খাগড়াছড়িতে আসন ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ, চমক দেখাতে পারে ইউপিডিএফ

31.12.2013_KHT Election News Pic

মুজিবুর রহমান ভুইয়া : প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে মাত্র ক‘দিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতিও শেষ করে এনেছে খাগড়াছড়ির প্রশাসন। এখন জেলার সর্বত্র নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানামুখী আলোচনা। অন্যদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের আসন ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ। আর এ নির্বাচনে চমক দেখাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল-ইউপিডিএফ। খাগড়াছড়ির সংসদীয় আসনে সাধারণ ভোটারদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা না গেলেও ভোটারদের মন জয় করতে প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় গণসংযোগে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এ আসনের প্রতিদ্বন্ধি চার প্রার্থী।

প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকার আট উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাতীয় নির্বাচনে নবাগত কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী দলের সাথে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে অনিবন্ধিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল-ইউপিডিএফ। পাশাপাশি মাঠে রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ ও জেএসএস (এমএন লারমা) প্রার্থী প্রকৌশলী মৃনাল কান্তি ত্রিপুরা। বিগত ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় হওয়া আঞ্চলিক পাহাড়ী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবার চমক দেখাতে পারে বলে মনে করছেন পাহাড়ের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ও সচেতন ভোটাররা।

নানা কারণে পার্বত্য রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় এলাকা হিসেবে বিবেচিত পার্বত্য খাগড়াছড়িতে বিগত চারটি সংসদ নির্বাচনের তিনটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়ী হলেও এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলোর নির্বাচন বর্জনের কারণে ভোটের হিসাব পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না সচেতনরা। অনেকের মতে এবারের নির্বাচনে চমক দেখাতে পারে ইউপিডিএফ প্রার্থী প্রসীত বিকাশ খীসা। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রার্থী প্রসীত বিকাশ খীসা হাতি প্রতীক নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি কেন্দ্রভিত্তিক এলাকায় নিজের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আগামী দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সাধারণ পাহাড়ী ভোটারদের নিজ দলের প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে দলটি।

গেল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ১ লাখ ২২ হাজার ৮০৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির প্রার্থী সমীরণ দেওয়ান ৬২ হাজার ৯৭৬ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় ও ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী উজ্জল স্মৃতি চাকমা ৬০ হাজার ৪শ ১০ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯শ ৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ নয়‘শ ৫৯ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার তিন‘শ ১৫ জন।

গত নির্বাচনে ফলাফলে তৃতীয় স্থান অধিকারী আঞ্চলিক পাহাড়ী সংগঠন ইউপিডিএফ এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের রাজনৈতিক সচেতন ও অভিজ্ঞ মহল। তাদের অভিমত আওয়ামী লীগের দুর্বলতা এবং বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানো ও জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রর্থী মৃণাল কান্তি ত্রিপুরার নিরবতার ফলে ভোটের হিসাব পাল্টে গিয়ে নতুন চমক দেখাতে পারে ইউপিডিএফ।

এ আসনের সচেতন ভোটাররা বলছেন, সব মিলিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ গ্রহণ না করায় আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে বিপদে আছে নৌকা প্রতীকের কান্ডারী আওয়ামী লীগের কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রসীত বিকাশ খীসা বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভোট ভাগা-ভাগির হিসাবে অধিকাংশ পাহাড়ির ভোট পেয়ে নির্বাচনে নতুন চমক দেখাতে পারেন।

এদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতার মধ্য দিয়েই খাগড়াছড়িতে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরীর নেতা-কর্মীরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। খাগড়াছড়িতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ আওয়ামী লীগের ভোটের বাক্সে ভাগরা দিতে পারে বলেও মনে করছেন সচেতনরা।

আর নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, পাহাড়ের মানুষ বরাবরের মতো নৌকার সাথেই রয়েছেন। পাহাড়ের মানুষের ঠিকানা নৌকা। অতীত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মহাজোট সরকারের সময় পাহাড়ের উন্নয়নে ফিরিস্তি তুলে ধরছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, ইউপিডিএফ, নির্বাচন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন