ক্রেতা-বিক্রেতারা হয়রানির শিকার

লামা ও আলীকদমে ভূমি হস্তান্তরে বিধি বহির্র্ভুতভাবে ৩% টাকা আদায়

fec-image

লামা পৌরসভার চেয়ারম্যান পাড়ায় স্থানীয় জন সাধারণ কর্তৃক  ক্রয় করা কবরস্থানের দলিল সম্পাদনের জন্য লামা ভূমি রেজিস্ট্রেশন শাখায় গেলে কর্মরত রেজিস্ট্রেশন সহকারী সুমন কর্মকার জানান, এই দলিল সম্পাদনে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত দলিল মূল্যের ৩% টাকা দিতে হবে।

তার মধ্যে প্রথম কিস্তিতে বায়না নামায় ১.৫% এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে সাফ কবলা দলিল সম্পাদনের সময় ১.৫% টাকা। এছাড়া দলিল প্রতি আরো এক হাজার টাকা অফিস খরচ হিসেবে দিতে হবে।

এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ার জন্য কবরস্থান কমিটি অনুরোধ করলে সুমন কর্মকার আরো জানান, আমরা জেলা অফিসে এরকম প্র্যাক্টিস করি। ৩% টাকা দিতেই হবে।

সে জানায় জনতা ব্যাংকের হিসাব নং- ০৬৩৩০০২০৩৩০৯৪ নম্বরে টাকা জমা দিয়ে জমার স্লিপ রেজিস্ট্রি আবেদনের সাথে দিলেই কেবল বায়না নামা বা সাফ কবলা দলিল সম্পাদন করা হবে।

তিনি আরো জানান, আপনাদের কোন কথা থাকলে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানান। একইভাবে লামা পৌর সদরের একটি মসজিদের জায়গার দলিল সম্পাদন করতে গেলে মসজিদ কমিটিকেও সে একই কথা জানায়।

বান্দরবান জেলার সর্বধিক জনবহুল উজেলা লামা। এই উপজেলায় প্রতি বছর কম বেশি এক হাজার অধিক ভূমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদন হয়।

দলিল লেখক মিরন কান্তি চৌধুরী জানান, গত ১০ আগস্ট রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মো. কায়েসুর রহমান দলিল লিখকদের নিয়ে মিটিং করে জানিয়েছেন প্রতি সপ্তাহে দুই দিন দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হবে।

দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রমে বায়না নামায় ১.৫% এবং সাফ কবলায় ১.৫% টাকা অবশ্যই দিতে হবে বলে তিনি রাইটারদের জানিয়েছেন।

এছাড়া আলীকদম উপজেলার একাধিক জন প্রতিনিধি ও দলিল লিখক জানিয়েছেন সেখানেও বায়না নামায় ১% এবং সাফ কবলা ১% টাকা নগদ আদায় করা হয়।

লামা উপজেলায় দলিলের টাকা জমা দেওয়ার জন্য জনতা ব্যাংকের একটি হিসাব নম্বার ০৬৩৩০০২০৩৩০৯৪ কম্পিউটারের টাইপ করে রেজিস্ট্রি অফিসের দরজায় ও দেওয়ালে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নারী নেত্রী ও সমাজ কর্মী জাহানারা আরজু ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক এম. রুহুর আলিম জানান, সরকারি বিধি বিধানের বাহিরে গিয়ে দলিল মূল্যের ৩% টাকা আদায় করায় ভূমি ক্রেতা ও বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত এবং হয়রানির শিকার হচ্ছে।

তাছাড়া লামার মত একটি জনবহুল উপজেলায় সপ্তাহে মাত্র দুই দিন রেজিস্ট্রি করলে জনদূর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে। লামা উপজেলায় সরকারি নিয়মের বাহিরে গিয়ে একটি ব্যাংক হিসাব নম্বার দিয়ে আদায়কৃত ৩% টাক সরকারি কোষাগারে জমা হয় না এবং এই টাকা সরকারি কোন অডিট হয় না বলে তারা জানান।

বিধি বিধানের বাহিরে গিয়ে ভূমি হস্তান্তেরে এই টাকা আদায়ের বিষয়ে তারা ভূমি মন্ত্রণালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশনের কর্যকরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এড. মামুন মিয়া জানান, সরকার নির্ধারিত নিয়মের বাহিরে গিয়ে চাপ প্রয়োগ ও বাধ্য করে যে কোন নামে টাকা আদায় দূনীর্তি এবং অনিয়মের পর্যায়ভুক্ত।

এ বিষয়ে জনভোগান্তি যাতে না হয় সে জন্য সংশিষ্ট পক্ষগুলোকে সচেতন হওয়া জরুরি। লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম জানান ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে জনগণের ভোগান্তি ও আর্থিক হয়রানি বিষয়টি বিবেচনায় আনা আবশ্যক।

লামা উপজেলায় ভূমি রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মো. কায়েসুর রহমান জিজ্ঞাসায় বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে আমি এই টাকা নিচ্ছি।

শুধু জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে কাজ করছি। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজা রশিদ জানান, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসে কি হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি অবগত নন।

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল এই বিষয়ে এই প্রতিবেদক বলেন, সরকারি বিধি বিধানের বাহিরে গিয়ে কি কারণে এত বিপুল পরিমান টাকা আদায় করা হচ্ছে তা আমি জানি না।

বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শফিউল আলম জিজ্ঞাসায় জানান লামায় ভূমি হস্তান্তর রেজিস্ট্রেশনে এভাবে টাকা আদায়ের বিষটি তিনি অবগত নন।

বান্দরবান জেলা প্রসাশক মো. দাউদুল ইসলামকে গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টা ৫৬মিনিটে লামার ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস কর্তৃক এভাবে টাকা আদায়ের বিষয়ে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদম, কবরস্থান, লামা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন