বর্ষায় যৌবন ফিরে পেয়েছে আলীকদমের দামতুয়া জলপ্রপাত

fec-image

প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি ওয়াংপা ঝর্ণা, দামতুয়া ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে। রুমু-ঝুম, ঝুম-ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝর্ণা ধারার হিমশীতল জলে গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে মুছে সজীব করে তুলতে পারে।

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার সবুজ পাহাড়ের কন্দরে লুকিয়ে আছে অসংখ্য গিরিখাত -ঝর্ণা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দামতুয়া, ওয়াংপা, রূপমুহুরী ও নুনার ঝিরি ঝর্ণা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের আর্কষণ করছে ‘ওয়াংপা’ ঝর্ণা এবং ‘দামতুয়া’ জলপ্রপাত।

প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন এ ঝর্ণা ও জলপ্রপাতের উপচে পড়া ধারা দেখার মোক্ষম সময় এই বর্ষায়। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে ঝর্ণা ও জলপ্রপাত গুলোতে উপচে পড়ে যৌবন স্রোতে। সবুজ পাহাড়ের নিস্তব্ধতার মাঝে ঝর্ণা রাণীরা যেন আঁচল বিছিয়ে দেয় পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাতে। তাই সবুজ পাহাড়ের টানে প্রাণের উচ্ছ্বাসে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসছেন পর্যটকরা ঝর্ণার রাণী দামতুয়া জলপ্রপাত।

ভরা বর্ষার উন্মাতাল যৌবনের কলতানে মুখরিত আলীকদমের অসংখ্য ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। এরই সঙ্গে উচ্ছ্বল কলরবে লাফিয়ে চলছে দামতুয়া ও তামাংঝিরি জলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানির জীবন ধারা। এসব ঝর্ণা ও জলপ্রপাতের হিমশীতল জলে সিক্ত হতে পর্যটকদের আর্কষণ করছে জলধারা।

আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টের আদু মুরুং পাড়া থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে দামতুয়া ঝর্ণা ও জলপ্রপাতের অবস্থান। ১৭ কিলোমিটার পথ জিপ বা মোটরসাইকেলে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হয় পায়ে হেঁটে, উঁচু নিচু পাহাড় ডিঙিয়ে পৌঁছে যাবেন ঝর্ণায়।

পর্যটকদের সাম্প্রতিক নজরে আসা ‘ওয়াংপা ঝর্ণা’ এবং দামতুয়া ঝর্ণা ও জলপ্রপাত প্রকৃতির এক বিস্ময়। এ ঝর্ণা ও জলপ্রপাতের আকার আকৃতি ও গঠনশৈলী মনোমুগ্ধকর। পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য নান্দনিক ঝর্ণার দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে এটি অন্যতম। তবে সবচেয়ে মনোহর লাগে দামতুয়া ঝর্ণার কয়েকশ’ গজ উপরে দামতুয়া জলপ্রপাত। এ জলপ্রপাতের পাথুরে মাটির ধাপগুলো আরো বিস্ময়কর। যেন সু-দক্ষ রাজমিস্ত্রির নিপুণ হাতে তৈরি কোনো আলপনা মনে হয় দেখলে। দামতুয়া জলপ্রপাতের অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ প্রমাণ করে এটি প্রকৃতির খেয়ালে গড়া অসাধারণ একটি স্থাপত্য-শৈলী।

অপরদিকে, দামতুয়া ঝর্ণায় দু’দিকের খাড়া পাহাড়ি দেয়াল বেয়ে কলকল, ঝমঝম রবে সুরের অনুরণন তুলে যৌবনের উন্মাতাল স্রোত গড়িয়ে পড়ছে নিচের গভীর জলাশয়ে। উঁচু থেকে পড়া পানির কিছু অংশ আবার জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে সেখানে এক ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ যেন পাহাড়ের গভীরে মেঘমালা খাড়া পাহাড়ের কিছুটা পথ ডিঙ্গিয়ে দামতুয়া ঝর্ণায় নামতে হয়। তবে দামতুয়া জলপ্রপাতে নামার পথ পাথুরে মাটি। সেখানে নামতে তেমন সমস্যা হয় না। ঝর্ণা ও জলপ্রাপাতের নিচে মাঝারি ধরণের জলাশয় রয়েছে। এ জলশয়ে সাঁতার কাটতে ও গোসল করতে বেশ ভালো লাগে।

দামতুয়া ঝর্ণা ও জলপ্রপাতে পৌঁছার অন্তত এক ঘণ্টা আগে দেখা মিলবে ওয়াংপা ঝর্ণার। মূল ওয়াংপা ঝর্ণা দেখতে হলে খাড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে হবে। পথের মাঝে অসংখ্য ছোট বড় পাথরের ভাঁজে শীতল জল জানান দেয় ওয়াংপা ঝর্ণার স্রোত কেমন হবে। ওপর থেকে ওয়াংপা ঝর্ণার পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য আরো মনোহর।

প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। রাতে যদিও সেখানে অবস্থান করা নিরাপদ নয়। তবে তাঁবু খাঁটিয়ে অবস্থান করলে বোঝা যাবে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য ও কলতান। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি ওয়াংপা ঝর্ণা, দামতুয়া ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে। রুমু-ঝুম, ঝুম-ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝর্ণা ধারার হিমশীতল জলে গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে মুছে সজীব করে তুলতে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে, শতবর্ষ আগে থেকেই প্রবাহিত রয়েছে এসব ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। এতদিন সড়ক যোগাযোগ না থাকা, বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি জনপদ হওয়ায় তা ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে।

উদ্যমী তরুণ-যুবকরা পাহাড়ের কন্দরে লুকিয়ে থাকা এসব ঝর্ণা রাণী ও জলপ্রপাতকে খুঁজে খুঁজে বের করেছে। ফলে পাল্টে যাচ্ছে আলীকদম উপজেলার পর্যটন পরিবেশ। নতুত্বের ছোঁয়া লাগছে পর্যটন খাতে। সরকারি আনুকূল্য পেলে এসব পর্যটন স্পট হয়ে উঠবে আরো বেশী পর্যটকবান্ধব।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদম, দামতুয়া জলপ্রপাত, বর্ষা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন