পাকিস্তানের বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

fec-image

এ যেন রোমাঞ্চকর পরীক্ষা। অভিষেক ওয়ানডেতে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা যেন পাকিস্তানের জামান খানকেই দিতে হলো। শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচটা জিইয়ে রেখেছিলেন এই পেসারই। কিন্তু ইনিংসের শেষ বলে স্কয়ার লেগে পাঠিয়ে ২ রান নিয়ে শ্রীলঙ্কার ১৩তম এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করলেন চরিত আসালাঙ্কা।

বলের সঙ্গে সমান তালেই রান উঠছিল শ্রীলঙ্কার। ডিএলএস মেথডে ৪২ ওভারে পাকিস্তানের দেওয়া ২৫২ রানের লক্ষ্যটা সহজ ছিল না। কিন্তু নাসিম শাহ ও হারিস রউফের অনুপস্থিতি বেশ ভুগিয়েছে পাকিস্তানকে। ৪০ ওভার পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কোনো উইকেটই নিতে পারেননি তাঁদের পেসাররা।

মনে হচ্ছিল, সহজ জয়ের দিকেই এগোচ্ছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু মাঝে ইফতিখার আহমেদের তিনটি উইকেট এবং ৪১তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদি খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলে জমে ওঠে ম্যাচ। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও দুনিত ওয়াল্লেলাগাকে টানা দুই বলে ফিরিয়ে ম্যাচে উত্তেজনার রেণু ছড়িয়ে দেন শাহিন। ওই ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৪ রান, যার ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার দরকার পড়ে ৮ রান। জামানও প্রথম চার বলে মাত্র ২ রান দিয়ে প্রমোদ মাদুশানকে ফেরান। কিন্তু পরের বলেই আসালাঙ্কার ব্যাটে আউটসাইড এজ হয়ে বাউন্ডারি হয়ে যায় কিপারের পাশ দিয়ে। শেষ বলে দুই রান নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন আসালাঙ্কা।

এর আগে কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা শ্রীলঙ্কার জয়ের পথটা মসৃণ করে তুলেছিলেন। ৯৮ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন দুই মিডল অর্ডার ব্যাটার। ৯১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরাও হয়েছেন মেন্ডিস।

পাওয়ার প্লেতে শাদাব খান দুর্দান্ত থ্রোতে কুশল পেরেরাকে ফেরালেও পেস বোলাররা কোনো উইকেট নিতে পারেননি। বিপরীতে আফ্রিদি-মোহাম্মদ ওয়াসিমদের ওপর চড়াও হয়ে ১ উইকেটে ৫৭ রান তুলে নেন লঙ্কান ব্যাটাররা। ৮ বলে ১৭ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন দুই বছরের বেশি সময় পর ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামা পেরেরা। দ্বিতীয় উইকেটে পাতুম নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিসের ৬০ বলে ৫৭ রানের জুটিতে চাপ সামলে ওঠে শ্রীলঙ্কা। নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে নিসাঙ্কাকে ২৯ রানে ফিরিংয়ে ব্রেক থ্রু দেন লেগ স্পিনার শাদাব। তৃতীয় উইকেটে মেন্ডিস ও সাদিরা ৯৮ বলে ১০০ রানের জুটিতে জয়টাই শুধু অপেক্ষা করছিল স্বাগতিকদের জন্য। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ১৭৭ রানে পুরোনো ভুলে আবারও আউট হলেন সাদিরা। ইফতিখারের বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে ৪৮ রান করে স্টাম্পড আউট হলেন তিনি। এশিয়া কাপে এ নিয়ে তিনবার এমন আউট হলেন সাদিরা।

সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ যেন মেন্ডিসই করলেন। গত সাড়ে তিন বছরে ৯টি ওয়ানডে ফিফটি করেও সেঞ্চুরির দেখা পেলেন না। গতকাল আউট হলেন ৮৭ বলে ৯১ রান করে। বাজপাখির মতো উড়ে গিয়ে শেষ মুহূর্তে কুশলের বলটা হাতে জমা করলেন মোহাম্মদ হারিস।

এর আগে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আঁটসাঁট বোলিং আক্রমণে দ্রুত কয়েকটি উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে বেশ কিছুক্ষণ চাপেই রেখেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দাসুন শানাকাদের গলার কাঁটা হয়ে গেল মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদের ১০৮ রানের ষষ্ঠ জুটি, যার সৌজন্যে বাঁচা-মরার ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে ৪২ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫২ রান সংগ্রহ করেছে পাকিস্তান।

বৃষ্টির কারণে দুই ধাপে ম্যাচের ওভার কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৪২ ওভার। ২৭.৪ ওভারে ১৩০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান। সেখান থেকে ৭৮ বলে ১০৮ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়েন রিজওয়ান ও ইফতিখার। ১২তম ওয়ানডে ফিফটি করে ৭৩ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ২টি ছক্কার বাউন্ডারি। ৪০ বলে ৪৭ রান করেন ইফতিখার। ৪টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল ইনিংসে। শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে মাতিশা পাতিরানা ৬৫ রান দিয়ে ৩টি এবং প্রমোদ মাদুশান নিয়েছেন ২টি উইকেট।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জয়, পাকিস্তান, ফাইনাল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন