হাসপাতালের বহির্বিভাগে সুষ্ঠু সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ

CIMG2266

নিজস্ব প্রতিনিধি :
হতদরিদ্র নাগরিকদের সেবা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এদিকে সু-চিকিৎসা ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে কক্সবাজারের হতদরিদ্র লোকজন। তারা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসে পাচ্ছেন না সুষ্ঠু সেবা। চিকিৎসকের অপেক্ষায় তাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। আবার চিকিৎসকের সাথে দেখা মিললেও পাচ্ছেন না সুষ্ঠু সেবা। এছাড়া হেনস্থ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তহ- এমনটাই অভিযোগ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ভোক্তভুগী রোগী ও অভিভাবকদের।

তারা আরো বলেন, বহির্বিভাগে টিকেট কাউন্টার থেকে চিকিৎসকের রুম নির্ধারণ করে দিলেও দেখা যায়, ওই রুমের দরজায় ঝুলছে তালা। কারণ চিকিৎসক নেই। এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, তড়িগড়ি করে গুটি কয়েক রোগী দেখে উঠে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অনেক চিকিৎসক আবার চাপ সামলাতে গিয়ে রোগীর দিকে না তাকিয়েই দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশন (পরার্মশপত্র)। কিছু জানতে চাইলে বলছেন ব্যক্তিগত চেম্বারে যেতে।

এদিকে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন অন্য কথা, অল্প চিকিৎসক দিয়েই হাসপাতালের বহির্বিভাগ, আন্তবিভাগ ও জরুরীবিভাগের রোগীদের চিকিৎসা করানো হচ্ছে। যার ফলে অনেকসময় বহির্বিভাগের রোগীরা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ২টি টিকেট কাউন্টারে নারী ও পুরুষের দীর্ঘ লাইন। টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বহির্বিভাগে দৈনিক ৫শ থেকে ৭শ রোগী আসেন। আর এত রোগীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২ জন। ওই দুই চিকিৎসক ১১৩ ও ১০২ নাম্বার রুমে বসে রোগী দেখছেন। আর ওসব রুমে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়।

বহির্বিভাগে ১১৩ নাম্বার রুমের চিকিৎসককে দেখাতে দীর্ঘ লাইনের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রফিকুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, তিনি সকাল ১০ টা থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও লাইনের মাঝখানেও যেতে পারেনি। কারণ রোগীর চাপ বেশি থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুই জন।

দ্বিতীয় তলায় তালাবদ্ধ ২২২ নাম্বার রুমের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা নাছির উদ্দিন নামে আরেক রোগী বলেন, তিনি অপারেশনের রোগী। তাকে রেফার করেছেন অন্য চিকিৎসক। দীর্ঘ ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসকের দেখা মিলেনি। কারণ সকাল থেকে চিকিৎসক তখনও আসেননি।

উপসনা ধর নামে এক নারী রোগী বলেন, সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রয়েছেন ১১১ নাম্বার রুমের সম্মুখে। তিনি পরে জানতে পারেন ওই চিকিৎসক ছুটিতে গিয়েছেন। কিন্তু টিকেট কাউন্টার থেকে ১১১ নাম্বার রুম লিখে দেওয়া হয়েছে। পরে টিকেট কাউন্টারে গিয়ে চিকিৎসক পরিবর্তন করে ১০২ নাম্বারের চিকিৎসকে দেখান।

এ ব্যাপারে টিকেট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা সুমিতা বড়ুয়া জানান, তিনি ভুলে ১১১ নাম্বার লিখেছেন। একইভাবে তিনি অনেক রোগীর টিকেটে ১১১ নাম্বার রুম লিখেছেন। কারণ তিনি জানতেন না ওই রুমে চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার পু চ নু জানান, চিকিৎসকরা বরাবরেই সচেতন রয়েছেন রোগীদের সেবা প্রদানে। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। পুরো হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার আছেন মাত্র ১০ জন। তার মধ্যে কর্তব্যরত থাকেন ৭ জন। তাদেরকেই বহির্বিভাগ, আন্তবিভাগ ও জরুরী বিভাগের রোগী দেখতে হয়। এছাড়া জরুরী বিভাগে ৭ জন চিকিৎসকের জায়গায় রয়েছে মাত্র ২ জন। সব মিলিয়ে চিকিৎসকদের অনেকটা দৌড়ের উপর থাকতে হয়। তাই হয়ত অনেক সময় বহির্বিভাগে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পায় না। তিনি আরো জানান, চিকিৎসক সংকটের ব্যাপারে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এরপরেও কোন কাজ হচ্ছে না। তবে খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যা সমাধান হবে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার রতন চৌধুরী বলেন, সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য সাধারণত ৪ থেকে ৫ জন চিকিৎসক থাকে। আর উপর তলায় থাকেন রেফার (প্রেরণ) রোগীদের দেখার চিকিৎসক। কিন্তু চিকিৎসক নেই কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হয়ত ছুটিতে রয়েছেন অথবা হাসপাতালের অন্য কোথাও রোগী দেখছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন