কুকি-চিন আতঙ্কে ঘরছাড়া

বান্দরবানে ফিরে আসা পরিবারগুলোতে খাদ্য সংকট

fec-image

পাহাড়ের নতুন সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচার, আতঙ্ক ও ভয় নিয়ে গেল ২৩ এপ্রিল নিজ বসতভিটে ছেড়ে পালিয়ে যান দুর্গম এলাকার বসবাসরত মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খিয়াং, খুমী, ম্রো ও বমসহ কয়েকটি সম্প্রদায়ের মানুষ। গোলাগুলির আতঙ্কে একে একে সব পরিবারের লোকজন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র ঠাই নিয়েছিলেন। প্রায় আটমাস নিজের ঘরবাড়ি, জন্মভিটা ছেড়ে কেউ ভয়ে জঙ্গলে, কেউ জুমঘরে কেউ আবার আত্মীয়দের বাসায় আশ্রয় নেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সেসব মানুষজন গ্রামে ফিরে এসেছে। বসতভিটায় ফিরে আসলেও সেসব গ্রামের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। এতে গ্রামবাসীদের মাঝে চোখে মুখে পড়েছে চিন্তার ভাজ।

জানা গেছে, গেল ৫ নভেম্বর রুমা উপজেলার পাঁচকিলো দূরে মুনলাই পাড়ার গ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি প্রথম পর্যায়ের সরাসরি বৈঠক শুরু হয়। টানা কয়েক ঘণ্টা বৈঠক শেষে চারটি বিষয়ে দাবি নিয়ে দু’পক্ষে সমঝোতা স্বাক্ষর করে। এরপরই পাহাড়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠে। প্রথম বৈঠক শেষে সেনাবাহিনী সহযোগিতায় গত শনিবার পাইক্ষ্যং পাড়া, থানচি প্রাতা পাড়া বম সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা ফিরে এসেছেন, অনান্য পরিবারও ফিরতে শুরু করেছে।

রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৩৪১ পাইক্ষ্যং মৌজায় ১২টি গ্রাম রয়েছে। সেসব গ্রামের মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে সবাই পালিয়ে গেছে। ১২টি গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খামতাং পাড়া ও পাইক্ষ্যং পাড়া। তাছাড়া সবগ্রাম মিলে ১০টি পরিবার মাত্র জুম চাষ করতে পেরেছে। ৭৭টি পরিবার জুমচাষ করতে পারেননি। অনান্য পরিবারগুলো ফিরে আসলেও গ্রামে গ্রামে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। একই চিত্র থানচি দুর্গম এলাকার প্রাতা পাড়াতে, সেখানের প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট।

পাইক্ষ্যং পাড়া ও প্রাতাপাড়া কারবারি পিতার বম ও পার্কেল বম জানান, ৮ মাস ধরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিলাম। এখন এসে দেখি ঘর ভাঙ্গা, হাড়িপাতিলসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে মূল সমস্যা হল খাবার। বিভিন্ন সমস্যার কারণে জুম চাষ করতে পারিনি।

মৌজার হেডম্যানরা জানিয়েছেন, গত শনিবার পাইক্ষ্যং পাড়াতে ৯৭ পরিবারদের মাঝে ৫৭টি পরিবার ফিরে এসেছে। গতকাল আরো দুটি পরিবার এসেছেন। প্রাতা পাড়াতে ২৮টি পরিবারের ১১টি পরিবার ফিরে এসেছেন। তবে কেউ কেউ শহরে আবার কেউ অন্য গ্রামে বসবাস করছেন। তারা ফিরবেন কিনা সেটি তাদের জানা নেই। অনান্য গ্রামগুলোতে যোগাযোগ করতে না পারায় খবর নেওয়া যায়নি। তবে এখন সব গ্রামের মানুষজন খাবারের সংকটে ভুগছে।

বম সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লাল জার লম বম জানান, প্রথম সংলাপ শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতেই মানুষজন গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। গ্রামের খাদ্য সংকটের বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রোয়াংছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান চহাইমং মারমা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পাইংক্ষ্যং পাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেক পরিবার এখন নিজ এলাকায় ফিরে এসেছেন। তবে খাদ্য সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। সম্মতি পেলে সেসব এলাকায় সহযোগিতা করা হবে।

থানচি উপজেলায় ইউএনও আবুল মনসুর জানান, ফিরে আসা পরিবারদের মাঝে যেহতু খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে সেহেতু প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর থেকে বান্দরবানে কেএনএফ নামে নতুন একটি সশস্ত্র সংগঠন তৎপরতা শুরু করে। এই সংগঠনটির সাথে সংঘর্ষে ও তাদের পুতে রাখা বিস্ফোরকে সেনা সদস্যসহ এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে কেএনএফ’র ১৭ জন সদস্য।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন