প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাদ্য: সেন্টমার্টিনকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে বাঁচাতে বিদ্যানন্দের অভিনব উদ্যোগ

fec-image

সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিকের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে খাদ্যপণ্য। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে বাঁচাতে বিদ্যানন্দের এই অভিনব উদ্যোগ বলে জানা যায়। আগে পরিত্যক্ত প্লাস্টিককে সবাই অবমূল্যায়ন করলেও এবার সেই প্লাস্টিককে মূল্য দিতে শুরু করেছে। এই ব্যতিক্রমধর্মী কাজে সহযোগিতা করছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে সেখানে আর টাকার প্রয়োজন হচ্ছে না। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই সেন্টমার্টিনের বাসিন্দরা ব্যাগভর্তি বাজার বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন ম্যানেজার সালমান খান ইয়াসিন। তিনি বলেন, খাদ্যপণ্যের বিনিময়ে সংগৃহীত প্লাস্টিক দ্বীপ থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইকেল করা হয়।

সেন্টমার্টিনের সামুদ্রিক শৈবাল ও রঙিন প্রবাল সমৃদ্ধ বিশাল সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য সবার নজর কাড়লেও প্রতিনিয়ত সমুদ্র ও দ্বীপের পরিবেশের অবনতি ঘটছে। যেখানে সেখানে এমনকি সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিক ফেলার কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ; হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন।

স্থানীয়দের ধারণা, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সরকারের। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা। এছাড়াও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেওয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্টমার্টিনে না থাকায় সেখানকার মানুষ প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের এই প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য একদল স্বেচ্ছাসেবী গ্রহণ করেছে একটি নতুন উদ্যোগ। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই উদ্যোগের আওতায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থাপন করা হয়েছে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’। যেখানে মানুষ তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকপণ্যের খালি পাত্র বা বোতল এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারেন চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।

এতে স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে , ঠিক তেমনই কমবে পরিবেশ দূষণ। এই ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ প্রতি মাসে দুইবার করে চালু থাকছে। ফলে মানুষ তাদের জমানো প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিতে পারবেন নিয়মিত।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে দ্বিতীয় বারের মত দ্বীপের নারী-পুরুষ প্লাস্টিক দিয়ে খাদ্য পণ্য ও নিত্য পণ্য বিক্রি করেছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

স্থানীয় আবদুল মালেক ও সাবেকুন নাহার জানান, তারা নিজেদের ব্যবহার করা প্লাস্টিকগুলো জমা করে রাখেন। যেদিন প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাদ্যপণ্য ও নিত্যপণ্য দেওয়া হয় সেদিন তারাও প্লাস্টিকের বিনিময়ে তা নিয়ে থাকেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন,” বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কি কাজ করছে তা স্বচ্ছ নয়। সেন্টমার্টিনে কিছু দিন পরপর কিছু লোক দেখানো কাজ করে। যার কোন ধারাবাহিকতা নেই। “

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সেন্টমারটিনসহ অন্যান্য দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে সেটি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরী করে ও তাদের সম্পৃক্ত করে যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন। আশা করছি এই উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, প্রবাল দ্বীপ, সেন্টমার্টিন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন