আ.লীগ বনাম ইউপিডিএফ দ্বন্দ্বে আতঙ্কিত খাগড়াছড়িবাসী

জেলা  প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি :

১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার সারা দেশে বিএনপিকে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত থাকলেও পার্বত্য খাগড়াছড়িতে সরকার দলীয় দল আওয়ামী লীগ পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, উত্তপ্ত এ অঙ্গনে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে রেখে ফ্রন্ট লাইনে আওয়ামী লীগ বনাম ইউপিডিএফ’র রাজনৈতিক খেলা জমে উঠেছে। এ খেলার শুরুটা নির্বাচনের পূর্বে শুরু হলেও কখন সমাপ্তি ঘটবে তা নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে পুরো জেলাবাসী।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বাঁধা প্রদানকারী আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ হলেও শুধুমাত্র নির্বাচন সমাপ্তির করার প্রত্যয়ে ইউপিডিএফ’র প্রতি নমীয়নতা ও কৌশল অবলম্বন করে জেলা আওয়ামী লীগ নির্বাচনী বৈতরণী পার করেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার পর ইউপিডিএফকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন কৌশল সরকারি দল। তবে ইউপিডিএফ এ নির্বাচনে সুযোগ থাকার পরও হেরে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জয়কে সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় ত্রিপুরাদের ভোটে তার জয় হয়েছে বলে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির উপর ইউপিডিএফ অত্যাচার, মারধর, প্রাণনাশের হুমকি প্রদানসহ অপহরণ ও হত্যাকা– চালাচ্ছে বলে জেলা আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে অভিযোগ করে বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে।

খাগড়াছড়ি জেলা শহরে বৃহস্পতিবার বিকালে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইউপিডিএফকে নিয়ে মারমুখী শ্লোগান দেওয়ায় জেলাবাসীর নিকট নির্বাচন পরবর্তী আওয়ামী লীগ বনাম ইউপিডিএফ’র মধ্যে যে সংঘাতমুখর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে সাধারণ জনগণ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার কারণে সন্ধ্যার পর পরই জেলা সদরের রাস্তাঘাট মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে। ইউপিডিএফকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ তথা চাপে রাখতে পারবে জেলা আওয়ামী লীগ এ নিয়েও চিন্তিত পার্বত্যবাসী। অপরদিকে সরকারি দলের মামলা–হামলার কারণে জেলার একাধিক গ্রাম এখনও পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে বলে জেলা বিএনপি দাবি করেছে। বিএনপিকে ধমিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে, গ্রেফতার করে এবং দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে হামলা করার ফলে জেলার ১৮দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটাই কোণঠাসা। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের পক্ষে একা ইউপিডিএফকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।

১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮–নং খাগড়াছড়ি আসনে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ভুক্ত ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নৌকা মাঝি বনে যান। তবে জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে একাধিক উপজেলায় ভোটের হিসাবে এ প্রার্থী হারলেও শুধুমাত্র মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলার অবিশ্বাস্য রকম হারে পড়া ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। উক্ত উপজেলা সমূহে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ইউপিডিএফ’র সভাপতি হাতি প্রতীক নিয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রসীত বিকাশ খীসা জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি তার অভিযোগ পত্রে এ তিনটি উপজেলায় পুনরায় ভোট গ্রহণের আবেদন করার পর এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ইউপিডিএফ নেতাকর্মীরা।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ভুক্ত সমাজের প্রতিনিধিরা ইউপিডিএফকে দায়ী করে জেলার পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজনকে ইউপিডিএফ এর বাক্সে ভোট না দেওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি, অপহরণ, মারধর অব্যাহত রেখেছে বলে প্রতিবাদস্বরূপ বৃহস্পতিবার জেলা শহরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। একই সাথে তারা ইউপিডিএফ’র বিরুদ্ধে জেলা শহরে লিফলেট বিতরণ করেছে। এছাড়াও গত ৮ জানুয়ারি জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের সহ–সভাপতি কার্বারী নব রঞ্জন ত্রিপুরাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগ ইউপিডিএফকে  দায়ী  করেছে। এ কারণে পানছড়ি উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রান্তিক এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইউপিডিএফ আতঙ্কে ঘর হতেও বের হতে পারছে না বলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বাধা দেওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইউপিডিএফ’র ৫শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে মামলাগুলি  প্রত্যাহার  না করায় আওয়ামী লীগের প্রতি মারমুখী অবস্থানে রয়েছে ইউপিডিএফ। ইউপিডিএফ মামলার কারণে জেলা সদরসহ প্রপার এলাকাগুলোতে কোণঠাসা থাকলেও ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত পাহাড়ি এলাকায় তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ফলে সেসব এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসনও রীতিমত চিন্তিত । কখন এ সমস্যার উত্তরণ ঘটবে তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সাধারণ মানুষ।