রাঙামাটিতে প্রচারে এগিয়ে নৌকা

fec-image

সারা দেশের ন্যায় পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতেও নির্বাচনের জোয়ার বইছে। জেলার একমাত্র (২৯৯ নং) আসনে এবার তিনজন প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান এবং সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী অমর কুমার দে। অনিবন্ধিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এ আসনে প্রার্থী দিলেও পরবর্তীতে অজানা কারণে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। প্রত্যাহার করে নেয় জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থীও।

দেশের বৃহত্তর এবং প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ। তাদের রয়েছে সুসজ্জিত কর্মী বাহিনী। দেশের উন্নয়নে দলটির বেশ জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। তাছাড়া রাঙামাটি আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়াই করছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং পাহাড়ের জনপ্রিয় ব্যক্তি দীপংকর তালুকদার। আর তার সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক ডাকসাইটের নেতা বর্তমানে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী অমর কুমার দে এবং সদ্য গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপির মিজানুর রহমান।

সুধীজনরা বলছেন, নির্বাচনী লড়াইয়ে এই তিনজনের মধ্যে দীপংকর তালুকদার এগিয়ে এবং তিনিই বিজয়ী হবেন। তবে পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। এখানে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একটা বিশাল সমর্থক গোষ্ঠি রয়েছে, তেমনি দেশের আরেক বিশাল রাজনৈতিক দল বিএনপিরও সমর্থক গোষ্ঠি রয়েছে। এই দু’টি গোষ্ঠি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের ভোট ব্যাংক যেদিকে পড়বে সেই প্রার্থী বিজয়ী হবে। যে কারণে আওয়ামী লীগ এই লড়াইটাকে হালকাভাবে নিচ্ছে না।

নির্বাচনী পুরো এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন এবং ভোট চাচ্ছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন হরদম। প্রচার-প্রচারণায় কোনো কমতি রাখছেন না। বিশাল কর্মীবাহিনীও কাজ করছে নৌকায় ভোট আনতে।

অপরদিকে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী অমর কুমার দে এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান কচ্ছপ গতিতে এগুচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে অমর কুমার দে নিজেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে তার প্রচারণামূলক ব্যানার, পোস্টার শোভা পাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে মিজানুর রহমান এখনো নীরব। তার নির্বাচনী প্রচারণা এখনো চোখে পড়েনি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার বলেন, যারা প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন তারা সকলেই যোগ্য। যোগ্য না হলে তারা প্রতিদ্বদ্বিতায় অবতীর্ণ হতেন না। তাই কোনো প্রার্থীকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না এখানে ভিন্ন কিছু হোক। সকলে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় জিততে। আমার ক্ষেত্রেও তাই। এর আগে দু’বার আমি জনসংহতি সমিতির প্রার্থী এবং বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরেছি। তাই এই নির্বাচন হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অমর কুমার দে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগ দলীয় নমিনেশন না দেওয়ায় আমি সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ আমার সাথে আছে। আমি জনগণের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি। মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই আমি বিজয়ী হবো এ আসনে।

হাফেজ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রাঙামাটি জেলায় পুরো দেশের তুলনায় উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিটি সরকারের সময় অবহেলায় ছিল এই জেলা। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরাবস্থার কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে এই জনপদ। একইসঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এই জনপদকে হুমকির মুখে রেখেছে। আমাদের এই জেলা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছে। অথচ, এই জনপদের জীবনমান উন্নয়নে আজও কোনো মাস্টারপ্লান হয়নি। বারংবার ইলেকশনে জয় লাভ করেও কোনো নেতাই জাতিগত দ্ব›দ্ব, শ্রেণিবৈষম্য, মানুষ হত্যা, সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা মোচন করতে সচেষ্ট হননি। বরঞ্চ দলীয় বিভেদকে আরো উস্কে দিয়েছেন সময়ে অসময়ে। এর ফলে সাধারণ জনগণ শিকার হয়েছেন অনাচার, অবিচার এবং অপমৃত্যুর।

তৃণমূল বিএনপির মনোনয়ন কেন নিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে হাফেজ মিজান বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়, দীপংকর এবং আঞ্চলিক পরিষদের বাইরে নতুন নেতৃত্ব চায়। সেই জায়গায় তৃণমূল বিএনপি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কিংবদন্তি নেতা নাজমুল হুদার দলে যোগ দিয়ে আমি গণমুখী এই দলের অগ্রযাত্রার সঙ্গী হতে চাই।

রাঙামাটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬১ এবং ভোট কেন্দ্র ২১৩টি।

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, ১ জানুয়ারি ২০২৪।
Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাঙামাটি আওয়ামী লীগ, রাজনীতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন