দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

উখিয়া-টেকনাফ আওয়ামীলীগের এক ডজন প্রার্থী

fec-image

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। ইতোমধ্যে ভোটের গুঞ্জন শুরু হয়েছে দেশের সর্বত্র। বইছে ভোটের হাওয়া। চলছে জল্পনা-কল্পনা। সবখানেই আলোচনা এখন ভোট নিয়ে। ঠিক তেমনিই জাতীয় সংসদীয় ২৯৭ নং তথা কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) এই আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মাঠ ধরে রাখতে অনড়। দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে দলের আলোচনায় থাকা এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

এই আসনটিতে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন কক্সবাজার-সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের পিতা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী রামু থানার বাসিন্দা ছিলেন। এডভোকেট নুর আহমদকে পরাজিত করে ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন।

১৯৭৯ সালে ২য় সংসদের নির্বাচনে মাত্র ২৬ বছর বয়সে শাহজাহান চৌধুরী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শাহজাহান চৌধুরী উখিয়া থানার বাসিন্দা ছিলেন। শাহজাহান চৌধুরী পরে জিয়াউর রহমান সরকারের জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হন। অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীকে পরাজিত করে শাহজাহান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন।

১৯৮৬ সালে ৩য় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ছিলেন আ হ আ গফুর চৌধুরী। তিনি জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। আ হ আ গফুর ছিলেন টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। শমশের আলম চৌধুরীকে পরাজিত করে আ হ আ গফুর চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে ৪র্থ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ছিলেন আবদুল গনি। তিনি ছিলেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী। আবদুল গনিও ছিলেন টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। আ হ আ গফুর চৌধুরীকে পরাজিত করে আবদুল গনি এমপি নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে ৫ম সংসদে নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী ২য় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এইবার খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার গঠন করেন। অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে পরাজিত করে শাহজাহান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ৩য় বারের মতো এবং টানা ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী।

১৯৯৬ সালে জুনের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। শাহজাহান চৌধুরীকে পরাজিত করে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী ৪র্থ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহমান বদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবদুর রহমান বদি টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। শাহজাহান চৌধুরীকে পরাজিত করে আবদুর রহমান বদি এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহমান বদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী তাহা ইয়াহিয়াকে পরাজিত করে আবদুর রহমান বদি এমপি নির্বাচিত হন।

২০১৬ সালে দুদকের মামলায় আব্দুর রহমান বদির তিন বছর কারাদণ্ড হওয়ায় ২০১৮ সালে ১১তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহিন আকতার চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শাহজাহান চৌধুরীকে পরাজিত করে শাহিন আকতার চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন।

এ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগের সাম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা স্ব-স্ব এলাকার ভোটারদের ঘিরে ব্যাপক গণসংযোগসহ নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দলীয় নৌকার প্রতীকের পক্ষে সমর্থন চাইছেন, বলছেন বর্তমান উন্নয়নের কথা। জানাচ্ছেন নির্বাচিত হলে ভবিষ্যৎ এলাকার উন্নয়নে পরিকল্পনার কথাও।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, নাফ নদী, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, ইনানী, পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকত, মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যটন সম্ভাবনার হাতছানি। শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় চলছে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ। সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, অর্থনৈতিক অঞ্চল, জালিয়ার দ্বীপে এক্সক্লুসিভ ‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক’ নির্মাণের কাজও চলছে। নতুন ভোটারা চায় পর্যটন ও অবকাঠামোর আরো উন্নতি। মৎস্য আহরণ, চিংড়ি, লবণ, ধান, পান ও সুপারি এখানকার মানুষের মূল পেশা। জীবন যাত্রার ব্যায় বেশি দারিদ্র ও বেশি।

বিশ্বময় পরিচিত মানবতার শহর হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় উখিয়া-টেকনাফের আলাদা কদর রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প গিরি রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ক্যাম্পে উপছে পড়ছে অনুদানও, তবে আরসা সহ মিয়ানমারকেন্দ্রিক সাতটি প্রধান গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব সংঘাত ক্যাম্পের পরিবেশ অশান্ত করে তুলছে। তারা এবং তাদের অবৈধ অস্ত্র নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এমনটা আশঙ্কা করছেন এখানকার সাধারণ মানুষ। সেই সাথে উখিয়া টেকনাফে ইয়াবার কারণে বদনাম আছে। বাংলাদেশে ইয়াবা আসে মিয়ানমার সীমান্ত পথে টেকনাফ হয়ে। ইয়াবার গডফাদাররা সব সময়ই থাকে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। উখিয়া-টেকনাফ মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অনেক জনপ্রতিনিধি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। ইয়াবাসহ মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচারের অভিশাপ থেকে মুক্তি চান সাধারণ ভোটাররা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কক্সবাজার-৪ উখিয়া টেকনাফ ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য যেসব প্রার্থীদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- আওয়ামী লীগের দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, তার সহধর্মিনী বর্তমান সাংসদ শাহিন আকতার চৌধুরী, বদির চাচা শ্বশুর উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, তার স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নিগার সোলতানা ও বদির আরেক চাচা শ^শুর বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী। বদির শ্যালক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজা পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাজা শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কবি আদিল উদ্দিন চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, সাইফুদ্দিন খালেদ ও মনোয়ারা বেগম মুন্নি চৌধুরীসহ এক ডজন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

আশির দশকের উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন এজাহার মিয়া কোম্পানি। এজাহার মিয়ার রাজনীতির শুরু জিয়াউর রহমানের জাগদলে। পরবর্তী সময়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। জাতীয় পার্টির টিকেটে নির্বাচিত হন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে।
এক সময় একটি কথা প্রচলিত ছিল, এজাহার কোম্পনি যেদিকে যান, সেদিকেই ঘোরে উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির চাকা। এই এজাহার মিয়ার দেখানো পথেই হাঁটা শুরু করেন তার বড় ছেলে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি। যিনি বিতর্কিত কর্মকান্ড দিয়ে বিভিন্ন সময় হয়েছেন গণমাধ্যমের শীর্ষ সংবাদ।

প্রথমে বিএনপি পরে জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুর রহমান বদির বাবা এজাহার কোম্পানি। তার পথ ধরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আসেন বদি। সে বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম নির্বাচনে বদি বিএনপির মনোনয়ন না পেলেও জুনের নির্বাচনে পান। কিন্তু দলটির সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়। মনোনয়ন ছিনিয়ে নেন শাহজাহান চৌধুরী। ক্ষিপ্ত বদি যোগদেন আওয়ামী লীগে। এসেই নৌকা প্রতীকের জন্য শুরু করেন জোর লবিং। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেকনাফ সদরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় হন সেই পৌরসভার প্রশাসক। এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বদি ২০০২ সালে টেকনাফ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েই নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। এর পর থেকেই এমপি আব্দুর রহমান বদি হয়ে ওঠেন উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য একজন রাজনীতিবিদ ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তার কথায় চলে সব। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমন কি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ইচ্ছাতেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের কারণে দুদকের মামলায় সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদিকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছিলেন আদালত। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন না পেলেও তার স্ত্রী শাহিন আক্তার নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন।

তবে অভিযোগ রয়েছে তার স্ত্রী শাহীন আক্তার নির্বাচিত হলেও তাঁর বদলে বদিই চালান এলকার কাজ, পদ না থাকলেও সংসদ সদস্যের প্রটোকল কাটানো শেষ হয়নি তার, ব্যবহার করেন সংসদ সদস্যের লগো লাগানো গাড়ি। নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম, উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ সকল কর্মসূচিতে। তার জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততা থাকলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন কিনা তা নিয়ে এখনো জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।

এদিকে তারই শ্যালক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজা পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীতে আব্দুর রহমান বদির শ্যালক জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী, নাকি তার স্ত্রী বর্তমান সাংসদ শাহিন আক্তার অখবা তিনি নিজেই আবার মনোনয়ন পাবেন কিনা তা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ৪নং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১ম বার ২০১১ সালে আনারস প্রতীক নিয়ে ১২৮২৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৫৬৭৪ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচত হয়ে ছিলেন। তৃতীয়বার ২০২২ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৭৮১০ ভোট টানা তিন বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

তিনি উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ৮ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ছাড়াও তিনি আগে থেকে এই উখিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতা উখিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন এতদাঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটানো গুণি ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। বাবার সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এই জননেতা শিক্ষা বিস্তারে রাখছেন অনন্য ভূমিকা, প্রতিষ্ঠা করেছেন অনেক বিদ্যালয়।

এক সময় বিএনপি অধ্যুষিত জনপদ হিসেবে পরিচিত থাকলেও তার অদম্য নেতৃত্বে আজ আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে সীমান্ত জনপদ।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর ঘটনা ঘটে। সেদিন দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে উগ্রপন্থীদের প্রতিহত করতে সীমান্ত জনপদের বৌদ্ধ মন্দিরগুলো পাহাড়া দেন তিনি।

বিশ্ব স্বীকৃত রোহিঙ্গা মানবিক বিপর্যয়ে ত্রাণ বণ্টন, আশ্রয় কেন্দ্র তৈরিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করেন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা উখিয়া-টেকনাফের অধিকাংশ মানুষেরা এখন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে দেখতে চান জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে।

কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমেদ বাহাদুর একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট নুর আহমেদ ‘৭০ এর নির্বাচনে তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মৌলানা ফরিদ আহমেদকে পরাজিত করে এমএনএ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

অ্যাডভোকেট নুর আহমেদ কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। সেই পিতার সন্তান সোহেল আহমেদ বাহাদুরও এবার উখিয়া-টেকনাফ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
যুবলীগও কক্সবাজারে সেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্যে হলো মাদকের অভিশাপ থেকে কক্সবাজারকে মুক্ত করা।

সাইফুদ্দিন খালেদ সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্দুল গণীর সন্তান। তিনি আবদুর রহমান বদির সাথে পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারিয়েছিলেন। আদিল চৌধুরী কয়েক দফা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হতে পারেননি।

মাহবুব মোর্শেদের রাজনীতির ভিত্তি হচ্ছে তার বাবা মোহাম্মদ আলী সংসদ সদস্য ছিলেন এক মেয়াদে। নুরুল বশর টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। মেয়র পদে দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তার ছোটভাই অ টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম।

জাফর আলম চৌধুরী দীর্ঘদিন সরকারি চাকরি করে বর্তমানে অবসরে। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতার চৌধুরীর আপন চাচা। শাহ আলম চৌধুরীর কক্সবাজার শহর কিংবা জালিয়াপালং এলাকায় কোনো গণভিত্তি এবং ব্যাপক পরিচিতি ও নেই।

মনোয়ারা বেগম মুন্নি চৌধুরী, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় ২ বার রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার পেয়েছেন। উখিয়া ও টেকনাফ এই দুই উপজেলায় তিনি ২৫ বছর সরকারি চাকরির মাধ্যমে লাখো মানুষকে দিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা। চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক সদস্য ও জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করায় পাক হানাদার বাহিনী টেকনাফে পুড়িয়ে দেয় মুন্নি চৌধুরীর ঘরবাড়ি। দাদা এড. এ কে এম আহমদ হোসাইন আমৃত্যু কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

পরিবারের শক্ত রাজনৈতিক অবস্থানের পাশাপাশি একাগ্রচিত্তের মানবিকমুখী কর্মজীবন তাকে নৌকার পরিচ্ছন্ন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে জানান মনোয়ারা বেগম মুন্নি চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি আমার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও জনগণের সেবা করে যাবো। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে আমি বদ্ধ পরিকর।’

জাতীয় সংসদীয় ২৯৭ কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনটি ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। কক্সবাজার ৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের মোট ভোটার ৩,২৮,৩৮৯ জন। এর মধ্যে উখিয়া উপজেলায় ১,৪৭,৩১০ জন ও টেকনাফ উপজেলায় ১,৮১,০৭৯ জন ভোটার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করবেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামীলীগ, উখিয়া, টেকনাফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন