১১ শিশু-কিশোরী উদ্ধার ও ধর্ষণ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

পিসিপির অভিযোগ উদ্ধারকৃত শিক্ষার্থীদের জোর করে স্বীকারোক্তি নেয়া হচ্ছে: অভিযোগ অস্বীকার করলেন পাচার হওয়া তরুনী পাই নু চিং পিতা মং প্রু হ্লা

Untitled-1

স্টাফ রিপোর্টার:
উদ্ধার হওয়া বান্দরবানে ১১ শিশুর ডাক্তারী পরিক্ষা, পুলিশের হয়রানী এবং শিক্ষার নামে বিদেশে নারী পাচার বন্ধ করার দাবীতে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেছে দু-পক্ষ।

মঙ্গলবার সকালে প্রেসক্লাব চত্ত্বরে মিয়ানমার থেকে উদ্ধার হওয়া ১১ শিশু কিশোরীর পুলিশ হেফাজতে ডাক্তারী পরীক্ষা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বানববন্ধন ও সমাবেশ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ব্যানারে সমাবেশ ও মানববন্ধন বান্দরবান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি)র জেলা সভাপতি উবাসিং মারমা সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি নুশৈমং মারমা, সাধারণ সম্পাদক অজিত তংচংঙ্গ্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক উসাইমং মারমা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, মিয়ানমার থেকে ফিরিয়ে আনা ১১ শিশু কিশোরীকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যার পর ডিবি পুলিশ হেফাজতে রাখা ১১ শিশু কিশোরীকে জোরপূর্বক স্বাক্ষ্য আদায়ের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১১ শিশু কিশোরীকে তাদের অভিবাবকের কাছে হস্তান্তরের দাবী জানান। একই সাথে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবী ও পুলিশের আচরণ নিয়ে তীব্র নিন্দা ও জানান বক্তারা।

অন্যদিকে বান্দরবান সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী ও পাচার হওয়া অভিবাবকরা শিক্ষার নামে বিদেশে নারী পাচার বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন করেছে।

বান্দরবানের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক ছাত্রছাত্রী ও ১১ শিশুর অভিবাবকরা বৌদ্ধ ভিক্ষু উসরির শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। মানববন্ধনে রুবেল কান্তি দাশ, উবা হাই মারমা, এন.এইচ বাবলু, পাচার হওয়া তরুনী পাই নু চিং পিতা মং প্রু হ্লা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মং প্রু হ্লা সাংবাদিকদের বলেন, তার মেয়ে পুলিশি হয়রানী কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়নি। পুলিশ ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের চেষ্টা করছে। আমি দোষি ব্যক্তিদের শাস্তি চাই এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল কার্যক্রম শেষ করে মেয়েকে সুস্থ করে বাড়ী নিয়ে যেতে চাই।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, তিন পার্বত্য জেলা জেলা ধর্মীয় ও শিক্ষার নামে অসংখ্য নারীকে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে একটি চক্র। এই চক্রটির মুখোশ উন্মোচন হতে শুরু করায় একটি পক্ষ নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ১১ শিশু-কিশোরীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বন্ধ করতে চক্রটি নানা কৌশল অবলম্বন করে বিষয়টি ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বান্দরবান থেকে যেন আর কোন নারী শিক্ষার নামে বিদেশে পাচার না হয় সে বিষয়ে প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল হতে এবং এ ঘটনায় দোষি ব্যাক্তিদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান বক্তারা।

মঙ্গলবার সকালে প্রেস ক্লাব চত্ত্বরে দু-পক্ষ পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের প্রক্রিয়া শরু করে। অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকায় পুলিশ ১১টায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং বেলা ১২টায় কলেজ শিক্ষার্থী ও ১১ শিশুর অভিভাবকদের মানববন্ধন করার অনুমতি দেয়।

এদিকে সোমবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে আদালতের নির্দেশে পাঁচ সদস্যর মেডিকেল টিম ১১শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ও আলামাত সংগ্রহ করেছে। তাদের বয়স ও গর্ভবর্তী হয়েছে কিনা তা আরো অধিকতর পরিক্ষার জন্য পুলিশ হেফাজতে ৮ শিশুকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তিন শিশুকে অভিবাবকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ মিয়ানমারের মন্ডু শহরতলীর কাছে নেইসাদা এলাকার একটি আশ্রম থেকে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির ১১ মারমা কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। এদের গত ফেব্রুয়ারী মাসে বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নেওয়ার কথা বলে মিয়ানমারে পাচার করে দেয় একটি চক্র।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন