কেএনএফ আতঙ্ক

বান্দরবানে দীর্ঘ ৮ মাস পর বসতভিটায় ফিরলেন ৫৭ পরিবার

fec-image

কেএনএফ’র সাথে শান্তির প্রতিষ্ঠা কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে দীর্ঘ ৮ মাস পর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো নিজ জন্মভিটায় ফিরেছেন পাইক্ষ্যং পাড়ার বম সম্প্রদায়ের ৫৭টি পরিবার। তবে এখনো বেশ কয়েকটি পরিবার ফিরে আসেননি। তাদেরকে নিজ বসতভিটায় ফিরে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশিষ্টরা।

জানা গেছে, রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের অবস্থিত পাইক্ষ্যং পাড়া। সে গ্রামে বম সম্প্রদায়ের ৯৭টি পরিবারের বসবাস। পাহাড়ে গজিয়ে উঠা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফের আতঙ্কের ভয়ে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ৯৭টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। কেউ জঙ্গলে কেউ বা আত্বীয়দের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত শনিবার সেনাবাহিনীর উদ্যোগে পাইংক্ষ্যং পাড়ার বম সম্প্রদায়ের পাইক্ষ্যং গ্রামে ৫৭টি পরিবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তবে এখনো ৪০টি পরিবার ফিরে আসেননি। সেসব পরিবার দ্রুত ফিরে আসবেন বলে আশা করছেন গ্রামবাসীরা।

পাইক্ষ্যং পাড়ার গ্রাম প্রধান পিতর বম জানান, কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের কারণে গত এপ্রিল মাসে পাড়ার ৯৭টি পরিবার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নিজ বসতভিটায় ৫৭ পরিবারের প্রায় ২০০ জন সদস্য ফিরে এসেছে। আরো অবশিষ্ট ৪০টি পরিবারও অচিরেই গ্রামে ফিরে আসবে বলে আশার কথা জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকায় সন্ত্রাসীদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন সমস্যা ও আতঙ্কিত হয়ে পাড়ার লোকজন ভয়ে সবাই বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। পরিবারের সদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চলে যাওয়ার ফলে ৭ মাস ধরে স্কুল বন্ধ ছিল। গতকাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত আসা শুরু করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে বলে আশা করছেন ক্যপ্লাংপাড়া মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

সহকারী শিক্ষক রোয়াত লিয়ান বম জানান, গতকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে শুরু করেছে। ক্লাস নিয়মিত হচ্ছে। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে শুরু করবে।

অন্যদিকে, থানচি-রুমা সিমান্তের প্রাতা পাড়া এলাকায় থেকে ২৮টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। সেখানেও সেনা সহায়তায় গত শনিবার নিজ বসতভিটায় ফিরেছেন ১১টি বম পরিবারের ৪৯ জন সদস্য। তবে এখনো ১৭টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তবে সেসব পরিবারগুলোকে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাতা বম পাড়ার বাসিন্দা পিয়ার নিয়ার বম রনি (৩৮) বলেন, গত বছরে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও নিরাপত্তা বাহিনীর সা‌থে সমস্যার কারণে আমরা দীর্ঘ ৯ মাস যাবত বন জঙ্গলে ও বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলাম। আজকে বাড়িতে ফিরতে পেরে খুব খুশি লাগছে।

এদিকে দীর্ঘ ৮ মাস পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পাইংক্ষ্যং পাড়ায় ৫৭টি পরিবারদের মাঝে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছে সেনা সদস্যরা। সেখানে বিভিন্ন নারী-পুরুষ ও শিশুদের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। শুধু চিকিৎসাই নয়, পাইক্ষ্যং পাড়া হতে রনিন পাড়ার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, শিক্ষা উপকরণ ও শীতবস্ত্র বিতরণের পাশপাশি সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসের ত্যাগিদ দেন সেনাবাহিনী ও জনপ্রতিনিধিরা।

রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা জানান, পাড়াবাসীরা বিভিন্ন সমস্যার কারণের গ্রাম ছেড়ে অন্যত্রে চলে গিয়েছিল। দীর্ঘ ৮ মাস পর এলাকার লোকজন ফিরতে শুরু করেছে। গ্রামবাসীদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য লালজার লম বম বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে কেএনএফের বৈঠক করার পর গত ১৪ নভেম্বর থেকে বাজার-সদাই উপর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পাইংক্ষ্যং পাড়াবাসীর খাদ্য সংকটের বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে এবং তিনি আশাব্যঞ্জক সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বান্দরবান সদর জোনের জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, পাইংক্ষ্যং পাড়ায় ৫৭ পরিবার ফিরে এসেছে, তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে ফেরত আসা সব পরিবারের সদস্যদের সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রাথমিভাবে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সহায়তা প্রদানের কাজ শুরু হয়ে গেছে, যা পুরো রাস্তা সংস্কারের পর আরো বেগবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোয়াংছড়ি-পাইক্ষ্যং পাড়া সড্কের সংস্কার কার্যক্রম পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে চলমান রয়েছে। অচিরেই এ রাস্তায় যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে শান্তি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশিলতা ফিরে আসবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কেএনএফ, বসতভিটা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন