বান্দরবানে ক্যাং প্রতিষ্ঠার নামে উ চ হ্লা ভান্তের বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ
বান্দরবান সংবাদদাতা :
বান্দরবানে উপঞঞা জোত থেরো (উ চ হ্লা ভান্তে) কর্তৃক রাজমাজিদ ক্যাং প্রতিষ্ঠার নামে ভূমির অবৈধ দখলের অভিযোগ উঠেছে। ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে উ পঞঞা জোত থেরো (উ চ হ্লা ভান্তে) কর্তৃক তারাছা মৌজায় দীর্ঘদিন ধরে নিরীহ জনসাধারণের জায়গা জবর দখল এবং জমির মালিকদের বিভিন্ন ধরণের হয়রানী ও অত্যাচার চালিয়ে আসছেন বলে জানিয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
তার অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী বরাবর তাদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে স্বারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে এলাকাবাসী উল্লেখ করেন, উ চ হ্লা ভান্তে গং তান্ত্রিকতার কথা বলে পৃথিবীতে যত প্রকার রোগ বিরাজমান সকল রোগের চিকিৎসা তার দেয়া ঝাড় ফুক ও পানির মাধ্যমে করা সম্ভব বলে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তার এরূপ প্রতারণার শিকার হয়ে কিছুদিন পূর্বে বান্দরবানের রামজাদিতে এক বড়ুয়া মহিলার মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উ চ হ্লা ভান্তে রাতের অন্ধকারে ১৪ তম প্রয়াত বোমাংগ্রী মং শৈ প্রু চৌধুরীরর পুত্র নু মং প্রু চৌধুরীর (ছোট বাবু) পাহাড়ে ওই মহিলাকে সমাধিস্থ করে। যা নিয়ে বান্দরবানে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালে থেকে উ চ হ্লা ভান্তে এবং তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তারাছা ইউনিয়নের সরকারি অধিগ্রহণভূক্ত জমি, বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি, নিরীহ বড়ুয়া সমাজের বসত ভিটা এবং সেনাবাহিনীর অধিগ্রহণকৃত জায়গা জবর দখল করে রেখেছেন।
বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনী কর্তৃক অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে উচ্ছেদ টীমের প্রধান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান লাঞ্চিত ও শারীরিক ভাবে অপদস্থ হয়েছিলেন। এসময় তার কয়েক শতাধিক ভাড়াটে সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা ও ধারালো কিরিচ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। এসময় যৌথ বাহিনী উ চ হ্লা ভান্তের সেকেন্ড ইন কমান্ড সুভান বড়ুয়া (কালাইয়া ভান্তে) কে গ্রেফতার করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তিনি বেকসুর খালাস পেয়ে যান।
ক্ষতিগ্রন্ত বড়ুয়া সমাজ ও স্থানীয়রা এসময় উ চ হ্লা ভান্তে গং এর বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলা দায়রা জজ আদালতে পৃথকভাবে ৫টি উচ্ছেদ মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলো হচ্ছে- ১) উচ্ছেদ ৬৫/ডি, ২) উচ্ছেদ ৬৬/ডি, ৩) উচ্ছেদ ৬৭/ডি, ৪) উচ্ছেদ ৬৮/ডি, ৫) উচ্ছেদ ১৩/ডি-২০০৮।
এদিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কে. এম তারিকুল ইসলাম জানান, বিজিবি সেক্টর সদর দপ্তর স্থাপনে তারাছা মৌজার জন্য প্রায় ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ১০ একর খাস জমি, মৃত মং শৈ অং পেশকারের ১০ একর, খ্রীষ্টান মিশনারী হতে সাড়ে ৩ একর এবং অন্যান্য ব্যক্তির দেড় একর মিলিয়ে সর্বমোট ২৫ একর জমি বিজিবি সেক্টর সদর দপ্তর স্থাপনের নিমিত্তে অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর মধ্যে রামজাদি ক্যাং এর নামে কোন রেকর্ডীয় ভূমি নাই।
বান্দরবানের পৌর কাউন্সিলর দিলীপ বড়ুয়া জানান, আমিনুল হকের কাছ থেকে ভূমিহীন বড়ুয়া সমিতির নামে ৩ একর ভূমি বায়নানামা করা হয়। কিন্তু ওই স্থানে রামজাদি মন্দির প্রতিষ্ঠার কথা বলে উ চ হ্লা ভান্তে জোর পূর্বক ওই জায়গা দখল করে রাখে।
রাজপুত্র নুমং প্রু জানান, তার পিতা প্রয়াত রাজা মংশৈ প্রু’র রেকর্ডীয় ৪ একর ভূমি রামজাদি কর্তৃপক্ষ দখল করে রেখেছে দীর্ঘদিন যাবৎ। উক্ত জায়গায় ইতিপূর্বে ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তিনি সেখানে স্থাপনা গড়ে তুলেন। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনের নির্দেশ মেনে চলার জন্য উ চ হ্লা ভান্তেকে নির্দেশ দিলে তিনি তাদের উপর একাধিকবার হামলা চালান।
তারাছা মৌজার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাশেম জানান, উ চহ্লা ভান্তের ভয়ে তার রেকর্ডীয় জমিতে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ যেতে পারছেন না। ওই জায়গায় গেলে তাকে বিভিন্ন ভয় ভীতি এবং প্রাণ নাশের মতো হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিকবার জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দাখিল করা হলেও কোন আশানুরুপ কোন সুফল পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে উপঞঞা জোত থেরোর (উ চ হ্লা ভান্তে) সাথে একাধিকবার ফোনে এবং সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য বা কথা বলায় অপারাগতা প্রকাশ করেন।