‘শান্তিচুক্তির ধারাগুলো পর্যালোচনা করে কিছু সংযোজন করা প্রয়োজন’

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় অনুন্নত এবং অবহেলিত ছিল। এখানে দীর্ঘদিন সশস্ত্র সংগ্রামের কারণে মানুষের মধ্যে অশান্তি ও উন্নয়ন ব্যাহত ছিল। মানুষের চলাচলের যে স্বাধীনতা সেটাও অচল ছিল। শান্তিচুক্তির পরে এটার পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে আমরা সবাই খুশি। পার্বত্যবাসীরা অত্যন্ত আনন্দিত যে পশ্চাৎপদতা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি বড় ভূমিকা পালন করছে। শান্তিচুক্তি যদি অর্থবহভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সময়ের স্বাধীনতা এবং সবাই শান্তিচুক্তির ফল ভোগ করতে পারবো। শান্তিচুক্তি অর্থবহভাবে বাস্তবায়িত হলে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।

শান্তিচুক্তির কারণে আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপট অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাটের পাশাপাশি পর্যটন খাতে উন্নয়ন হয়েছে। যার কারণে এখানে অর্থনৈতিক চঞ্চলতা তৈরি হয়েছে। মানুষের আয়ের উৎস তৈরি হয়েছে, ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ যে যাযাবর জীবনযাপন করতো, এখন শান্তিচুক্তির ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে এখানকার মানুষ। এজন্য আমি শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারী সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশের ১৬-১৭ কোটি মানুষের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০-১২ লাখ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ সংখ্যার দিক থেকে খুবই নগণ্য। এদের যদি সরকারিভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া হয়, তাহলে তারা হারিয়ে যাবে। ফুলের বাগানে কিছু গাছ পরিচর্যা না করলে যেমন মারা যায়, ঠিক তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আছে তারা হারিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সরকারের অর্থবহভাবে ভূমিকা রাখা উচিত।

যে শান্তিচুক্তি হয়েছে সেটা ভালো দিক বয়ে আনবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী রয়েছে তাদের অধিকার ও অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য কিছু অগ্রাধিকার থাকা দরকার, এটা বিচেনায় রাখা উচিত। এখানে শুধু উপজাতি না বাঙালিরাও আছে। পাহাড়িদের পাশাপাশি এই অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া বাঙালিদের জন্য টেকসই কিছু উন্নয়নমূলক নীতির প্রয়োজন। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চাকরি, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং বেঁচে থাকার অধিকার পাহাড়ি-বাঙালি সকলে যেন একসাথে ভোগ করতে পারি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে শান্তিচুক্তিতে এ ধরনের কিছু বিধি-বিধান রাখা দরকার।

বান্দরবানের কিছু কিছু ক্ষুদ্র জাতিসত্তা আছে। তারা কিন্তু জেলা পরিষদে নিজেরদেও অবস্থান তৈরি করতে পারছে না। কারণ, তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। সে কারণে তারা তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তাদের যেটুকু অধিকার পাওয়ার কথা, যেমন চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা সকল উন্নয়নের ক্ষেত্রে তারা সে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। সেগুলো কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারগুলো শান্তিচুক্তিতে যোগ করা দরকার। চাকরি, শিক্ষা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যে সকল কোটা আছে, চাকরির ক্ষেত্রে যেসব কোটা আছে, সেখানে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিধান থাকা দরকার। শান্তিচুক্তিতে বিষয়গুলো সংযোজন করলে সবাই উপকৃত হবে। একইসাথে শান্তিচুক্তি অর্থবহ, টেকসই হবে। শান্তিচুক্তিকে সবাই সাদরে গ্রহণ করবে এবং এর সুফল সবাই ভোগ করতে পারবে।

ত্রিপুরারা যেহেতু জনসংখ্যার দিক থেকে কম এবং শিক্ষার-দীক্ষার দিক থেকেও পিছিয়ে তাই আমাদের সুযোগ-সুবিধা কম হবে বলে আমি মনে করি। আগে আমরা দেখেছি, অন্যান্যরা যারা গ্রাজুয়েট পাশ করে চাকরি পাচ্ছে সেখানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ইন্টারমিডিয়েট পাশ সার্টিফিকেট দিলেই চাকরি হয়। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এ ধরনের কিছু ধারা দিয়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে ভালো হবে। তারা উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে এবং শান্তিচুক্তির সুফলও নিশ্চিত হবে। এজন্য শান্তিচুক্তিতে যে ধারাগুলো আছে সেগুলোকে পর্যালোচনা করে কিছু সংযোজন করা দরকার বলে আমি মনে করি।

লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, শান্তিচুক্তি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন