উখিয়ার উপকূলে বাড়ছে শিশুশ্রম

fec-image

যে বয়সে ছেলেমেয়েরা শিশুরা বই খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, যে বয়সে অবসর সময়ে মাঠ মাতিয়ে খেলাধুলা করার কথা সে বয়সে তারা বিভিন্ন শ্রমের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এসব শিশু এক সময় লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত ছিল। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতি রোগ করোনাভাইরাস থেকে শিশুদের রক্ষায় সরকার বাধ্য হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রেখেছে। বড়রা যে কোনভাবে পড়ালেখা ম্যানেজ করতে পারলেও শিশুরা তা পারছে না। দীর্ঘ ছুটি পেয়ে অনেকেই শুটকি পল্লী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দিকে শ্রমের কাজে জড়িয়ে পড়ছে। কাজ করে হাতে টাকা পেয়ে শিশুরা খুশি।

যেসব শিশু কাজের বিনিময়ে টাকা আয় করছে তারা ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরবে কিনা এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। অভিভাবকরা যদিও বলছেন তাদের ছেলে মেয়েরা স্কুল খুললে নিয়মিত পড়ালেখা করবে। শিক্ষকরাও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা বাড়তে পারে।

উখিয়ার উপকূলীয় জনপদ সোনারপাড়া, নিদানিয়া, ইনানী, মাদারবনিয়া, চোয়াংখালী, মনখালী, শাপলাপুর, বাহারছড়াসহ বেশ কিছু সমুদ্র উপকূলীয় গ্রাম ঘুরে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকে উপকূলের সাথে উখিয়া উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বিধায় এখানকার পরিবারগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবাসহ সম্পূর্ণ নাগরিক সেবা বঞ্চিত ছিল। এলজিইডি সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি কক্সবাজারের দৃশ্যমান সড়ক মেরিন ড্রাইভের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় এখানে স্কুল কলেজসহ নানা রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উপকূলে মাদারবনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি গড়ে উঠার ফলে এলাকার উপজাতি থেকে শুরু করে জেলে পরিবারে শিক্ষার ছোঁয়া লেগেছে। মাদারবনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার আহমদ জানান, করোনা ভাইরাসের দীর্ঘ ছুটির কারণে তার স্কুলে প্রভাব পড়েছে। ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন শ্রমের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা আশংকাজনক বাড়তে পারে। কেননা এসব শিশু রুজি-রোজগারে হাতে কড়ি পেয়ে পড়ালেখার কথা বেমালুম ভুলে গেছে। এ শিশুদের আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকদের ও অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।

জালিয়াপালং বাদামতলী ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগর, মনির, জাবেদ ও সেলিম নামের ৪ জন শিশু মাছ ধরছে। তাদের বয়স ১১ থেকে ১৩ বছর। জানতে চাইলে তারা লেখাপড়া করে কিনা, জবাবে বলল তারা সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। স্কুল বন্ধ থাকায় খালে মাছ ধরে দৈনিক ২০০/৩০০ টাকা করে আয় করছে। তারা বলে, সমুদ্র থেকে মাছ ধরার নৌকা ভিড়লে তারা সেখান থেকে মাছ কিনে বাজারে বিক্রি করে। স্কুল খুললে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বললেন, আর কি স্কুলে যাব, এখানেতো দিনে ৪/৫শত টাকা রোজগার করা যায়।

চোয়াংখালী শুটকি পল্লিতে কাজ করছে নছিমা, আয়েশা, রহিম, শহিদসহ প্রায় ৭/৮ জন ছেলে-মেয়ে। এরা সবাই চোয়াংকালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুল বন্ধ থাকায় তারা এখানে কাজের বিনিময়ে দৈনিক দুইশত টাকা করে আয় করার কথা জানায়। স্কুল খুললে আবার পড়ালেখা শুরু করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দেয়।

উখিয়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পাতাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম কামাল উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারির কারণে অনেক পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অর্থ সংকটে ভুগছেন তারা। ফলে বাড়তি আয়ের জন্য সন্তানদের কাজে লাগিয়েছেন তারা। এভাবে শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ার আশংকা রয়েছে।

উখিয়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বছরজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সারাদেশে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়ে গেছে। শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে নিরসনে তৎপর উপজেলা প্রশাসন। অচিরেই শুঁটকি পল্লীসহ শিশুশ্রমে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হবে। যারা শিশুদের চাকরির নামে খাটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শিক্ষার্থীদের পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়া, উপজেলা প্রশাসন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন