রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর ঘুমপাড়ানি মন্ত্র!

fec-image

রোহিঙ্গাদের উৎপাতে অতিষ্ট কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ। এ সংকট সমাধানে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। দিনদিন নিয়ন্ত্রিনহীণ হয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এ ইস্যুতে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বন্ধুরাষ্ট্রগুলোও যেন পেয়ে বসেছে বাংলাদেশকে। মিয়ানমারের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে কূটনৈতিক মন্ত্রে মগ্ন করে রাখছে তারা। একদিকে ভেতরে ভেতরে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ না ছাড়ার মদদ দিচ্ছে অন্যদিকে প্রত্যাবাসনের জন্য নিজেদের আন্তরিকতা দেখাচ্ছে। এমনকি অস্ত্র জোগান দেওয়ার তথ্যও সরকার জেনেছে বিলম্বে ।

স্বার্থবাদী নানা চক্রের সম্মিলনে রোহিঙ্গাদের ফুলে-ফেঁপে ওঠার শোডাউন অনেকের পিলে চমকে দিয়েছে। সরকারের কোনো সংস্থা থেকেও ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে লাখো রোহিঙ্গার বিশাল সমাবেশের বিষয়ে কোনো আগাম তথ্য দিতে পারেনি। বিদেশি গণমাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার পেয়েছে কক্সবাজারের সেদিনের রোহিঙ্গাদের এ শোডাউনের সচিত্র সংবাদ। কারা এদের এভাবে সংগঠিত করল? কোত্থেকে এল ডিজিটাল ব্যানার? হাতে হাতে মোবাইল ফোন। একই রঙের টি-শার্টসহ পরিপাটি পোশাক গেল কোত্থেকে? পুরো আয়োজনটি সিনেম্যাটিক। এসব ব্যাপারে ন্যূনতম তথ্যও দিতে না পারার রহস্য খুঁজে এখন হয়রান সরকার।

রোহিঙ্গাদের জন্য দেশীয় অস্ত্র পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি ক্যাম্পের অদূরে টেকনাফের ভালুকিয়া সড়কের পাশে অস্ত্র তৈরির মিনি কারখানা ধরা পড়েছে। রোহিঙ্গা নেতা হিসেবে নাম এসেছে মুহিবুল্লাহর। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমান রাইটসের ব্যানারে চলছে তার তৎপরতা। পিলে চমকানো আরো খবর হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও দেখা করে এসেছেন এই রোহিঙ্গা নেতা। বহুল আলোচিত প্রিয়া সাহাদের সঙ্গী হয়ে তিনি গিয়েছিলেন সেখানে। কীভাবে, কোন দেশি পরিচয়ে, কোন পাসপোর্টে গেলেন তিনি? কেউ বলতে পারছে না। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও যোগাযোগ অনেক দিনের। ধীরে ধীরে এ যোগাযোগ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের সঙ্গেও বাড়তে থাকে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও এমনকি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও তার হট কানেকশনের খবর ফাঁস হতে শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের পক্ষে কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলও খোলা হয়েছে। নিয়মিত অডিও-ভিডিও বার্তায় অনেক কিছু ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে এসব মাধ্যমে।

এগুলোর মধ্যে তুলনামূলক বেশি তৎপর টিভি ইনসানিয়াত। এ মাধ্যমগুলোর প্রচারণা বেশ রহস্য ও ইঙ্গিতে ভরপুর। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় চক্র কীভাবে মাদক, যৌনাচার, চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছে সেই বর্ণনাও বাদ যাচ্ছে না। মানবতার খাতিরে নয়, অন্য মতলবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া, মাথাপিছু হিসাব করে এইডস আনা, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে বিশাল অঙ্কের টাকা ভাগাভাগির ঘটনাও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য, রোহিঙ্গা আমদানির ব্যবসা, তাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে সরকারি জায়গা দখল, রোহিঙ্গাদের ভোটার এমনকি পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশ পাঠানোর তথ্যও আসছে। যার জেরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধ। খুনোখুনি। রোহিঙ্গারা প্রকাশ্যে কুপিয়ে মেরেছে যুবলীগ নেতা ফারুককে। বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে ফারুক হত্যার কয়েক আসামিকে। এ ইস্যুতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ফারুক হত্যার প্রধান আসামি রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ।

বহু বছর আগে থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে দফায় দফায় বাংলাদেশে ঢুকেছে আরাকানের নাগরিকরা। ২০১৭ সালের আগস্টে এসে ঘটে ভূমিধস অনুপ্রবেশ। ২৪ আগস্ট রাত থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্মূল অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে দেশছাড়া করে পাঠায় বাংলাদেশে। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার জয়গানের কূটনীতি চালায় বাংলাদেশ সরকার। এর বিপরীতে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধুরাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে সেয়ানের ওপর সেয়ানি করে নিজেদের ফায়দা লুটে নিচ্ছে।

বাংলাদেশকে মিয়ানমারের সঙ্গে মিলেমিশে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়ে নিজেরা পার্ট না হয়ে দূরে সরে থাকছে। দৃশ্যত কিছু চড়া কড়া কথা এবং বাংলাদেশের পাশে রয়েছে আওয়াজ দিলেও মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের বাণিজ্যিক ও স্বার্থগত সম্পর্ক চমৎকার। তা আরো জোরদার করছে। তারা কেউই বলছে না মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে। তারা একে বলছে ক্লিনজিং’ (জাতিগত নির্মূল)।

ভারত হাতে রাখছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশকেই। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে জিএসপি সুবিধা দিয়েই যাচ্ছে। মিয়ানমারকে বাণিজ্যিক সুবিধা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চীনও একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। রাশিয়াও ওই পথে।

রোহিঙ্গা নিধন প্রশ্নে মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় নিতে চায় না প্রতিবেশীসহ বিশ্বের প্রভাবশালী কোনো দেশই। উপরন্তু কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের শক্তিমান করতে তাদের নানা উদ্যোগ বাংলাদেশকে বড় শনির ইঙ্গিত দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের হত্যা ও বিতাড়নের মাধ্যমে রাখাইন খালি করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তাকারী কোম্পানি ও সংস্থাগুলোও দূর থেকে উসকাচ্ছে বলে বিচ্ছিন্ন তথ্য রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: প্রত্যাবাসন, মিয়ানমার, রাখাইন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন