মানিকছড়ি রাজবাজারের করুণ দশা, বর্ষা নামলেই ব্যবসায়ীদের কপালে হাত

manik 1

ইমরান হোসেন:
শত বছরের ঐতিহ্যে ঘেরা মং রাজার আবাসস্থল মানিকছড়ির রাজ বাজার। আজ অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপ্রতুল, পয়ঃনিষ্কাশন, অপরিকল্পিত স্থাপনাগড়াসহ নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে এ বাজারের ব্যবসায়ীদের দূর্দিন চলছে। দীর্ঘ দিন এ বাজারে উন্নয়নের ছোঁয়া দৃশ্যত কেউ দেখেনি। এভাবেই এক সময়কার জাঁকজমকপূর্ণ রাজ বাজার হারিয়ে যেতে বসেছে তার ঐতিহ্য ও জৌলুস।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মানিকছড়ি রাজ বাজারের প্রবেশদ্বার মংরাজ বাড়ীর গেইট আজ জরাজীর্ণ। কারণ রাজার রাজত্ব ও কর্তৃত্ব নেই ! ফলে বাজার মসজিদ গেইট ও জেনারেল মার্কেট, ইউনিয়ন পরিষদ গেইট হতে গরুবাজার ব্রিজ ও আকাশপুরী সিনেমা হল থেকে মূল বাজারের রাস্তা ভেঙ্গে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাজারে পানি জমে পুকুর অবস্থার রূপ নেয়। ফলে বাজার ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সাধারণের দূর্ভোগের অন্ত থাকে না। এমনকি অপরিকল্পিত দোকান-পাট নির্মাণের ফলে বাজারের মধ্যখানে খুচরা পসরা নিয়ে কেউ বসতে পারেনা। এতে ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বহিরাগত বিক্রেতাদের। ফলে গ্রামের প্রান্তিক কৃষক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও দূর-দুরান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীদের নিত্য দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

বিগত ৪ বছর আগে মানিকছড়ি বাটনাতলী জীপ স্টেশনে রাস্তার বেহাল দশা দেখে মানিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম কিছু ভাঙ্গা ইট বালু ফেলার পর মানুষ আশায় বুক বেধেছিল এই বুঝি রাস্তার কাজ শুরু হল। কিন্তু মানুষের আশায় গুড়ে বালি! এরপর আর দেখা যায়নি কাউকে কিংবা প্রশাসনকে! অথচ প্রতিবছর এ বাজার থেকে গড়ে ১৫/২০ লক্ষ টাকার ইজারা বাবত রাজস্ব নিচ্ছে বাজার ফান্ড। কিন্তু সে অনুযায়ী এ বাজারে উন্নয়নের কোন চিত্রই নজরে আসছেনা।

এছাড়া এ বাজারে গরু, ছাগল বিক্রির জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট স্থান। বিশেষ করে কোরবানির সময় অন্যের জমিতে খুঁটি বসিয়ে তাতে গরুর হাট বসে, কিন্তু সম্প্রতি উক্ত জমিতে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ফলে গরুর হাট নিয়ে ভাবতে হবে নতুন করে। অন্যথায় পরবর্তী সময়ে কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল হবে। রাস্তার পাশে গরু ছাগল বিক্রির ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাপক কষ্টের মুখোমুখি হবে।

মাছ বিক্রির শেডে গত অর্থ বছরে সদর ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন বাজেট থেকে পানি সাপ্লাই এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও পরিচ্ছন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় দূর্গন্ধ যেন বাজার ছাড়তেই চায়না। মাংস বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট শেড থাকলেও গরু জবাই করার পর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় আশপাশের মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে ভুগছে প্রতিনিয়ত।

manik 2

তাছাড়া মানিকছড়ি বাজারের পাবলিক টয়লেটের অবস্থা শোচনীয়! যা ভাসমান ব্যবসায়ী, দূর দূরান্ত থেকে আগত সাধারণ মানুষ ও স্থায়ী ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকে। অবাক করার মত বিষয় যে, এরকম একটি ঐতিহ্যবাহী বাজারের পাবলিক টয়লেট দেখলে অবাক হতেই হয়। এ রকম একটি বাজারে এ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা দেখলে মনে হবে এটি যেন খোলা টয়লেটেরই নমুনা ! বাজারের এ অব্যবস্থাপনা ও দৃশ্যত দূরাবস্থা যেন ব্যবসায়ীদের জন্য অভিশাপ!

মানিকছড়ি বাজার ইলেক্ট্রনিক্স মেকার মো. মনির হোসেন জানান, বহু বছর যাবত মানিকছড়ি বাজারে ব্যবসা করছি কিন্তু বাজারের এমন দূরাবস্থা কখনো দেখিনি। দ্রুত বাজারের রাস্তা সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবে বলে তিনি মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, মানিকছড়ি বাজার সেক্রেটারী মো. নুরুল ইসলাম জানান, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জেলা পরিষদসহ প্রশাসনের নিকট বাজার উন্নয়নের জন্য গিয়েছি। আশা করি অচিরেই ভাল কিছু করতে পারব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন