দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

কক্সবজার-১ আসন: নৌকাশূন্য মাঠে লড়ছেন ৭ প্রার্থী, আলোচনায় ইবরাহিম ও জাফর

fec-image

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ঋণখেলাপির অভিযোগে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির মনোনয়নপত্র উচ্চ আদালত বাতিল করায় নৌকা প্রতীকশূন্য হয়ে যায়। এ সুযোগে নির্বাচনী মাঠে হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। অচেনা ভোটের মাঠে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন এ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের জেলা উপজেলার নেতা-কর্মীরা।

এমনকি চকরিয়ায় সমাবেশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক বক্তব্য রেখে হাতঘড়ি প্রতীকের প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন দেন। ফলে গত কয়েক দিন ধরে নির্বাচনী মাঠে সরব ইবরাহিম। তিনি প্রতিদিন উপজেলা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন, সাথে সাথে দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। সাংসদ জাফরের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ভোটাররাও এখন সাড়া দিচ্ছেন তাকে।

অন্যদিকে এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। গত কয়েকদিন আগে পেকুয়া বাজারে নির্বাচনী অফিস উদ্বোধনকালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘অসৌজন্যমূলক’ বক্তৃতা দেওয়ার পর কাল হয়ে দাঁড়ায় তার। তাকে এ বক্তৃতার কারণে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম এখন পথসভায় বক্তব্যে আগের মতো বিষোদ্‌গার করছেন না। অনেকটাই নমনীয় হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি চকরিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় স্থানীয় ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তাঁর প্রতীক ট্রাকে ভোট দিতে আহŸান জানাচ্ছেন ভোটারদের।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, কক্সবাজার-১ আসনে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। অপর চার প্রার্থী হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী কমর উদ্দিন আরমান (কলার ছড়ি) ও তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী (ঈগল)। এ আসনের বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩। এর মধ্যে চকরিয়ায় ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫১৯ জন ও পেকুয়ায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৪ জন। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগ দুবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, বিএনপি পাঁচবার ও জামায়াতে ইসলামী একবার জয়লাভ করে।

এদিকে চকরিয়া-পেকুয়ার সরেজমিনে ঘুরে ভোটার, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ জেলার শীর্ষ নেতারা এবং স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি উপজেলার কয়েকজন শীর্ষ নেতা জেনারেল ইবরাহিমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেও চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দলের অনেকেই জাফর আলমের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এমনকি বেশকয়কটি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জাফর আলম তথা ট্রাকের পক্ষে কাজ করায় আওয়ামী সমর্থক ভোটাররা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

চকরিয়া-পেকুয়া আসনের বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি অধ্যুষিত এ আসনে জাফর আলমকে ঠেকাতে হলে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির ভোটও টানতে হবে। তা না হলে জয়লাভ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

ইবরাহিম ও জাফরকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা তুঙ্গে। এ দুই প্রার্থীর পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাটবাজার, অলিগলি। গণসংযোগ-পথসভাতেও সরব এই দুই নেতা। গণসংযোগে অন্য প্রার্থীদের তৎপরতা কম। তবে বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী হোসনে আরার (লাঙ্গল) পক্ষে এবং ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি) প্রতীকের মাইকিং করতে দেখা গেছে। তারা গণসংযোগও করছেন। আর বাকী তিনজন প্রার্থীর কোনো প্রকার প্রচারণা চোখে পড়েনি। তবে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীকে তার পিতা বর্তমান সাংসদ জাফর আলমের পথসভায় অংশ নিয়ে তার পিতার ট্রাক প্রতীকের জন্য ভোট চাইতে দেখা গেছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ১০ ভাগের মধ্যে ৯ ভাগ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হাতঘড়ি প্রতীকের জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত হয়েছেন। অবশিষ্ট এক ভাগ শিগগিরই তাঁর প্রচারণায় যুক্ত হবে। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষের সামনে দুটি পথ। একটি ভালো পথ, অন্যটি মন্দ পথ। আমাকে ভোট দেওয়া মানে ভালো পথকে বেছে নেওয়া।’

জাফর আলম বলেন, ‘আমি ভালো হলেও আপনাদের ছেলে, খারাপ হলেও আপনাদের ছেলে। আমি আপনাদের ঘরের ছেলে। আমি হাটহাজারী থেকে আসিনি। বিপদে-আপদে পাশে ছিলাম। আমার বিশ্বাস, অধিকাংশ ভোট ট্রাক মার্কায় পড়বে।’

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, ১ জানুয়ারি ২০২৪।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনীতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন