৮ বছরেও ধরা পড়েনি রাঙামাটির সাংবাদিক জামাল হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা

Jaml-2 copyস্টাফ রিপোর্টার:

৮ বছরেও ধরা পড়ে নি রাঙামাটির তরুণ সাংবাদিক জামাল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা। কোন রহস্য উদঘাটন হয় নি এ হত্যাকাণ্ডের। জানা যায় নি কে বা কারা সাংবাদিক জামাল হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা।  ২০০৭ সালে এই দিনে সাংবাদিক জামাল উদ্দীন নিখোঁজ হওয়ার এক দিন পর ৬ মার্চ বিকাল ৪টায় রাঙামাটি পর্যটন এলাকার হেডম্যান পাড়ার পাহাড়ের একটি গাছের নীচ থেকে উপুড় অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জামাল উদ্দিন খুন হয়েছে এটা ছিল নিশ্চিত। তার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেও সেটা নিশ্চিত করা হয়।

জামাল হত্যা মামলার বাদী পক্ষের উকিল অ্যাডভোকেট মুকতার আহমেদ জানান, রাঙামাটি চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোটে জামাল হত্যাণ্ডের মামলাটি প্রথমে পুলিশ তদন্ত করে ২২/০৪/০৮ সালে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে জামালের পরিবার নারাজীর আবেদন করার পর পুনরায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকার্তা জেলা গোয়েন্দা শাখাকে অধিকতর তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেলা গোয়েন্দা শাখার তদন্ত শেষে ০৭/০৩/১০ইং পুনরায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। তার পরেও জামালের পরিবার পুনরায় নারাজী দিলে ০৯/০৫/১০সালে বিজ্ঞ আদালত পুনরায় অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশের নিকট দেয়। সিআইডির তদন্তের শেষে মামলাটির তিনটি সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। তার পরেও জামাল হত্যাকাণ্ডের কোন ভিত্তি খুঁজে পায় নি তদন্ত কর্মকর্তারা। চূড়ান্ত রিপোর্টের পর মামলাটির আর কোন ভিত্তি নাই বলে মামলাটি নথিজাত করা হয় এবং আসামীদেরকে মামলার দায় হতে অব্যহতি প্রদান করা হয়। ২০১১ সালে মরহুম জামালে বড় ভাই বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালতে আপিল করে। মামলা নং ৮/১১। জামাল হত্যা মামলাটি বর্তমানে মামলা দিন রয়েছে।

সাংবাদিক মো. জামাল এর ছোট বোন সাংবাদিক ফাতেমা জান্নাত মুমু জানান, দীর্ঘ বছর পার হলেও আমার ভাইজান সাংবাদিক জামাল হত্যাকাণ্ডের কোন রহস্য উদঘাটন হয় নি। এতে পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তারও ব্যর্থ হয়েছেন। সাংবাদিকতার মতো একটি মহৎ পেশায় থাকার পরও আমার ভাইজানের এরকম মর্মান্তিক মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারি না। যখন পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে তখন যে আঘাতের চিহ্নর কথা সুরতহাল রিপোটে উল্লেখ করেছেন, তাতেই কিন্তু প্রমাণ হয় তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও কেন প্রশাসন সেই খুনিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তিনি সরকারের কাছে তার ভাই জামাল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত খুনিদের গ্রেফতার দাবী জানান।

rangamati Jamal pic01 copyএদিকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে রাঙামাটির শহীদ সাংবাদিক মো. জামাল উদ্দীনের ৮ম শাহাদাৎ বার্ষিকী। এ উপলক্ষে তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি আয়োজন করেন। শুক্রবার দুপুরে শহীদ সাংবাদিক জামালের জন্য শহরের কাঠালতলী জামে মসজিদ, বনরূপা জামে মসজিদে দোয়া, ফাতেহা, মিলাদা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে বনরূপা কবরস্থানে জামালের কবরে ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে জিয়ারত করে তার পরিবারের সদস্যরা।

এসময় সাংবাদিক জামালের ছোট বোন রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সাংবাদিক) ফাতেমা জান্নাত মুমু, বড় ভাই মো. সালাউদ্দীন করিম আবু, মেজভাই মো. কামার উদ্দীন আকাশ, ছোট ভাই মো. জাবেদ উদ্দীন ও বোন মহুয়া জান্নাত মণি উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৫মার্চ জামালের নিজ বাস ভবনে দোয়া, ফাতেহা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া ৭মার্চ শনিবার সকাল ১০টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সকল সাংবাদিকদের ব্যানারে সর্বস্থরের জন সাধারণের অংশগ্রহণে জামাল হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, জামাল উদ্দীন দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিল। তিনি মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত পুরো ১০বছর পেশাগত কাজে দক্ষতার ছাপ রেখে ছিলেন। পেশাগত জীবনে জামাল উদ্দীন বেসরকারী টেলিভিশন এনটিভি’র রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচার বহুল দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকায় প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্তা সংস্থা আবাস, দৈনিক বর্তমান বাংলা ও দৈনিক করতোয়ায় কাজ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন