পার্বত্য চট্টগ্রামে ফাও নামের প্রকল্পে পুকুরচুরি: শুরু আগেই কোটি কোটি টাকা লোপাট

fao

রাঙামাটি প্রতিনিধি:
পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (ফাও) কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। এসব প্রকল্পে দেয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকার বরাদ্দ।

রোববার ১১মে ২০১৪ রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এমনটি দাবি করেছে সংস্থাটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশ্লৈ সিং এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ফাওর স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অ্যাগ্রিকালচার প্লানিং ইউনিট (এপিইউ) অফিস উদ্বোধন করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা অভিযোগ বলেন, সংস্থাটি এতদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে কিন্তু কার্যক্রম সম্পর্কে পার্বত্য মন্ত্রনালয় কিছুই জানেনা। এদিকে হঠাৎ করে ফাওর এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা জানানো হলেও যাদের উন্নয়নে প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে কিছুই জানে না পার্বত্য এলাকার লোকজন। হঠাৎ প্রকাশ করা এমন লুকোচুরি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত স্থানীয় মহলগুলো। তাদের কাছে বিষয়টি যেন আজগুবি গল্প। এর আগে কেউ জানত না এত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা।

প্রকল্প এলাকাতেও এসবের কিছুই হদিস জানে না পার্বত্যবাসী। এসব লুকোচুরি প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানান প্রশ্ন। আবার অনেকে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন।

দেখা গেছে, কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। অথচ এপর্যন্ত কাগজে-কলমে গুটি কয়েক সভা, সেমিনার, অনুষ্ঠান ছাড়া কিছ্ইু কাজ হয়নি। সবশেষ রোববার সকালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অ্যাগ্রিকালচার প্লানিং ইউনিট (এপিইউ) অফিস উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হল।   

জানা গেছে, পার্বত্য এলাকার প্রান্তিক, অসহায়, দারিদ্রপীড়িত ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জুমচাষ, ফলজ বাগান, আদা-হলুদ চাষ, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু পালন, ত্রাণ ও বীজ বিতরণ, ক্ষুদ্র ও হস্থশিল্পসহ কৃষিভিত্তিক ব্যাপক প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (ফাও)।

এছাড়া গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন ও সংস্কার, ক্রীক বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি গ্রামীণ উন্নয়ন অবকাঠামো প্রকল্পের কথা বলা আছে প্রকল্প প্রতিবেদনে। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের এসব বিষয়ে কিছুই জানা ছিল না। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেখানো হয়েছে ২০১২-১৩ অর্থবছর হতে।  

বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যেক জেলা থেকে একটি করে মাত্র তিন উপজেলায় পাঁচ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন বলে উল্লেখ রয়েছে ফাওর প্রকল্প প্রতিবেদনে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে সিএইচটি সাসটেইনাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট (২০১২-১৩), রিহাবিলেটেশন সাজেক অ্যান্ড থানছি (২০১৩-১৪), তাইন্দং (২০১৩-১৪), ওয়াটার হার্বেস্টিং প্রজেক্ট (২০১৪-১৫) এবং নতুন প্রকল্প অ্যাগ্রিকালচার প্লানিং ইউনিট উইথ সিএইচটিডিএফ (২০১৩-১৫)।

 এসব প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় অধীন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। রিহাবিলেটেশন সাজেক অ্যান্ড থানছি (২০১৩-১৪) প্রকল্পে জরুরি ত্রাণের কাজ দেখানো হয়েছে ২০১০-১১ অর্থবছর হতে। সাজেক রাঙামাটি পার্বত্য জেলার এবং থানছি বান্দরবান পার্বত্য জেলার সবচেয়ে দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকা। প্রকল্পে ২০১১-১২ অর্থবছরে পুনর্বাসনের আওতায় ৬ হাজার পরিবারকে সুবিধাভোগী হিসেবে নির্বাচন করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

এতে আলো ও এইচএফ নামে দুটি সহযোগী এনজিও কাজ করছে বলেও উল্লেখ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে ফাওর এসব কৃষিভিত্তিক প্রকল্পে ইইউ, বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থা অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে প্রায় ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ মতে, শুরুর আগেই এসব বরাদ্দ লোপাট হয়ে গেছে। সেগুলো কাগজে হিসাব দেখানো হলেও বাস্তবে কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাজেকে ও থানছিতে এমন কর্মসূচির কোনো কিছুই নেই। তাইন্দং প্রকল্পেও বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসনের আওতায় ৯শ’ পরিবারকে সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা হলেও কোনো কাজ নেই এখনও। অন্য প্রকল্পগুলোর অবস্থাও একই। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে কৃষি উন্নয়নে ফাওর নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

রোববার রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত অ্যাগ্রিকালচার প্লানিং ইউনিট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং এমপি, সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চাইথোয়াই অং মারমা, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আবু হানিফ মিয়া, ফাওর বাংলাদেশে নিযুক্ত আবাসিক প্রতিনিধি মাইক রকসনসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট লোকজন উপস্থিত থাকলেও মিডিয়া প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন না।

ফাওর অ্যাগ্রিকালচার প্লানিং ইউনিট কনসালটেন্ট কাজল তালুকদার বলেন, এটি সীমাবদ্ধতার কারণে হয়েছে। কৌশলগত কারণে মিডিয়াকে জানানোর বিষয়টি সিদ্ধান্তে রাখা হয়নি। এরপরও কয়েক মিডিয়াকর্মী আসন দখলে নিয়ে বসেছেন। বসার কোনো জায়গাও নেই। কয়েক মিডিয়াকর্মী অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে অনুমতি চাইলে কাজল তালুকদার বলেন, দুঃখিত। এটা সম্পূর্ণ সীমাবদ্ধতার মধ্যে। কাজেই এ ব্যাপারে বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিভিত্তিক প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে। এখনও কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। দেশী-বিদেশী ভিভিন্ন দাতাদের কাছ থেকে অর্থায়ন চাওয়া হবে।

 

আরও খবর পড়ুন

বান্দরবানে জনসেবা তিন কর্মীর বিরুদ্ধে ঋণের ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য

খাগড়াছড়িতে অর্ধসমাপ্ত মসজিদ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলেন জেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা

বান্দরবানে রাজ পরিবারের বাঁধায় পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, পার্বত্য-চট্টগ্রামে-ফাও, রাঙামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন