কক্সবাজার-৩ আসন: প্রচারে এগিয়ে নৌকা, উত্তাপ ছড়াচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল

fec-image

শুরুতে নিরুত্তাপ থাকলেও ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে কক্সবাজার সদর, রামু ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৩ আসনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সাথে উচ্চ আদালতের আদেশে শেষ মুহূর্তে এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হাইকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। প্রতীক বরাদ্দের ৩ দিন পর গত ২১ ডিসেম্বর কক্সবাজার-৩ আসনে উচ্চ আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। ওইদিনই তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে ফিরেন নির্বাচনী মাঠে। এরপর থেকেই মূলত নিরুত্তাপ এ আসনের নির্বাচনে কিছুটা হলেও প্রতিদ্বদ্বিতার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন ভোটাররা।

কক্সবাজার-৩ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন ৬ জন প্রার্থী। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ (ঈগল), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আবদুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ এর শামীম আহসান ভুলু (কুঁড়েঘর) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।

এখানে রয়েছে বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। পর্যটন রাজধানী খ্যাত এ আসনটি নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নভেম্বর মাসে কক্সবাজার শহরের সাথে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণসহ একাধিক মেগা প্রকল্প। বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে পর্যটন নগরীতে। তাই আসনটি ধরে রাখতে ও পুনরায় বিজয়ী হতে মরিয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বদ্বিতায় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন নিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে তিনি হ্যাটট্রিক করতে চান।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিলের করতে এসেছিলেন। কিন্তু বিকাল ৫টা অতিক্রম হওয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়ন পত্রটি গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে যান ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। আদালত মনোনয়ন পত্র দাখিলের জন্য আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ সময় অতিবাহিত হওয়ার ১১ দিন পর গত ১২ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে ১৫ ডিসেম্বর যাচাই বাছাইকালে কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান সমর্থন ভোটারদের এক শতাংশ স্বাক্ষরে গড়মিল ও সংশ্লিষ্ট ভোটার স্বাক্ষর প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করায় মনোনয়ন পত্রটি বাতিল করেন। এরপর মিজান সাঈদ আবারও আদালতে যান এবং সেখানে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে প্রতীক বরাদ্দ পান তিনি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় তিনি কক্সবাজার শহরকে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়েছেন। ঈদগাঁওকে উপজেলায় রূপান্তর করেছেন। রেল লাইন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অনেক মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করে সরকার কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। বিগত ১০ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মানুষের সেবায় তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। প্রতিটি গ্রাম, অলি-গলি চষে বেড়িয়েছেন।

কমল বলেন, ‘যারা দলের দুর্দিনে পাশে ছিলো না, মানুষের দুর্দিনে খবর নেয়নি, করোনাকালে ঘরের বাইরে আসেনি, তারা এখন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাদের মানুষ কখনো দেখেনি। অনেকের নামও মানুষ জানে না। তাই এ আসনে তিনি এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন।’
ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রযাত্রায় শামিল হতে হলে কক্সবাজারবাসীর জন্য প্রয়োজন গতিশীল, চৌকস ও যোগ্য নেতৃত্ব। কেননা কেবল দক্ষ ও সঠিক নেতৃত্বই বদলে দিতে পারে কক্সবাজারকে, গড়তে পারে সমৃদ্ধ আগামী। কক্সবাজারকে উন্নত, পরিবেশবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত, স্বনির্ভর ও বিশ্বমানের আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

এছাড়া এ আসনে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আবদুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি)। অপর দুই প্রার্থী বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ এর শামীম আহসান ভুলু (কুঁড়েঘর) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন) এর প্রচার-প্রচারণা তেমন চোখে পড়েনি।

কক্সবাজার সদর, রামু এবং নবগঠিত ঈদগাঁও এ তিনটি উপজেলা নিয়ে কক্সবাজার-৩ সংসদীয় আসন। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার-৩ আসনে মোট ভোটর সংখ্যা ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৯৯ পুরুষ এবং ২ লাখ ২৯ হাজার ১ জন মহিলা ভোটার রয়েছেন।

১৯৯১ সাল থেকে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ছাড়া) এ আসনে তিনবার আওয়ামী লীগ ও তিনবার বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হন মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে তাঁকে হারিয়ে এমপি হন বিএনপির খালেকুজ্জামান। ২০০১ সালে নির্বাচনী প্রচারের সময় খালেকুজ্জামান হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তাঁর ভাই প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান প্রতিদ্বদ্বিতা করে মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে এমপি হন। ২০০৮ সালে দুই দলেই প্রার্থী বদল হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলকে হারিয়ে বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজল ক্ষমতায় আসেন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে বিএনপির কাজলকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার এমপি হন সাইমুম সরওয়ার কমল।

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, ১ জানুয়ারি ২০২৪।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনীতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন