ফলোআপ: জুন ক্লোজিং-এ অনেক ঠিকাদারের বিল আটকে গেছে

খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতির ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে আসছে

fec-image

খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা দুর্নীতি অনিয়মের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি পার্বত্যনিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিপদে পড়ার পর নানা শংকায় অনেকে ঠিকারদের বিল আটকে দিয়েছে কতৃপক্ষ। লাপাত্তা খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিম। যিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বালিশ কান্ডে জড়িত এমন জনশ্রুতি রয়েছে। যার কারণে পদোন্নতি আটকে রয়েছে তার।

জুন ক্লোজিং-এ খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নানান দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি পার্বত্যনিউজে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ঠিকাদারদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। বঞ্চিত ঠিকাদাররা এ প্রতিবেদনকে সাধুবাদ জানিয়ে নানা তথ্য সরবরাহ করে। ফলে বেড়িয়ে আসে খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগে আরো ভয়াবহ চিত্র।

অভিযোগ রয়েছে, খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগে তালিকাভূক্ত তিন শ্রেনীর ৫১ ঠিকাদার রয়েছে। এরা প্রতি বছর সরকারী ফি-দিয়ে লাইসেন্স নাবায়ন করেন। তার মধ্যে কিছু ঠিকাদার ২৫’শত টাকা দিয়ে আবার সম্মিলিত লাইসেন্সদারী ঠিকাদাদের নবায়ন ফি দিতে হয় প্রায় ৪০ হাজার। কিন্তু এদের ভাগ্যে কোন কাজ জুটে নাই। কারণ কাজ ভাগ হয়ে যায় আগাম মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। আর সেটা চলছে বছরের পর বছর। তবে বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম যোগদানের পর দুর্নীতি-অনিয়মে মাত্রা আরো বেড়ে গেছে।

প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান শেষ অর্থ বছরের জুন ক্লোজিং-এ খাগড়াছড়ি ৮০ গ্রুপের বিপরীতে প্রায় ৩ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করেন। ফলে একটি কাজ পাওয়ার আশায় বঞ্চিত ঠিকাদাররা অংশ নেন। কিন্তু টেন্ডারে কাজ পাওয়ার পর দেখা গেছে প্রায় ভাগ কাজই নির্বাহী প্রকৌশলী তার পছন্দে ব্যক্তি দিয়ে আগেই করিয়ে রেখেছেন। ফলে শুরু জটিলতা। আবার বেড়িয়ে আসতে শুরু খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য।

অপর একটি সূত্র জানায়,খাগড়াছড়ি জিয়ানগর অবস্থিত টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট ভবনের সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ ছিল ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৩ টাকা। কিন্তু ১০ শতাংশ লেস দিয়ে ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩৬ টাকা . ০৬৯ টাকায় কাজটি পান মেসার্স বসুন্ধরা হাউজ বিল্ডাস প্রতিষ্ঠান।তবে খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর পরামর্শে জনৈক এরশাদ ঐ কাজটি কিছু অংশ তার আগেই করেও ফেলেন। যা চলমান রয়েছে। কিন্তু জুন ক্লোজিং-এ টেন্ডার হলে দেখা জটিলতা। অবশেষে আওয়ামী লীগের এক নেতার সুপারিশে কাজটি এরশাদকে করতে বলা হলে আওয়ামী লীগ মহলে তোলপার শুরু হয়।

জুন ক্লোজিং-এ ঠিকাদার নজরুল ইসলাম ১৩ গ্রুপের সিডিউল কিনে ড্রপ করে একটি গ্রুপের কাজ পান। কাজটি ছিল প্রায় ৮ লাখ টাকার জেলা ও দায়রা জজের অফিস সংস্কার। কিন্ত আরো একজন ঠিকাদার দাবি করেন, তিনি এই কাজটি আরো ৬ মাস আগে প্রায় ৪০ ভাগ সম্পন্ন করেছেন। এ নিয়ে দুই ঠিকাদারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে নজরুল ইসলাম দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে কাজটি ছেড়ে দেন। একইভাবে খাগড়াছড়ি শহরের কলাবাগানের মো: মাসুদুর রহমান মাসুম কাজ পান । যার প্রাক্কলিত ব্যায় ছিল ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭শত ৯৯.৮৮৩ টাকা। এটি ছিল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংস্কার। কিন্তু আরো একজন ঠিকাদার ঐ কাজটি আগাম করে রেখেছে বলে দাবি করায় এক লাখ টাকায় দফারফা হয়।

জুন ক্লোজিং-এ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে গত ২৩ জুন “খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগে অরাজকতা, কাজ না করেও বিল!” শিরোনামে বাংলাভিশন ডিজিটাল প্লাটফর্মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পুরো জেলা ব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।

নুরু লিখেছেন,“রাত এগারোটায় টেন্ডারের নোটিশ দিয়ে ১ টায় ক্লোজিং করেছে তাও আবার আরএফকিউইউ পদ্ধতিতে।যাতে সরকার কোন রাজস্ব পায়নি”।আরো অনেকে লিখেছেন, নানা ধরনের নেতিবাচত মন্তব্য।

এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ কিছু চেক আটকে দিয়েছে খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগ। ঠিকাদারকে সাফ বলে দেওয়া হয়েছে চেক নিতে সমপরিমাণের পে-অর্ঢার জমা দিয়ে যেতে হবে।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বালিশ কান্ডের সময়কার কর্মকর্তা। প্রায় ১৩ জন কর্মকর্তা ঐ প্রকল্পের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গ্রেফতার হন। আর আনোয়ারুল আজিমকে খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলী করা হয়। কিন্তু কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায় না, তেমনি আনোয়ারুল আজিমেরও চরিত্রেরও পরিবর্তন হয়। প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের এমন অনিয়ম-দুর্নীতিতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও তিনি নিজে ও তার অফিসের কতিপয় কর্মকর্তরা লাভবান হচ্ছেন। এদিকে প্রতিবেদনকে পুঁজি করে কতিপয় ঠিকাদার লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ সময় এক কর্মকর্তা বলেন. খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম তিনি প্রায়ই নিজেকে সরকার বিরোধী একটি সংগঠনের সমর্থক দাবি করে থাকেন। ঐ কর্মকর্তার মতে, প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের জুনিয়র কর্মকর্তাও পদন্নোতি পেয়ে এখন তার সিনিয়র। সচেতন মহলের দাবী, খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের দুর্নীতি ও অনিয়মের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সকল উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে তদন্ত আরো ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, গণপূর্ত বিভাগ, দুর্নীতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন