সড়ক না থাকায় অরক্ষিত বান্দরবান সীমান্ত
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এপারে সীমান্ত সড়ক, সীমান্ত চৌকি ও যানবাহন স্বল্পতার কারনে বর্ষা মৌসুমে বিজিবির টহলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এখানে বান্দরবানের সাথে মিয়ানমারের ২১০ কি:মি: সীমান্ত এলাকার বেশ কিছু জায়গা অরক্ষিত। সীমান্তের এই সমস্যা দূরীকরণে চলছে ২৭১কি:মি সড়ক নির্মাণ কাজ। এই কাজ সম্পন্ন হলে দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, চোরাচালান এবং উপজাতী-রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে আরো জোরালোভাবে কাজ করতে পারবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সূত্রমতে, বর্ষা মৌসুম মিয়ানমার চোরাচালানীদের জন্য পোয়াবোরো, আর বিজিবি জওয়ানদের জন্য নাভিশ্বাস। দীর্ঘকাল এই অবস্থা চলছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকায়।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম বাইশফাড়ি থেকে দোছড়ির পাইনছড়ি পর্যন্ত বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ আগের তুলনায় উন্নত হলেও বাকী অংশের যাতায়ত ব্যবস্থা এখনো নাজুক।
এই সীমান্তে বসবাসরত জনসাধারণের সাথে আলাপে জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অনেক সময় বিজিবি জওয়ানদের জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। অথচ বাংলাদেশের ঘুমধুম থেকে দোছড়ি সীমান্তের ঠিক ওপারে মিয়ানমার অংশে হাইওয়ে, পাকা সড়ক ও পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণসহ মিয়ানমার সীমান্তরক্ষি বাহিনী (বিজিপি) নজরদারীর যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু তার বিপরীতে বাংলাদেশের এপারে এখনো মাত্র শুরু হয়েছে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ।
তবে এই কাজ নিয়ে আশার আলো দেখছে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের সাথে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১১ বিজিবির ব্যাটালিয়ন সীমান্ত ৭১ কি:মি ও জোনের অধীনে ৯৪ কি:মি সীমান্ত রয়েছে। এই জোনের অধীনে সীমান্ত পিলার ৪২ থেকে ৫৫নং (অর্থাৎ নিকুছড়ি থেকে তীরেরডিব্বা) পর্যন্ত বর্ডার অবজারবেশন পোষ্ট (বিওপি) রয়েছে ১৪টি। এবং কক্সবাজার ৩৪বিজিবির নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত পিলার ৩১থেকে ৪২ (ঘুমধুম থেকে মনজয়পাড়া) পর্যন্ত বিওপি রয়েছে ৮টি। এর পর সীমান্ত পিলার ৫৫ থেকে আলীকদম ৬৮নং পোয়ামুহুরী পর্যন্ত এলাকা বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন (অরক্ষিত) রয়েছে।
তবে দোছড়ির পাইনছড়ি থেকে পোয়ামুহুরী পর্যন্ত এলজিইডির একটি সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় কাজ এগিয়ে নিতে সময়ক্ষেপন হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
সীমান্তে বসবাসরত একাধিক বাসিন্দা জানান- অরক্ষিত সীমান্তের চেয়ে রাতের আধারে অন্য সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মত ঘটনা ঘটে। তাদের মতে, অরক্ষিত সীমান্ত খুবই দূর্গম, যার কারণে এই সীমান্ত এলাকায় উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা মাঝেমধ্যে বিচরণ করে থাকলেও চোরাচালান বা অনুপ্রবেশ খুব কম হয়।
বিপরীতে মিয়ানমারের রায়বুনিয়া, নায়েখেং, বান্ডুলা ক্যাম্প, অংথ্রাবে ক্যাম্প, ছালিদং ক্যাম্প, ওয়ালিদং ক্যাম্প, অংজু ক্যাম্প, নারাইংচং ক্যাম্প, ককডংগ্যা ক্যাম্প, মেধাইক ক্যাম্প, তুমব্রু রাইট ক্যাম্প, তুমব্রু ঢেকিবনিয়া ক্যাম্প, তুমব্রু খালের মুখ ক্যাম্প, বালুখালী খালের মুখ ক্যাম্পের সৈনিকরা গাড়ি যোগে তাৎক্ষনিক জিরো পয়েন্টে পৌছতে পারে। যার কারনে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকরা হামেশা আতংকগ্রস্থ থাকে।
এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সীমান্ত এলাকায় টহল দেওয়া বিজিবির পক্ষে দুষ্কর হয়ে পড়ে।
সীমান্তের কয়েকজন বিজিবি কর্মকর্তা জানিয়েছেন- বর্ষা মৌসুম এলেই সীমান্তে দায়িত্বরত জওয়ানদের খুবই সমস্যা হয়। এ সময় চোরাচালান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও কিছুটা বেড়ে যায়। কারণ জমি-পাহাড় কাঁদা মাটিতে ডুবে থাকে। জঙ্গল সৃষ্টি হয়। দ্রুত চলাচল ও অপারেশন করার ক্ষেত্রে প্রচন্ড অসুবিধা হয়। রসদ সরবরাহ কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়াঁয়। অনেক বিওপি আছে, যেখান থেকে কোন জওয়ান কোন কারণে অসুস্থ্য কিংবা আহত হলে তাঁকে দ্রুত উপজেলা-জেলা সদরে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করাও ঝুঁকিপূর্ণ পয়ে পড়ে। অথচ মিয়ানমারের ওপারে পুরো সীমান্ত জুড়ে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
তারা জানান, এতে করে বিজিপি এক পিওপি থেকে আরেক বিওপিতে মুহুর্তে ছুটে যেতে পারে। ব্যটালিয়ন হেডকোয়ার্টার থেকে বিশেষ প্রয়োজনে অতিরিক্ত জওয়ান আনতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে সেটা এখনো সম্ভব হচ্ছে না।