্যেই তারা তাদের ‘সামর্থ্য’ দেখিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) ওপর হামলা চালিয়েছে। বলা হচ্ছে, কেএনএফ জেএসএসের প্রতিপক্ষ একটি দল। সম্প্রতি হামলা চালিয়ে এক জেএসএসের নেতাকে হত্যা করে কেএনএফ।

কেএনএফের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া তাদের বাছাই করা তরুণদের ছোট ছোট গ্রুপে সিনিয়র সদস্যের হেফাজতে রাখে। যেসব বাড়িতে রাখা হয়, সেটাকে তারা আনসার হাউজ (সাহায্যকারীর বাড়ি) বলে। এরপর চরাঞ্চলে শারীরিক কসরতসহ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে উত্তীর্ণদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় বান্দরবানে কেএনএফের ক্যাম্পে। কেএনএফের ক্যাম্পে এই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শুরু হয় গত বছরের শুরুতে। সেখানে একে-৪৭ রাইফেল, পিস্তল ও কাটা বন্দুক চালানো, বোমা (আইইডি) তৈরি এবং চোরাগোপ্তা হামলার (অ্যাম্বুশ) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মূলত টাকার বিনিময়ে কেএনএফের সদস্যরা জামাতুল আনসারের সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়।

যা বলছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা
থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মার্মা বলেন, কেএনএফের কারণে ট্যুরিস্ট থেকে শুরু করে যত ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল সবকিছু প্রায় বন্ধ। চান্দের গাড়ি, গাইড, হোটেল মালিক-শ্রমিক ও বোট চালকরা চরম বিপাকে। থানচি হয়ে সীমান্ত সড়কের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালানোর ফলে কেএনএফ কাজে বাধা দিয়েছিল, তবে সড়কের কাজ আবারও শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ইউনিয়নের সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম থেকে কুকি-চিন ভারী অস্ত্র-গোলাবারুদ পাচ্ছে। না হলে তারা পাহাড়ে টিকে থাকতে পারতো না। কুকি-চিন ফেসবুকে নিয়মিত আপডেট দেয়। তারা মনগড়া একটি লোগো, ম্যাপ ও জাতীয় সংগীত রচনা করেছে। ফেসবুকে তাদের ইউনিফর্মে ট্রেনিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ভিডিও আপলোড ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। তারা সাধারণ পাহাড়িদের ভয়ে রাখতে চায়। তিনি বলেন, কুকি-চিন শুধু বান্দরবান নয়, পুরো দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। সেখান থেকে আলাদা একটি রাষ্ট্র চায় জঙ্গি স্বপ্ন।

রুমা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মার্মা বলেন, ট্যুরিস্ট না থাকায় সংশ্লিষ্টরা দিনমজুর ও হালচাষ করে খুব কষ্টে সংসার চালাচ্ছে। রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নে সিংহভাগ বসবাস করছে বমরা। অন্য জাতিরও কিছু মানুষ রয়েছে। রেমাক্রীপ্রাংসায় একেক পাড়ায় ৫০ পরিবারের বাস। গোলাগুলি ও কুকি-চিনের ভয়ে প্রতি পাড়া থেকে প্রায় ২০টির মতো পরিবার পাহাড় ছেড়ে নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে।

যা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ ও অবস্থান সম্পর্কে যখন তথ্য পাই তখন দেখা যায়, কুকি-চিন নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ, রসদ, অস্ত্র সরবরাহ, বোমা তৈরির সরঞ্জমাদি এমনকি বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির জন্য কাজ করা বাহিনী এবং গোয়ন্দা শাখাকে নিয়ে র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে।

‘এরই মধ্যে দেশমাতৃকার কাজ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন চারজন সেনাসদস্য। অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৭৫ জন ও কুকি-চিনের দাওয়াতি শাখা, মিডিয়া শাখা এবং সামরিক শাখার প্রধানসহ প্রায় ১৭ জন সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ে অভিযানে বেশকিছু ভারী অস্ত্র, আইইডি ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা শান্তি প্রতিষ্ঠা, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং এখনো শান্তি বিরাজে কাজ করছেন তাদের জিম্মি করছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এমনকি অপহরণের পর জিম্মি করে অর্থ আত্মসাৎ করছে কুকি বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উন্নয়নে যারা কাজ করছেন তাদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা ও আইইডি বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে কেএনএফ।’

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা অস্থিরতা তৈরি করছে, দেশের ভূখণ্ডে যারা আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। যারা এ ধরনের নাশকতা-সহিংসতা করছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ চলমান।’

কেএনএফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের এখনো আইনের আওতায় আনা যায়নি। তবে তারা যে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সেই থেকে ধারণা করা যায় দেশের অভ্যন্তরে কোনো নাশকতার পরিকল্পনা তাদের ছিল জঙ্গিদের মাধ্যমে।’

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদমে পর্যটক ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তিন উপজেলায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে তা এখনো বহাল। বাকি চার উপজেলা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।’

গবেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. বায়োজিদ সরোয়ার বলেন, ‘পাহাড়ি উগ্রবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে দেশের বাইরের কোনো গ্রুপ বা গোষ্ঠী ইন্ধন দিতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী দল, আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানকারী থেকে কুকি-চিন এসব অস্ত্র সরঞ্জমাদি পাচ্ছে। এ অঞ্চলে গত বছরের অক্টোবর থেকে কয়েক মাসব্যাপী র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করছে। সূত্র: জাগো নিউজ

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কুকি-চিন, পাহাড়, বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন