প্রত্যাবাসনের দাবিতে আবারও সংগঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গারা

fec-image

চার বছর পর আবারও প্রত্যাবাসন ইস্যুতে নতুন করে সংগঠিত হতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০১৯ সাল থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ৫ দফা দাবি সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করছিলেন তিনি। তবে তাদের কণ্ঠে মুহিবুল্লাহর ঘোষিত সেই দাবিগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে।

২০১৯ সালে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মাস্টার মুহিবুল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, মিয়ানমারে স্বাধীন ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ নিজ ঘর বাড়িতে বসবাসের নিশ্চয়তা নিয়ে ফিরে যেতে প্রস্তুত।’ ওই সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ আরও বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিচারসহ মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত, ভিটেবাড়ি পুনরুদ্ধার, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া হলে তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে।’

ছয় বছরের ক্যাম্প জীবন পার করে এখন আসলেই প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গারা? নেতারা বলছেন, মিয়ানমারে যখন নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণ করা হচ্ছিল, তখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। এখানে ছয় বছরের ক্যাম্প জীবনে রয়েছি। আমরা দ্রুত মিয়ানমারে ফিরতে চাই। তবে অবশ্যই অন্য কোথাও নয়, নিজ বসত ভিটায় ফিরতে চাই।

রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার আছে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সেই নাগরিকত্ব এবং আমাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ সরকারের তালিকা নিয়ে ভ্যারিফিকেশনের নামে যা করছে মিয়ানমার, সেটা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে। আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করে নিজের ঘরে নিজে ফিরবো, এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে।’

বর্তমান প্রজন্মের সংগঠক রোহিঙ্গা স্টুডেন্টস নেটওয়ার্কের প্রধান সৈয়দুল্লাহ বলেন, ‘‘প্রত্যাবাসনের কোনও বিকল্প নেই। তবে সেটা হতে হবে ‘সঠিকভাবে’। আমরা জন্মসূত্রে মিয়ানমারের নাগরিক, আমাদের সেই নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে ভিটেবাড়ি ফিরিয়ে দিলে, আমরা অবশ্যই চলে যাবো। কিন্তু আমাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে আবারও কোনও ক্যাম্পে নেওয়ার কথা বলা হলে, আমরা সেটার সঙ্গে একমত নই। প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার প্রতিটা ধাপে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।’’

কী চান সাধারণ রোহিঙ্গারা?
সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেশে ফেরার বিষয়ে নানা ধরনের মতামত পাওয়া যায়। বর্তমানে তাদের সবার মনে প্রশ্ন— রেশন কমিয়ে দেওয়া নিয়ে। ১২০০ টাকার রেশন থেকে ৮০০ টাকায় নামিয়ে আনার কারণে তারা বেশ শঙ্কিতও। ফলে দেশে ফিরতে চাই বা চাই না, সেটার বিষয়ে সরাসরি বলতে দ্বিধা বোধ করেন তারা। ৮ জুন অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিতে আসা ২৬ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা আরাকানের আদি বাসিন্দা। আমরা সেখানকার নাগরিক। বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। আমাকে ফিরিয়ে দিতে হলে, যেখান থেকে এসেছি—সেখানেই ফেরত পাঠাতে হবে। আমরা ফিরে যেতে চাই না, এমনটা নয়।’

গত ৮ জুনের সমাবেশের পরে প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছা প্রকট হলো কিনা প্রশ্নে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামসুদ্দৌজা বলেন, ‘প্রত্যাবাসন নিয়ে তাদের কিছু দাবি আছে, সেসব নিয়ে কথা হচ্ছে। ক্যাম্পের ভেতরে আমাদের কাজ অব্যাহত আছে। ফলে প্রক্রিয়া স্থবির হওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যা সিদ্ধান্ত হবে, সেটা এখানে বাস্তবায়ন করা আমাদের কাজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা তাদের দাবি আদায় করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটা রিফিউজি ক্রাইসিসে প্রত্যাবাসন শুরু করাটা কঠিন কাজ। প্রথম ব্যাচ পাঠানো খুব কঠিন। শুরু হয়ে গেলে বাকি কাজটা সহজ হবে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন