রুমায় কেএনএফের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান

fec-image

বান্দরবানে রুমায় বিভিন্ন গ্রামবাসীদের উপর কুকি-চিন ন্যশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ কর্তৃক নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও অপহরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে রুমা সচেতন নাগরিক সমাজ।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রুমা বাজারে এ মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করা হয়।

এর আগে রুমা বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ব্রিজে এসে শেষ হয়। এসময় ব্যানার ও পেস্টুন হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা অর্ধ-শতাধিক নারী-পুরুষ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পাহাড়ের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাইলেও কেএনএফ সন্ত্রাসীরা সেই পরিবেশ অশান্তি সৃষ্টি তৈরী করেছে। পাহাড়ের বসবাসরত নিরীহ মানুষদের গুলি করার হুমকি, হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার কারণের পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। তাদের অত্যাচারের নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরো নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, আমরা চাই সকল জাতিকে নিয়ে শান্তিভাবে বসবাস করতে। কারোর উপর জোর জুলুম দিয়ে বসবাস করতে নয়। কিন্তু দীর্ঘদীন ধরে কেএনএফ সংগঠনকে যে সম্মান দিয়ে এসেছি সে সম্মান পাওয়া তাদের যোগ্য নয়। তাই পাহাড়েরও রুমা উপজেলাতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কেএনএফ বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে প্রতিবাদ করা আহ্বান জানান বক্তারা।

জানা গেছে, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি শান্তি-প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে কেনএফের বৈঠকের কথা রয়েছে। সশস্ত্র সংঘাত বন্ধে এর আগের বৈঠকে উভয়পক্ষ সম্মত হলেও কেএনএফ সমঝোতা চুক্তি ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ করেছেন শান্তি কমিটির সদস্যরা।

মানববন্ধনের রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুম্রাউ মারমা, ২নং রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং, পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা, মারমা ওয়েলফেয়ারের সভাপতি উথোয়াইচিং মারমা, সচেতন নাগরিক যুব সমাজের প্রতিনিধি অংচোওয়ং মারমাসহ রুমা সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গতকাল সকালে চাঁদা না পেয়ে রিজুক পাড়ার বাসিন্দা উহ্লাচিং মারমাকে (৩৭) গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এর ফলে কেএনএফ সংগঠনের প্রতি ক্ষোভে প্রকাশ করে রুমা উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।

তবে এ বিষয়ে কেএনএফ গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করা হলে কেএনএফ গ্রুপ পার্বত্যনিউজকে জানায়, গতকাল রাত্রে জেএসএস সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি জুমঘরে মিটিংয়ের তথ্য ফাঁস, অতঃপর কেএনএফ তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালায় সে সময় জেএসএস-এর সক্রিয়কর্মী একজন আহত হয়।

কেএনএফ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ এর বিশ্বস্ত সোর্স এর তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাত্রে জেএসএস সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি জুমঘরে মিটিং করেছে বলে তথ্য পায় এবং সাথে সাথে সেখানে অপারেশন পরিচালনা করা হয়। জেএসএস সন্ত্রাসীরা ৯-১০ জনের মতো একটি জুম ঘরে মিটিং করেছিলো। সেই মিটিংয়ে কেএনএফের স্পেশাল কমান্ডো ফোর্সরা আক্রমণ করলে জেএসএস কর্মীর এক সদস্য পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়।

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, জেএসএস-এর সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী জেএলএ সন্ত্রাসীরা মারমা পাড়ায় (রিজুক) অবস্থান করে প্রতিনিয়ত অত্রাঞ্চলের বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে আসছিল এবং নিরীহ জনগণদের হয়রানি করে আসছে।

উক্ত জায়গায় অপারেশন চালালে জুম ঘরে অবস্থানরত জেএসএস বাহিনীরা পালানোর চেষ্টার সময় আমাদের ক্যাডাররা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। সে সময় একজন জেএসএস সক্রিয় কর্মী আহত হয়ে রিজুক মারমা পাড়াবাসীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সে আহত ব্যক্তিটি আসল পাড়া হচ্ছে ঠান্ডাঝিড়ি পাড়া হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ রিজুক পাড়ার এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর সাথে অবস্থান করে আসছিল বলে জানা যায়।

এখন জেএসএসপন্থী তথা স্বার্থান্বেষী মহল সাম্প্রদায়িক কোন্দল সৃষ্টি করার জন্য সিভিলিয়ান বা সাধারণ জনগণ বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

কেএনএফ এর রিমোট এরিয়ায় জেএসএস সন্ত্রাসীদের এহেন কর্মকাণ্ডে নিরীহ জনগণ নিরুপায় হয়ে কেএনএফের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ’কে জেএসএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় কয়েকদিন যাবৎ জেএসএস সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কম্বিং অপারেশন চালানো হয় এবং এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে মিলিটারি সেক্রেটারি লে. কর্নেল স্টেওয়ার্ড আমাদের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ’কে জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কেএনএফ, বান্দরবান, রুমা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন