আলীকদমে উলুফুলে শ্রমজীবিদের দিনবদল

Alikadam Uloful News Pic

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান)
পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় শ্রমজীবি মানুষের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে উলুফুল। স্থানীয়ভাবে উলুফুল ‘ফুলঝাড়ু’ হিসেবেও পরিচিত। পাহাড়ের সর্বত্রই প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় উলুফুল। স্থানীয় বন বিভাগ উলুফুল থেকে রাজস্ব আয়ও করছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিন জানা গেছে, বসন্তকাল শুরুর সাথে এলাকার নিম্নআয়ের শ্রমজীবি মানুষ পাহাড় থেকে উলুফুল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। উলুফুল স্থানীয়দের কাছে ফুলঝাড়ু– হিসেবে পরিচিত। দরিদ্র পরিবারগুলো ফুলঝাড়ু– বিক্রি করে সংসারে আয়ের সংস্থান করেন। কিছুদিনের জন্য হলে ফুলঝাড়ু– আয় রোজগারের সহায়ক হয়ে উঠে। স্থানীয় বাজার চাহিদা পূরণ করে ফুলঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের মতো বড় শহরেও। উলুফুল বনজসম্পদ বিধায় সম্প্রতি এ থেকে বন বিভাগ রাজস্বও আহরণ করছে বলে জানা গেছে।

মাতামূহুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম জানিয়েছেন, উলুফুল (ফুলঝাড়ু) একটি বনজ সম্পদ। লামা বন বিভাগ এ খাত থেকে রাজস্ব আদায় করে থাকে। মাতামুহুরী রেঞ্জ এ পর্যন্ত ৩৭ হাজার ১৯৩ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে।
উপজেলার চৌমুহনী, টিএন্ডটি মাঠ, পানবাজার, চৈক্ষ্যং রাস্তার মাথা, তারাবুনিয়া ও রেপাড়পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোলা মাঠে ফুলঝাড়ু বাঁধা ও শুকানোর কাজ চলছে। স্থানীয় টিএন্ড মাঠে ফুলঝাড়ুর শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিজন পুরুষ শ্রমিক দৈনিক ৩০০ ও নারী শ্রমিক ১৮০ টাকায় কাজ করছেন। দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত তারা এ কাজ করতে পারবেন।

ফুলঝাড়ু মৌসুম শেষ হলে তারা অন্য পেশায় কাজ করবেন। দরিদ্র ও শ্রমজীবি মানুষ ফুলঝাড়ু সংগ্রহের জন্য যাচ্ছেন পাহাড়ে বন-জঙ্গলে। ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ পরিবার-পরিজন চালাচ্ছেন। এতে করে তদাদের সাময়িক নতুন আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে।

ভারত মোহন পাড়ার পাহাড়ী মংবাচিং তঞ্চঙ্গ্যা জানিয়েছেন, অনেক ব্যবসায়ী ফুলঝাড়ুর জন্য অগ্রিম টাকা দেন। বাজারে প্রতি হাজার ফুলঝাড়ুর কঞ্চি সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বেচা-কেনা হয়। একজন লোক দৈনিক এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০টি ফুলঝাড়ুর কঞ্চি সংগ্রহ করতে পারেন। সেই হিসেবে একজন লোকের দৈনিক আয় হয় ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

একাধিক ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী জানান, ২৫ থেকে ৩০টি করে কঞ্চি বেধে প্রতিটি ঝাড়– শহরে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এটি একটি মৌসুমী ব্যবসা। মৌসুম শেষ হলে তারাও এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় যাবেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আমতলী পাহাড়, বাবুপাড়া, পূর্ণবাসন, সোনাইছড়ি ও তারাবনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় জুড়ে ফুলঝাড় ফুটেছে। দরিদ্র মানুষ দলবদ্ধ হয়ে ফুলঝাড় সংগ্রহে যাচ্ছেন পাহাড়ে। ফুলঝাড় একদিকে নতুন কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাড়ি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য দরিদ্র থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত সব পরিবারে কম-বেশি ঝাড়ুর প্রয়োজন। বিল্ডিংয়ে চুনকাম ও রঙ করানো কাজেও ফুলঝাড়ুর ব্যবহার হয়। তাই বর্তমানে গ্রামের চেয়ে শহরের বাজারে ব্যাপক ফুলঝাড়ুর চাহিদা রয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, প্রতি বছর ফুলঝাড়ু অসচ্ছল মানুষের জন্য জন্য বাড়তি আয়ের যোগান দেয়। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে ভাল হত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন