প্রবল বর্ষণে রুমায় পাহাড় ধসে বাঁধ তৈরি

fec-image

বান্দরবানের রুমায় টানা প্রবল বর্ষনে পাহাড় ধসে রুমা খালের ক্রাইখ্যং মুখ এলাকার বাঁধ তৈরি হয়েছে। এতে রুমাখালের প্রবাহমান ও পাহাড়ি ঢলে নেমে প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা জুড়ে জমেছে পানি। এ অবস্থায় সেখানকার পাঁচটি পাড়ার ১২০ থেকে ১৩০ পরিবারের লোকজন কোথাও যেতে পারছে না।

তাছাড়া বাঁধটি হঠাৎ ভেঙ্গে গেলে জমে থাকা পানিগুলো দ্রুত সরিয়ে গিয়ে স্রোতের বেগে নীচের অংশে বিভিন্ন স্থানে থাকা জন-জীবনসহ ক্ষেতখামার ও স্থাপনা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে এ প্রতিবেদক দেখেন, রুমা উপজেলা সদর রুমা-বগালেক রাস্তায় ৭ কিলোমিটার জায়গা থেকে পায়ে হেঁটে রুমা খালের দুরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। সেখানে ক্রাইখ্যং নামক এ স্থানটি। এ ক্রাইখ্যং মুখের একটু উপরে পাহাড় ধসের বাঁধটি অবস্থান।

প্রাকৃতিক সৃষ্ট টানা প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে বাঁধ তৈরি নিয়েও এর মধ্যে হয়েছে নানা কল্পকাহিনী ও আতঙ্ক।

বাঁধের পার্শ্ববতীর কয়েকজন নারী পার্বত্যনিউজকে বলেছেন, গত সোমবার (৭ আগস্ট) ভোরের দিকে ধুক করে বিকট শব্দে শুনা যায়। সকালে দেখেন, বিশাল জায়গার জুড়ে পাহাড় ধসে নেমে রুমা খালে জেমেছে মাটি। এতে সল্প সময়ে খালের উজানে পানি বাড়তে থাকে। এ বাঁধ ভেঙ্গে পানি নামার সময় খালের দেবী মাথা নেবে, তাই খালের দেবী নিয়ে আলোচনা করা কিংবা তাদের নাম বলতে মানা। কল্প কাহিনী জানতে চাইলে আমরা ভয় করি, এসব কথা বলে মুখ ফিরিয়ে নেন এসব নারীরা।

তবে রুমা সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ভাগ্যমনি পাড়া বাসিন্দা জনমনি ত্রিপুরা(৪৫) পার্বত্যনিউজকে বলেন, পাহাড় ধসে রুমাখালের কৃত্রিম বাঁধ তৈরি উজানের দিকে পানি বাড়তেই চলেছে । ফলে ভাগ্যমনি পাড়াসহ ওই এলাকায় কয়েকটি পাড়ার লোকজন বাজারে আসা-যাওয়া করতে পারছেন না। কারণ ওই এলাকার লোকজন এ রুমা খাল বেয়ে রুমা সদরে যেতে হয়। এ রাস্তা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প রাস্তা বলতে নেই।

জনমনি মেম্বার আরও বলেন, টানা বৃষ্টি বা প্রবল বর্ষণে সদ্য হয়ে যাওয়া বন্যার পানি অন্যান্য স্থানে নেমে গেলেও ক্রাইখ্যং মুখ বাঁধের পানি বাড়তে থাকে। এজন্য কয়েকটি পাড়ার লোকজন এক ধরনের পানি বন্দিতে থাকতে হয়েছে।

বাঁধ তৈরি এলাকায় আরো কথা হয় সাবেক মেম্বার শৈ হ্লা মারমা সঙ্গে। তিনি হাত দেখিয়ে পার্বত্যনিউজকে বলেন, ধসে আসা এ পাহাড়টি কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ একর জুড়ে। এজন্য এ রুমাখালে টানা প্রায় ১ কিলোমিটার লম্বা জুড়ে মাটি জমেছে। জমানো মাটির উচ্চতাও পক্ষে ২৫ ফুটের বেশি হবে বলে দৃঢ় কন্ঠে বলেন, শৈ হ্লা প্রু মারমা।

তিনি আরও বলেন, এ বাঁধের উজানের দিকে বগামুখ পাড়া, ভাগ্যমনি পাড়া ও উবাংকই পাড়া রয়েছে। তাছাড়া পাহাড়ে অবস্থিত খুলেন ও লিনতং নামে দুইটি পাড়া আছে। এখাল দিয়েই তাদের রাস্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর হক পার্বত্যনিউজকে বলেন, বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে ওইখালে বাঁধ তৈরি হওয়ার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কি সমাধান করা যায় তা দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এলাকার সচেতন ব্যক্তি ও স্থানীয় যুবকদের নিয়ে কি উদ্যোগ নেয়া যায়, তাও ভেবে দেখতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান ইউএনও।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ধস, পাহাড়, প্রবল বর্ষণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন