হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে বাধ্য হলো ইসরাইল, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

fec-image

ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অবিরাম বোমা হামলা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে মানবতার শত্রু অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল। ইহুদিবাদী মন্ত্রিসভা গতরাতে চুক্তির খসড়া নিয়ে বৈঠক শুরু করে এবং দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা বৈঠক শেষে আজ (বুধবার) ভোরে চুক্তিটি অনুমোদন করে।

চুক্তিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি কারাগারে আটক ১৫০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু বন্দির মুক্তির বিনিময়ে হামাস তাদের হাতে আটক ৫০ ইসরাইলি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেবে। সেইসঙ্গে চারদিন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি পালিত হবে অর্থাৎ ইসরাইল বা প্রতিরোধ যোদ্ধারা কেউ কারো বিরুদ্ধে হামলা করবে না।

যেসব ইসরাইলি নারী ও শিশু মুক্তি পেতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে ৩০টি শিশু, তাদের আটজনের আট মা এবং আরো ১২ নারী রয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যম বলেছে, এই ৫০ জনের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন নাগরিক রয়েছে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর দাবি করেছে, এরপর হামাস প্রতি ১০ জন করে অতিরিক্ত বন্দিকে মুক্তি দিলে তার বিনিময়ে একদিন করে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো হবে। তবে এর বিনিময়ে কোনো ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে কিনা তা বলেনি ওই দপ্তর। ওই দপ্তর আরো দাবি করেছে, চুক্তি অনুযায়ী, এখনও যেসব ইসরাইলি বন্দি মুক্তি পায়নি তাদের সঙ্গে রেডক্রসের কর্মকর্তারা দেখা করতে পারবেন।

নেতানিয়াহুর দপ্তরের এসব দাবি সম্পর্কে হামাস কোনো মন্তব্য করেনি। তবে হামাসের পক্ষ থেকে বন্দি বিনিময় ও চার দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

৩৮ সদস্যবিশিষ্ট ইসরাইলি মন্ত্রিসভার উগ্র ডানপন্থি ওৎজমা ইয়েহুদিত পার্টির তিন সদস্য এই চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ওই তিন মন্ত্রী এ চুক্তিকে তেল আবিবের জন্য ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

চুক্তি হয়েছে হামাসের নির্ধারণ করা শর্ত অনুযায়ী
ইহুদিবাদী সরকার এমন সময় বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে রাজি হলো যখন যুদ্ধের শুরু থেকে দু’দিন আগ পর্যন্ত নেতানিয়াহু বলে আসছিলেন, তার ভাষায় হামাস ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে কোনো অবস্থায় তিনি আলোচনায় বসবেন না বরং অস্ত্রের জোরে হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ইসরাইলি বন্দিদের মুক্ত করবেন। এমনকি ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী গ্যালান্ট বলেছিলেন, গাজার হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় সম্ভাব্য কোনো চুক্তির শর্ত নির্ধারণ করার অনুমতি তিনি দেবেন না।

কিন্তু ৪৬ দিন যুদ্ধ করার পরও হামাসকে ধ্বংস করা দূরে থাক তাদের শীর্ষস্থানীয় কোনা কমান্ডারকেও খুঁজে পায়নি ইসরাইল। বরং হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইজ্জাদ্দিন আর-রাশক বলেছেন, তাদের দেয়া শর্ত মেনেই যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ে রাজি হয়েছে ইসরাইল। এর অর্থ হচ্ছে, ইসরাইলি মন্ত্রিসভা সারারাত জেগে যে বন্দি বিনিময় চুক্তিটি অনুমোদন করেছে সেটির শর্তগুলো ইয়াহিয়া সিনওয়ার বাঙ্কারে বসেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

ইসরাইলের জন্য চুক্তিটি কঠিন ও বেদনাদায়ক: বেনি গান্তেজ
তেল আবিবের জন্য চুক্তিটি যে অবমাননাকর তা স্বীকার করেছেন সিনিয়র মন্ত্রী বেনি গান্তেজ। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের জন্য চুক্তিটি ‘কঠিন ও বেদনাদায়ক’ হলেও এই মুহূর্তে এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। তবে যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু অপমানের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন স্বভাবসুলভ হুমকির মাধ্যমে।

তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির পর আমরা আবার যুদ্ধ শুরু করব এবং আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে। হামাসের ধ্বংস, সকল ইসরাইলি বন্দির মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরাইলকে আর হুমকি দেয়া হবে না- এমন নিশ্চয়তাকে তিনি চলমান যুদ্ধের লক্ষ্য বলে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন।

ইসরাইলে প্রস্তুত ৬ হাসপাতাল
ইসরাইলি গণমাধ্যম হারেতজ বলেছে, মুক্তিপ্রাপ্ত নারী ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ইসরাইলের ছয়টি হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব হাসপাতালের অন্য রোগীদের সঙ্গে যাতে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের দেখা না হয় এবং গণমাধ্যম কর্মীরা যেন তাদের কাছে যেতে না পারে সেজন্য এসব নারী ও শিশুর জন্য হাসপাতালগুলোর মধ্যে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইসরাইল, বন্দি বিনিময়, যুদ্ধবিরতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন